ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অষ্টম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষক, হাইমচর কলেজ, হাইমচর-চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৭৯৪৭৭৭৫৩৫ ২। হাসি ও খুশি দুই বোন। ২৬মার্চ বিকালে তারা পুরনো ঢাকায় উনিশ শতকে তৈরি একটি স্থাপত্যকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়, যেটি ছিলো একটি পার্ক। বাসায় এসে পার্কটি সম্পর্কে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলে,বাবা বলেন,এই পার্কটির সাথে বাংলার স্বাধীনতার মর্মান্তিক ঘটনা জড়িত। ক) ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত? খ) প্রতœ সম্পদ বলতে কী বোঝায়? গ) উদ্দীপকে বর্ণিত হাসি ও খুশি যে স্থাপত্যকর্ম দেখে মুগ্ধ হয়েছিল তার নাম উল্লেখপূর্বক ব্যাখ্যা করা। ঘ) উক্ত পার্কটি কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িত-তা আলোচনা কর। ক) উত্তর ঃ ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। খ) উত্তর ঃ প্রতœ অর্থ পুরনো বা প্রাচীন। প্রতœ সম্পদ বলতে পুরনো সময়ের বা প্রাচীন কালের স্থাপত্য,শিল্পকর্ম,মূর্তি বা ভাস্কর্য,অলংকার,মুদ্রা ইত্যাদিকে বুঝায়। যেসব জিনিস বা নিদর্শন দেখে দেশের পুরনো ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারনা লাভ করা যায়,সেইসব নিদর্শনই প্রতœসম্পদ। যার মধ্য দিয়ে আমরা পুরনো সময়ের বা প্রাচীন কালের মানুষের সমামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা, জীবনযাত্রা,বিশ্বাস-সংস্কার,রুচি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। গ) উত্তর ঃ হাসি ও খুশি পুরনো ঢাকার ’বাহাদুর শাহ ’ পার্ক দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে,হাসি ও খুশি উনিশ শতকের যে স্থাপত্যকর্ম দেখেছে,সেটি মূলত সময়ের বিবর্তনে বিভিন্ন নামে পরিবর্তিত হয়েছে যা আজকের বাহাদুর শাহ পার্কের ইঙ্গিত বহন করে। আর পার্ক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তাদের বাবা ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনার কথা বলেছিলেন। আঠোরো শতকের শেষের দিকে বর্তমান পার্কটির স্থানে আর্মেনীয়দের একটি বিলির্য়াড ক্লাব ছিল এবং এটিকে কেন্দ্র করে আন্টাঘর নামে একটি ডিম্বাকৃতির ময়দান ছিল। ১৮৫৮ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণের পর ঢাকা বিভাগের কমিশনার এ ময়দানেই নামকরণ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান। সেই থেকে ১৯৫৭ সালের আগ পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজরা এটিকে পার্কে রূপ দেয় এবং চারদিকে লোহা দিয়ে এর চারকোনায় চারটি দর্শনীয় কামান স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ইংরেজরা ১৮৫৭সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় এ ময়দানে ঢাকার বন্দি সিপাহিদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়। একশো বছর পর,১৯৫৭ সালে স্বধীনতার জন্য জীবনদানকারী সৈনিকদের স্মৃতিতে ’ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (ডিআইটি) এর উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয় এবং ভারতবর্ষের শেষ মোঘল স¤্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের নামে স্থানটির নাম রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক। যেটি দেখে হাসি ও খুশি মুগ্ধ হয়েছিল। ঘ) উত্তর ঃ উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত ’বাহাদুর শাহ’ পার্ক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ও জীবন উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা যোগায়,যা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সফল করে তুলেছিল। ’বাহাদুর শাহ ’ পার্কটি এদেশে ইংরেজ শাসকদের বর্বরতা,অত্যাচার ও নির্মমতার বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগী সিপাহিদের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হয়। এর ১০০ বছর পর উপমহাদেশের স্বাধীনচেতা সিপাহিরা স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে কিন্তু তাদের এই সশস্ত্র আন্দোলন সফল হতে পারেনি। সে সময় ঢাকায় ইংরেজদের হাতে বন্দি হওয়া সিপাহিদের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তবে ভারতীয়দের এ আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার আলো ছড়িয়ে ছিল। একইভাবে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস সশস্ত্র সংগ্রাম,অধিকার আদায়ে আত্মোসর্গসহ নানা ঘটনায় পরিপূর্ণ। নানান ঘটনার পরিক্রমায় ১৯৭০ সালে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং আওয়ামী লীগকে জয়ী করে। কিন্তু জয়ী হয়েও বাঙালি ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়নি। উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে বুঝতে পারে,সশস্ত্র সংগ্রাম আর আত্মত্যাগ ছাড়া মুক্তি অর্জন সম্ভব নয়। তাই ১৯৭১সালে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এইভাবে ’বাহাদুর শাহ’ পার্ক বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার আলো ছড়িয়ে ছিল। তাই পার্কটি আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত ছিল বলা যায়।
×