ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বান্দরবানে জৈব সারে সবজি বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বান্দরবানে জৈব সারে সবজি বিপ্লব

সদর উপজেলার রেইছা এলাকার গোয়ালিয়া খোলা গ্রাম। চারদিকে সবুজ আর সৌন্দর্যের সমারোহ। শীতকালীন সবজিতে ভরপুর গ্রামের পর গ্রাম। জৈব সার দিয়ে এই সবুজ ফসলকে যিনি প্রাণবন্ত করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি হলেন গোয়ালিয়া খোলা গ্রামের কৃষক আবুল বশর। জেলা সদরের সুয়ালক, রেইছা বাজার, গোয়ালিয়া খোলা, রোয়াজাপাড়া, ধুঙ্গি পাড়া, রতœপুর, লম্বা ঘোনা, সাতকমল পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষ এখন কৃষিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে প্রতিটি পাড়ায় কম-বেশি কৃষকের বসবাস। সম্প্রতি এই এলাকার কৃষকরা বান্দরবান কৃষি অধিদফতরে সহযোগিতায় আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে নানা প্রকার ধারণা নিয়ে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করে যাচ্ছে। এই এলাকায় ফসল উৎপাদনের একটি অন্যতম সহযোগী উপাদন হলো জৈব সার। কৃষক আবুল বশরের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করে প্রতিটি কৃষক পরিবার এখন স্বাচ্ছন্দ্যে নানা রকম সবজি উৎপাদন করে যাচ্ছে। এই সার ভার্মি কম্পোস্ট যা কেঁচো সার নামেও পরিচিত। বান্দরবান সদর ইউনিয়নের রেইছার গোয়ালিয়া খোলা এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, জেলা শহরের কাছে আর সবচেয়ে বেশি সতেজ শাক সবজির উৎপাদন হয় বলে এই গ্রাম এখন সবজির গ্রামে পরিচিত হয়ে উঠছে। যাকে অনেকেই সবজির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মনে করছে। সবুজের সমারোহ যেদিকে তাকায় সবুজ ফসলের মাঠ আর মাঠ। আরও দেখা যায়, স্ত্রীসহ ৩ ছেলে-সন্তান নিয়ে বসবাস করে এই আবুল বশর। বাড়ির আঙ্গিনার এক পাশে নিম তৈল, জৈব সার, ভার্মি কম্পোস্ট, বালাইনাশক, টাইকো কম্পোস্টসহ নিজের উৎপাদিত বেশকিছু সারের স্তূপ। এখানে যে সারটি আমার চোখে তাক লাগাল সেটি ভার্মি কম্পোস্ট। আবুল বশর বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বান্দরবানের একটি বেসরকারী সংগঠনের (এনজিও) এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পেয়ে নিজেই ২০১৪ সাল থেকে কৃষি কাজের পাশাপাশি পরিবারের আঙ্গিনায় শুরু করেছে ভর্মি কম্পোস্ট (কেঁচো) সার তৈরি। তিনি জানান, জৈব সার আমাদের মাটি ও ফসলের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যেভাবে কেমিক্যাল ব্যবহার করে মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা কমিয়ে ফেলেছি তাতে করে মাটির জন্য প্রাকৃতিক জৈব সার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এই ভার্মি (কেঁচো)সার আবার মাটির সঙ্গে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আশা করি মাটি তার উর্বরতা ফিরে পাবে। একই গ্রামের কৃষক নূর মোহাম্মদ জানান, এই জৈব সার খুবই ভাল, এই কেঁচো সার এমন একটি সার যেটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে বহুগুণ। আগে আমাদের মতো কৃষকদের বাজার থেকে চড়া দামে সার ক্রয় করতে হতো। ফলে ফসল উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত খরচ হতো, এখন আবুল বশরের তৈরি সার দিয়ে আমাদের গ্রামের সবাই চাষাবাদ করছি, এতে করে আমাদের নিজের খরচ অনেকটা কমেছে, উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষক আবুল বশর জানান, ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিবছর তার নিজের চাষের কাজে ব্যবহার করে ৩০ থেকে ৩৫ কেজি সার বাজারে বিক্রি করে। বর্তমানে তিনি ৪ শতক জমিতে নিজের তৈরি সার দিয়ে শিম, লাউ, বেগুন, ক্যাপসিকাম, মরিচ, কুমড়া, স্বস্কোস, শসা ইত্যাদি উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন। আবুল বশরের দেখাদেখি এখন রেইছাসহ বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখেছেন। কেঁচো সার ব্যবহার করে ফলিয়েছেন বিষমুক্ত সবজি। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, কেঁচোতে জিবরাইলিক এসিড নামের এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে। গোবর ও পচনশীল উপাদানের সঙ্গে ওই এসিড মিশে গেলে ইউরিয়া, পটাশসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সারের গুণাগুণ এক সঙ্গে পাওয়া যায়। এ জন্য এই জৈব সার ব্যবহার করলে আর অন্য কোন সার ব্যবহার করা প্রয়োজন হয় না। -এস বাসু দাস, বান্দরবান থেকে
×