ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চৈতির বইমেলা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চৈতির বইমেলা

চৈতি ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। তার মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কিভাবে বন্ধুরা সবাই মিলে বইমেলায় ঘুরে বেড়াতেন, এসব গল্প শুনতে শুনতে তার মনেও বইমেলায় যাওয়ার আগ্রহ জেগেছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে ঢাকায় অমর একুশে বইমেলা শুরু হয়। সেখানে নাকি গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছড়াসহ নানান রকমের বই স্টলে সাজানো থাকে। সবাইকে লাইনে দাঁড়িয়ে বইমেলায় ঢুকতে হয়। আবার, এই মেলায় অনেক বিখ্যাত মানুষরাও আসেন। আর তাদের ক্যামেরা নিয়ে ঘিরে থাকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক। সবই চৈতি তার মায়ের কাছ থেকে শুনেছে। চৈতির মনে বইমেলাকে ঘিরে নানান কল্পনা। তাই তো সে মায়ের কাছে বায়না ধরেছে বই মেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। মিসেস রেহানা কখনই একমাত্র মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন না। তবে এই মুহূর্তে চৈতির বাবা ব্যবসার কাছে দেশের বাইরে আছেন। এদিকে তারা দু’জনেই ঢাকায় বইমেলায় ঘোরার জন্য চলে গেলে বাড়িতে চৈতির দাদি একা থাকবেন। এসব ভেবে তিনি চৈতির মেজ মামাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসে চৈতিকে নিয়ে যেতে বলেছেন। এ কথা শুনে চৈতির মেজ মামাও ভীষণ খুশি হয়েছেন। একে তো অনেকদিন পর নিজের বোনের বাড়িতে যাওয়া হবে, তার ওপর একমাত্র ভাগ্নিকে তিনি তার সঙ্গে করে ঢাকায় নিয়ে আসবেন। চৈতির প্রায় সমবয়সী তার নিজেরও একটা মেয়ে আছে। ওর নাম রূম্পা। চৈতি বেড়াতে আসলে ঢাকা শহরের ব্যস্ত জীবন যাপনের এক ফাঁকে কয়েকটা দিন সেও অন্তত খেলাধুলা করার জন্য নতুন একজন সঙ্গী পাবে। বেশ ভালই হবে, দুই বোন মিলে কিছুদিন আনন্দ হৈ-হুল্লোড় করে কাটাবে। তাছাড়া রুম্পাও কখনও বইমেলায় যায়নি। ওরও বইমেলায় যাওয়ার ভীষণ ইচ্ছে। অফিস থেকে ছুটি নিয়ে মেজ মামা চট্টগ্রাম চৈতিদের বাসায় গিয়ে পৌঁছলেন। অনেকদিন পর ভাইকে দেখতে পেয়ে মিসেস রেহানা এক প্রকার আনন্দের কান্না কেঁদেই ফেললেন। তবে চৈতির দিকটা ভিন্ন। সে বইমেলায় যেতে পারবে ভেবেই বেশি খুশি। মামাকে জড়িয়ে ধরে বার বার এটাই বলে চলেছে সে, মেজ মামা এসে গেছে, মেজ মামা এসে গেছে; এবার আমি মামার সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে বইমেলায় যেতে পারব। ঢাকায় যাওয়ার জন্য চৈতি আগে থেকেই তার ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল। একদিন চৈতিদের বাড়িতে থাকার পর মেজ মামা তার আদরের ভাগ্নিকে নিয়ে ঢাকায় রওনা হলেন। ঢাকায় গিয়ে বাসায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই চৈতি মামার কাছে জিজ্ঞেস করল, মামা, আমরা বইমেলায় কখন যাব? ভাগ্নির কথার উত্তরে মেজ মামা জানালেন, আজ তো মাত্র আসলে, মামণি। আজকের দিনটা একটু বিশ্রাম করে নাও। তাছাড়া এখন তো তোমার রুম্পা আপুও স্কুল থেকে ফেরেনি। কালকে ওর স্কুল বন্ধ আর আমারও অফিস নেই। রুম্পা আপু আসলে তুমি বরং আজকের দিনটা ওর সঙ্গে কার্টুন দেখ আর খেলাধুলা কর। আগামীকাল আমরা তিনজন মিলে বইমেলায় যাবো। -আচ্ছা মামা। আপু আসলে আমি ওর কাছ থেকে স্কুলের গল্প শুনব তাহলে। এখন আমি একটু কার্টুন দেখি টিভিতে। টিভিতে কার্টুন দেখতে দেখতে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেল। এদিকে রুম্পাও স্কুল থেকে ফিরে এসেছে। বাসায় ঢুকেই চৈতিকে দেখে একেবারে লাফিয়ে উঠেছে সে। চৈতিও খুশিতে ওকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছে। একে তো বোন, সেইসঙ্গে প্রায় সমবয়সী হওয়ায় নতুন খেলার সঙ্গীকে কাছে পেয়ে দু’জনই ভীষণ খুশি। রাত দশটার দিকে রুম্পার সঙ্গে ঘুমোতে গেল চৈতি। অবশেষে আগামীকাল তার ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে ভাবতেই ভাল লাগছে। স্কুলের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছড়া আর ছোটদের গল্পের বই পড়তে ভালবাসে চৈতি। তাই মনে মনে কিছু ছোটদের গল্প আর ছড়ার বই কিনবে বলেও ঠিক করলো সে। কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ল ওরা দুজনে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে খানিকটা দেরি হয়ে গেল চৈতির। ঘুম থেকে উঠে দেখল রুম্পা পড়তে বসেছে। মামার কাছে যেতেই মামা একগাল হেসে বললেন, এই তো মামণি তোমার ঘুম ভেঙেছে। হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে নাও। এরপর দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা বইমেলায় ঘুরতে যাব। মেজ মামার কথা মতো হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা করে নিল চৈতি। এরইমধ্যে রুম্পাও পড়া শেষ করে চলে এসেছে। দুজনে মিলে বসে গল্প করতে করতেই দুপুর করে ফেলল। চৈতির মামি টেবিলে খাবার দিয়ে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলেন। খাওয়া শেষ হলে ওদের দুজনকে কাপড়-চোপড় পরিয়ে তৈরি করে দিলেন তিনি। এরপর বইমেলায় যাওয়ার জন্য রওনা হলো তিনজন। চৈতির যেন আর কিছুতেই তর সইছে না। মায়ের কাছে শুনেছে বিশাল বড় জায়গাজুড়ে নাকি বইমেলা হয়। চৈতি ঠিক করেছে হাওয়াই মিঠাই কিনে খেতে খেতে বইমেলাটা আগে ঘুরে দেখবে সে। তারপর পছন্দ মতো ছড়া আর গল্পের বই কিনে বাসায় ফিরবে। ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় খুব একটা যানজটের মুখে পড়তে হয়নি তাদের। অল্প সময় পরই পৌঁছে গেল বইমেলায়। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতেই বড় বড় চোখে দেখতে লাগল চৈতি, বিশাল জায়গাজুড়ে অসংখ্য বইয়ের দোকান। মেজ মামাই আসার সময় বলেছিলেন, যেন রুম্পা আর চৈতি দুজনেই শক্ত করে উনার হাত ধরে থাকেন সবসময়। লোকজনের ভিড়ে একটু এদিক-সেদিক গেলেই খুঁজে বের করা খুব কষ্ট হয়ে যাবে। নতুন কিছু একটা দেখার আনন্দও যেন তার মনের মধ্যে এসে ভর করেছে। এ যেন বিশাল এক বইয়ের রাজ্য! চারদিকে কত কত বইয়ের দোকান। প্রতিটা বই-ই সুন্দর আর রঙিন ছবির মলাটে বাঁধানো। তাই তো বইগুলোর গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে সে মামাকে বলে উঠল, ঈশ, যদি সবগুলো বই বাসায় নিয়ে যেতে পারতাম! কি মজাটাই না হতো, তাই না মামা! ছোট্ট ভাগ্নির কথায় মেজ মামা মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, সবগুলো তো নয় মামণি। তবে আজকে তোমাকে অনেকগুলো বই কিনে দেব। বই কেনা শেষে মেজ মামা চৈতি আর রূম্পাকে বললেন, এবার তো যেতে হবে। চৈতি আবারও শক্ত করে মেজ মামার এক হাত ধরল। আর তার অন্য হাতে অনেকগুলো গল্প আর ছড়ার বইয়ের ব্যাগ।
×