ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আরামেই জিতল আরামবাগ!

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আরামেই জিতল আরামবাগ!

রুমেল খান ॥ ‘আরামেই জিতলো আরামবাগ’, ‘আবাহনীকে খেলা শেখালো আরামবাগ’, ‘আরামবাগে ধরাশায়ী আবাহনী’, ‘আরামবাগে অসহায় আত্মসমপর্ণ আবাহনীর’, ‘আবাহনীর ট্রেবল শিরোপা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ আরামবাগে’... এ রকম আরও কিছু শিরোনাম নিয়ে শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে বিস্তর গবেষণা হলো। সচেতন ফুটবলপ্রেমী-পাঠকরা নিশ্চয়ই ওপরের শিরোনামগুলো পড়ে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলেছেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ হারিয়ে দিয়েছে ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল এটা। যাতে আরামবাগ জেতে ৩-০ গোলে। খেলার প্রথমার্ধে অবশ্য কোন দলই গোল করতে পারেনি। এই জয়ে সেমিফাইনালে নাম লেখালো ‘দ্য রাইজিং স্ট্রেন্থ’ খ্যাত আরামবাগ। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় তারা প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের। যারা প্রথম কোয়ার্টারে ব্রাদার্সকে হারিয়েছিল ২-০ গোলে। গতবার স্বাধীনতা কাপে গ্রুপে গোলশূন্য ড্র করেছিল আবাহনী-আরামবাগ। ২০১৬ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আরামবাগকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আবাহনী। সেই হারের শোধটাই দুই বছর পর এভাবে নেবে আরামবাগ সেটা কি কল্পনা করেছিল আবাহনী? এবারের লীগেও তো তারা ১-০ এবং ২-১ গোলে হারের স্বাদ উপহার দিয়েছিল আরামবাগকে। চলতি মৌসুমে ফেডারেশন কাপ এবং প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জিতেছিল আবাহনী। শুক্রবারের হারে এই মৌসুমে প্রথমবারের মতো ট্রেবল শিরোপা জেতার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেল ‘দ্য স্কাই ব্লু ব্রিগেড’ খ্যাত আবাহনীর। এর আগে ১৯৮২ সালে মোহামেডান এবং ২০১২ সালে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র ট্রেবল জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। ২০১২ সালে রাসেলের ট্রেবল জয়ী কোচ ছিলেন মারুফুল হক। মজার ব্যাপারÑ সেই মারুফুলই এবার থামিয়ে দিলেন আবাহনীকে। কেননা তিনি যে এখন আরামবাগের কোচ! এ নিয়ে মজা করে অনেকেই বলেছেন, নতুন শিরোনাম দেয়া যায় আরেকটা। সেটা হলো ‘কোচ মারুফুলের কাছে হারলো আবাহনী’। ম্যাচের প্রথমার্ধে দাপট ছিল আবাহনীর। কিন্তু বিরতির পর পাল্টে যায় চিত্রনাট্য। বলা যায় আরামবাগের প্রথম গোলের পরই ম্যাচের গতিপথ বদলে যায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় মারুফুলের শিষ্যরা। আবাহনীর ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রপু ম্যাচ শেষে বলেন, ‘ফুটবলাররা নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। আরামবাগ তো চাপ সৃষ্টি করে তিন গোল দেয়নি। আমরা তাদের গোল উপহার দিয়েছি। রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের ভুলেই গোল হজম করেছি। আর ফরোয়ার্ডরা গোল মিস করেছেন।’ আরামবাগ কোচ মারুফুল হক বলেন, ‘ছেলেরা প্রমাণ করেছে তাদের সামর্থ্য আছে। আর এক গোল দেয়ার পর আমরা যে আরও গোল দিতে পারি তা এই ম্যাচে প্রমাণিত হয়েছে। পরিকল্পনাগুলো সফল হয়েছে।’ দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই টাইমিং বোর্ড বিকল হয়ে পড়ে। ফলে ম্যাচের কত মিনিট চলছে সেটা নিয়ে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। দ্বিতীয়ার্ধটা কি দুর্দান্তই না খেলেছে মারুফুল হকের শিষ্যরা। তাদের দুরন্ত গতির কাছে আবাহনী কোন পাত্তাই পাচ্ছিল না। শুক্রবারের ম্যাচে কর্নার পায় আবাহনী ১০টি এবং আরামবাগ ৪টি করে। আক্রমণ সংখ্যায় এগিয়ে ছিল আবাহনী (১৫০-৮৬)। তবে বিপজ্জনক আক্রমণে এগিয়ে ছিল আরামবাগ (১৪৬-১৩৬)। অন টার্গেটে শট নেয়ার বেলাতে এগিয়ে আবার আবাহনী (১১-৮)। ৬২ মিনিটে ম্যাচে লিড নেয় আরামবাগ। বাঁপ্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার আরিফের ক্রসে ডান পায়ে বাঁকানো শটে আবাহনীর জালে পাঠান দলীয় অধিনায়ক আবু সুফিয়ান সুফিল (১-০)। ৮২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে চমক দেখায় মতিঝিলের ক্লাবটি। বাঁপ্রান্ত দিয়ে সুফিলের কাছ থেকে পাস পেয়ে গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে অসাধারণ চিপ করে লক্ষ্যভেদ করেন ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জুয়েল (২-০)। ৮৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দারুণ বক্র শটে শাহরিয়ার বাপ্পী বোকা বানান আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলমকে (৩-০)। এখন দেখার বিষয় সেমিতে শেখ জামালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে পারে কি না আরামবাগ।
×