ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১১৯ রানে পিছিয়ে মাহমুদুল্লাহবাহিনী

সাগরিকা টেস্টে ডুবছে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাগরিকা টেস্টে ডুবছে বাংলাদেশ!

মিথুন আশরাফ ॥ দিনের শেষ দুই বল ছিল। ২৭তম ওভার চলছিল। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলটি শেষ হলেই চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থদিনটি শেষ হয়ে যেত। তাতে বাংলাদেশ কিছুটা ভাল অবস্থানে থাকতে পারত। কিন্তু রঙ্গনা হেরাথের করা ওভারের পঞ্চম বলটিই যেন বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিল। বলটিতে যে মুশফিকুর রহীম আউট হয়ে গেলেন। তাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ডুবন্ত অবস্থারই তৈরি হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি বল হওয়ার মতো সময় না থাকায় সেখানেই দিনটি শেষ করে দেয়া হলো। মুশফিকের আউটটিতে শুরুতে আম্পায়াররা সাড়া দেননি। আম্পায়াররা সিগনাল দেন নটআউট। কিন্তু সিলি পয়েন্টে থাকা ক্যাচ ধরা কুশল মেন্ডিস এসে হেরাথের সঙ্গে আলোচনা করেন। রিভিউ নেন। রিভিউয়ের পর দেখা যায় মুশফিক যে বলটি ঠেকিয়ে দেন সেই বলটি তার ব্যাটে লেগে বুটে লেগে সিলি পয়েন্টে যায়। মেন্ডিস মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেন। শেষ পর্যন্ত আউট হন মুশফিক (২)। দিনের ১ বল বাকি থাকতে মুশফিকের এই আউটটিই যেন বাংলাদেশকে পথ হারিয়ে দিল। তাতে করে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েসের সঙ্গে মুশফিককে হারিয়ে বিপদে পড়ল বাংলাদেশ। ৮১ রান করে এখনও ১১৯ রানে পিছিয়ে মাহমুদুল্লাহবাহিনী। আজ টেস্টের পঞ্চমদিন। এই দিনটিতে মুমিনুল হক (১৮*) ব্যাট হাতে নামবেন। সঙ্গে একজন ব্যাটসম্যান নামবেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হাতে আছে ৭ উইকেট। এ মুহূর্তে চরম বিপদে আছে বাংলাদেশ। প্রথমে এই সাত ব্যাটসম্যান মিলে ১১৯ রান করতে হবে। ইনিংস হার এড়াতে এর কোন বিকল্প নেই। উইকেট আঁকড়ে থাকাই আজ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের প্রধান কাজ হবে। যে রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ তা এক সেশনেই করা সম্ভব। কিন্তু যদি তা করতে গিয়ে উইকেট পড়তে থাকে তাহলেই হারের মুখে যেতে থাকবে বাংলাদেশ। ১১৯ রান করার পর যত বেশি রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারবেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যান, সঙ্গে যত বেশি সময় উইকেট আঁকড়ে থাকবেন ততই ভাল হবে। এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন রান করার চেয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকা এবং সময় ব্যয় করাই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারলে রান হবেই। আর রানের সঙ্গে যদি সময় অপচয় করা যায় তাহলে ম্যাচ থেকে ড্র ফল বের করে আনা সম্ভব। আর যদি তা না করা যায় তাহলেই হার হয়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কা এখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ পুরোপুরি ‘ব্যাকফুটে’ আছে। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে শ্রীলঙ্কা এ টেস্টে যে হারছে না তা নিশ্চিতই বলে দেয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনা আছে। ব্যাট হাতে মুমিনুল আছেন। যিনি প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়েছিলেন। এরপর আছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি প্রথম ইনিংসে সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অপরাজিত থেকেছেন। সেঞ্চুরির কাছাকাছি রান করেছেন। লিটন কুমার দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মেহেদী হাসান মিরাজ আছেন। সঙ্গে তাইজুল ইসলাম, সানজামুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমানরাও রয়েছেন। তবে প্রথম ইনিংসে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। এবার যদি দলের বিপর্যয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারেন তাহলে ম্যাচ থেকে ড্র বের করে আনা সম্ভব। তা না হলে প্রথম ইনিংসে এত অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পরও হারের শঙ্কা যে থাকছে তা হয়ে যাবে। প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করে বাংলাদেশ। এরপর শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ৭১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। ২০০ রানে পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। চতুর্থদিনে স্পিন ভেল্কি দেখা