ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে থামছে না পুকুর খনন

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাজশাহীতে থামছে না পুকুর খনন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী অঞ্চলে সরকারী নিষেধাজ্ঞা ও ভূমি আইন উপেক্ষা করে পুকুর খননের কারণে গত পাঁচ বছরের আবাদি জমি কমেছে ১৮ হাজার বিঘা। শুধু তাই নয়, যত্রতত্র পুুকুর খননের কারণে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ৩২৮ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৫শ’ বিঘা আবাদি জমি। তবুও থামছে না পুকুর খনন। আবারও রাজশাহীর সর্বত্র চলছে কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন। এতে একদিকে আবাদি জমির পরিমাণ যেমন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আবাদ করতে পারছেন না চাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চলতি বছরের শুরুতেই রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় আবারও শুরু হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন। এ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না ভূমি আইন ও সরকারী কোন নিয়ম কানুন। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল একরকম জোর করেই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে আবাদি জমিকে পুকুরে পরিণত করছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে পুকুর কাটা বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও থামছে না পুকুর কাটা। সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন বলছেন, এই পুকুর কাটা সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, এদের কাছে প্রশাসনও অসহায়। কেউ কেউ আবার দাবি করছেন হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে তারা পুকুর কাটছেন। কৃষকরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে একে কেউ কেউ উন্নয়ন কর্মকা- বললেও ভবিষ্যতে এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ। অপরিকল্পিতভাবে এই পুকুর খননের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন কানুনও মানা হচ্ছে না। ফলে অনেক এলাকাতেই বন্ধ হয়ে গেছে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ। পুকুরগুলোর পাশের জমিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। চলতি রবি মৌসুমে অনেক পুকুরের পাশে হাজার হাজার বিঘা জমিতে শুধু জলাবদ্ধতার কারণে আলু, গম, সবজিসহ অন্যান্য আবাদ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জমিতে আবাদ করতে না পারায় ওই এলাকার চাষিরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। পুকুরের কারণে আবাদ করতে না পারায় পুকুর মালিকদের সঙ্গে এলাকাবাসীর দ্বন্দ্ব নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে ধর্না ধরছেন। শুধু ব্যক্তি মালিকানা জমিতে নয়, সরকারী খাস জমিতেও পুকুর কাটা হচ্ছে অবাধে। প্রশাসন খাতা-কলমে কিছু মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দিলেও খননের কাজ থেমে নেই। বর্তমানে পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের মাধবপুর বিল, কানপাড়া বিল ও হুজরীপাড়া ইউনিয়নের কর্নহার বড়বিলে এসকেভেটর মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে এসব পুকুর। চাষিদের সমস্যার কথা ভেবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ৫ বছরে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খনন করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৫টি। এসব পুকুরে যাওয়া জমির পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার বিঘা। এসব পুকুর খননের ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে ৩২৮ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার ৫শ’ বিঘা আবাদি জমিতে। এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষিবিদ মনজুরে মাওলা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নিয়ম না মেনে এই পুকুর খননের ফলে একদিকে যেমন আবাদি জমি কমেছে, অন্যদিকে পুকুরের পাশের জমিতে চাষিরা আবাদ করতে পারছেন না জলাবদ্ধতার কারণে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। রাজশাহীতে পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন বেলার স্থানীয় প্রতিনিধি তন্ময় স্যানাল বলেন, সরকারী বিধি মোতাবেক জমির রকম পরিবর্তন করা যাবে না। যদি কোন কারণে রকম পরিবর্তন করা লাগে তবে আবশ্যই জমি সংশ্লিষ্টদের প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। বর্তমানে যত্রতত্র পুকুর খননে কৃষি জমি ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। যা থেকে অদূর ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
×