ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবাদি ভূমি কমে নগরায়ন

হাইরাইজ নগরীতে পরিণত হচ্ছে বগুড়া

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হাইরাইজ নগরীতে পরিণত হচ্ছে বগুড়া

সমুদ্র হক ॥ আগে ছিল শহর। এখন লোকমুখে নগরী। বিশ বছর আগের বগুড়া শহরের সঙ্গে আজকের বগুড়া নগরীকে কোন ভাবেই মেলানো যায় না। দিনে দিনে নগরায়নের পরিধি বাড়ছে। বেশিরভাগই অপরিকল্পিত। ক’বছর আগের শহরতলিও এখন নগরী। ভবনগুলো আকাশমুখী। মনে হবে কংক্রিটের বন। ঢেকে দেয় বিকেলের সোনারোদ। দ্রুত নগরায়নের এই প্রক্রিয়ার থাবা সরাসরি পড়েছে ফসলি ভূমির ওপর। কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। বগুড়া নগরী চারদিকে সম্প্রসারিত হওয়ায় গিলে ফেলছে জমিগুলো। গত এক যুগে বগুড়ায় আবাদি ভূমি কমেছে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর। এই পরিমাণ জমি থেকে উৎপাদন কমেছে তিন লাখ মে. টনেরও বেশি। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কথা : আবাদি ভূমি কমেছে ঠিকই। উৎপাদনের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানের কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সকল ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত আসায় কম জমিতে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। বগুড়া উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী নগরী হওয়ায় এই এলাকার জমির দাম অনেক বেশি। চাকরির কারণে যারা ঢাকা ও অন্য জেলা থেকে বগুড়ায় আসেন তাদের বড় একটি অংশ শেষ পর্যন্ত বগুড়ার অভিবাসী হয়ে যান। প্রথমে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তারপর বসত বাড়ি গড়ার জন্য জায়গা কেনেন। একটা পর্যায়ে বাড়ি নির্মাণ করণে, কেউ ইনস্টলমেন্টে ফ্ল্যাট বাড়ি কেনেন। আরেকদিকে একদার শিল্প-নগরী বগুড়া তার ঐতিহ্য হারিয়েছে। পরিণত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতমানের নগরীতে। যা চলমান। অত্যাধুনিক মার্কেট, রাজধানী ঢাকার মতো শপিং মল, কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বহুতল শপিং কমপ্লেক্স, বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর শো-রুম ও কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, তারকা খঁচিত মর্যাদার হোটেলসহ উন্নত অবকাঠামো গড়ে উঠছে। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী বগুড়া মহাস্থানগড়কে পর্যটক আকর্ষণে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলায় পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়েছে। বগুড়া নগরী এখন ডেভেলপারদের আকর্ষণ করছে। বেড়েছে তাদের সংখ্যা। তারা নগরীর ভেতরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা ছাড়াও শহরতলি এলাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে ভূমি কিনে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করছে। ডেভেলপাররা যাদের জায়গা কিনে ফ্ল্যাট বানাচ্ছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে। বহুতল ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাট ভূমির মালিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়। একই সঙ্গে নগরীর আশপাশে বসতবাড়ি, সরকারী ও বেসরকারী ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠছে। এর পাশাপাশি পরিবারগুলো ভেঙ্গে খ-িত হওয়ায় অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেড়ে যাওয়ায় অধিক মানুষের বাসস্থান গড়তে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমি। এভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ণ প্রক্রিয়া। এক যুগ আগে বগুড়া পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এই আয়তন বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭০ বর্গকিলোমিটার। এর বাইরেও নগরায়ণ প্রক্রিয়া চলছে। বগুড়া নগরীর কাছাকাছি স্বল্প দূরত্বের উপজেলাগুলোতে একইভাবে আবাদি ভূমিতে ঘর-বাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে পূর্বের গাবতলি, সোনাতলা, পশ্চিমের কাহালু, দক্ষিণের শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় নগরায়ণের প্রক্রিয়া বেশি। এই পাঁচ উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই ভাল যে লোকজন পনেরো মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনে (বাস, মিনিবাস সিএনজি চালিত অটোরিক্সা) বগুড়া নগরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তারা নগরীর উপকণ্ঠে বসবাসের আমেজ পান। নগরায়নের বেশিরভাগ উন্নত স্থাপনা গড়ে উঠছে আবাদি ভূমির ওপর। যে কারণে আবাদি ভূমি বিক্রির হারও বেড়ে গিয়েছে। এক সূত্র জানায়, এক যুগ আগে বগুড়ায় আবাদি ভূমির পরিমাণ ছিল, ২ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টরে। এর বাইরে যে ৪৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি ভূমি ও ভিটা ছিল সেখানেও স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।
×