যায়। তৃতীয়দিনে ৩ উইকেট হারিয়ে ৫০৪ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। চতুর্থদিন প্রথম সেশনে কোন উইকেট হারায়নি। রোশেন সিলভা (১০৯) এর মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। দিনের দেড়ঘণ্টা না যেতেই মিরাজের বলে সিলভা আউট হন। ৫৫০ রানে গিয়ে সিলভার আউটে দিনেশ চান্দিমালের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ১৩৫ রানের জুটি ভাঙ্গে। এরপর থেকে যে ব্যাটসম্যানই আসেন একটি করে মাঝারিমানের জুটি গড়ে আউট হন। চান্দিমাল ৮৭ রান করে ৬১৩ রানে, নিরোশান ডিকভেলা ৬২ রান করে ৬৬৩ রানে, দিলরুয়ান পেরেরা ৩২ রান করে ৬৮৭ রানে আউট হন। শেষে গিয়ে সুরঙ্গ লাকমাল (৯) শুধু বিশেষ কিছু করতে পারেননি। ৭১৩ রানে গিয়ে যখন হেরাথের (২৪) উইকেটটি পড়ে তখন ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। উইকেটে এমনই স্পিন ধরা শুরু করে যে দিনের শেষ সেশনের শুরুতে ৯ উইকেটের পতনেই ইনিংস শেষ করে দেয় শ্রীলঙ্কা। তবে শ্রীলঙ্কা যে স্কোর করে তা অনেক হয়ে যায়। অসময়ে যেন বাংলাদেশ স্পিনারদের ভেল্কি দেখা যায়। চতুর্থদিন শ্রীলঙ্কার পড়া ৬ উইকেটই স্পিনাররা শিকার করেন। তবে তাইজুল একাই নেন মোট ৪ উইকেট। তবে এক ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওভার (৬৭.৩ ওভার) বল করে সবচেয়ে বেশি (২১৯ রান) দেয়ার বাজে রেকর্ডটিও গড়েন তাইজুল। স্পিন ভেল্কি শুরু হওয়া মানেই বিপদ। হেরাথ, লাকশান সান্দাকান, দিলরুয়ান পেরেরা যে তাতে সুবিধা পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তাতে বিপত্তিতে পড়বেন। তাই হলো। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শেষ সেশনের শুরুটা দুর্দান্ত করেন তামিম ও ইমরুল। দুইজন মিলে স্পিন ভেল্কিকে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। ৫০ রানের জুটিও হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, যাক বড় টার্গেটই দেয়া যাবে। কিন্তু যেই ৫২ রান হলো পেরেরার বলে ইমরুল (১৯) আউট হয়ে যান। বিপদ যেন শুরু হয়ে যায়। ৭৬ রানে গিয়ে সান্দাকানের বলে তামিম (৪১) আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন দিনের শেষ সময়। আর কোন উইকেট না হারিয়েই বাংলাদেশ দিন শেষ করবে এমন যখন ভাবা হচ্ছে, দিনের দুই বল বাকি থাকতে আরেকটি উইকেট হারাতে হলো। দিনের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে দিলেন হেরাথ। মুশফিককে (২) আউট করে দিলেন। দিনটিতে যে ৯ উইকেট পড়ে, সবকটি স্পিনাররাই দখল করে নেন। মুশফিকের উইকেটটি পড়ায় এখন হারের শঙ্কাও থাকছে। এখন যা করার বাকি ৭ ব্যাটসম্যানকেই করতে হবে। তারা যদি হাল ধরতে না পারেন তাহলে হারও হতে পারে। আর হাল ধরলে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হবে। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা স্কোর কার্ড বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম টেস্ট চতুর্থদিন শেষে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ৫১৩/১০ (মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদুল্লাহ ৮৩*; হেরাথ ৩/১৫০, লাকমাল ৩/৬৮)। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস তৃতীয়দিন শেষে ৫০৪/৩ (মেন্ডিস ১৯৬, ধনঞ্জয়া ১৭৩, সিলভা ৮৭*, চান্দিমাল ৩৭*; মুস্তাফিজ ১/৮৮)। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস রান বল ৪ ৬ সিলভা ক লিটন ব মিরাজ ১০৯ ২৩০ ৬ ১ চান্দিমাল ব তাইজুল ৮৭ ১৮৫ ৩ ০ ডিকভেলা ক লিটন ব মিরাজ ৬২ ৬১ ৯ ০ পেরেরা এলবি. ব সানজামুল ৩২ ৬৮ ৪ ০ হেরাথ এলবি. তাইজুল ২৪ ৬১ ১ ০ লাকমাল ব তাইজুল ৯ ২১ ০ ০ লাহিরু নটআউট ২ ৬ ০ ০ অতিরিক্ত (বা ১১, লেবা ৬, ও ২) ১৯ মোট (৯ উইকেট ১৯৯.৩ ওভার; ডিক্লে.) ৭১৩ উইকেট পতন ॥ ১/০ (করুনারতেœ), ২/৩০৮ (ধনঞ্জয়া), ৩/৪১৫ (মেন্ডিস), ৪/৫৫০ (সিলভা), ৫/৬১৩ (চান্দিমাল), ৬/৬৬৩ (ডিকভেলা), ৭/৬৮৭ (পেরেরা), ৮/৭০৬ (লাকমাল), ৯/৭১৩ (হেরাথ)। বোলিং ॥ মুস্তাফিজ ৩২-৬-১১৩-১, সানজামুল ৪৫-২-১৫৩-১, মিরাজ ৪৯-৪-১৭৪-৩, তাইজুল ৬৭.৩-১৩-২১৯-৪, মোসাদ্দেক ৩-০-২৪-০, মুমিনুল ২-০-৬-০, মাহমুদুল্লাহ ১-০-৭-০। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস রান বল ৪ ৬ তামিম ক ডিকভেলা ব সান্দাকান ৪১ ৬২ ৬ ০ ইমরুল ক চান্দিমাল ব পেরেরা ১৯ ৪৮ ১ ১ মুমিনুল নটআউট ১৮ ৩২ ১ ০ মুশফিক ক মেন্ডিস ব হেরাথ ২ ২০ ০ ০ অতিরিক্ত (নো ১) ১ মোট (৩ উইকেট; ২৬.৫ ওভার) ৮১ উইকেট পতন ॥ ১/৫২ (ইমরুল), ২/৭৬ (তামিম), ৩/৮১ (মুশফিক)। বোলিং ॥ হেরাথ ৬.৫-০-২২-১, লাকমাল ৪-০-১৬-০, ধনঞ্জয়া ৬-০-২০-০, পেরেরা ৭-১-২০-১, সান্দাকান ৩-১-৩-১।
×