ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 ডিএমপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হচ্ছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রায় দুই কোটি মানুষের মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এই মেগাসিটিতে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন আর চিকিৎসা ও আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার কারণে অনেকেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। মেগাসিটিতে বসবাসের জন্য কনস্টেবল পর্যায়ের সদস্যদের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয় না। অনেক সময়ই তাদের কাছ থেকে আশাতীত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে আজ পলিত হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকছেন। ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ১২ টি থানা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। নাগরিক জীবনে পুলিশের আধুনিক সেবা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে ডিএমপি প্রতিষ্ঠিত হয়। ধীরে ধীরে মেট্রোপলিটন পুলিশের এলাকা বাড়তে থাকে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে থানাগুলোও ভাগ করা হয়। ২০০৬ সালে ডিএমপির থানা সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩ টিতে। লোকবল ছিল ২৩ হাজার ৪শ’। বর্তমানে ৪৯ টি থানাসহ পুলিশ সংখ্যা সাড়ে ৩৪ হাজার। একজন কমিশনার, ৬ অতিরিক্ত কমিশনার, ১১ যুগ্ম কমিশনার, ৪২ উপকমিশনার ও ৭৩ অতিরিক্ত উপকমিশনার কর্মরত রয়েছেন। মোট পুলিশের ৯০ ভাগই হলেন কনস্টেবল। ৩০ হাজার পুলিশ কনস্টেবলের প্রায় সবাইকে চরম দুর্ভোগ আর অনিশ্চিয়তার মধ্য দিয়ে ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ডিএমপিতে চলছে তীব্র আবাসিক সঙ্কট। মাত্র ২ দশমিক ৬২ ভাগ পুলিশ সদস্য আবাসিক সুবিধা পাচ্ছেন। ৬ হাজার কনস্টেবল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ব্যারাক ও বিভিন্ন থানা ব্যারাকে থাকেন। বাকি ২৪ হাজার কনস্টেবল ভাড়া বাসায় থাকেন। আবাসিক সুবিধা না থাকায় তাদের বেতনের একটি বড় অংশ দিয়ে ভাড়ায় থাকতে হচ্ছে। নিজ থানা এলাকায় অনেক সময় বাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় নগরীর উপকণ্ঠে যেসব স্থানে ভাড়া কম সেখানে বাড়ি নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন তার কর্মস্থলে যেতে সময় নষ্ট হচ্ছে। ডিএমপিতে কমিশনার থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত এই সাড়ে ৩৪ হাজার পুলিশের যাতায়াত ও ডিউটির জন্য মাত্র সাড়ে ৫শ’ গাড়ি রয়েছে। এর অর্ধেকই ২০ বছরের বেশি পুরনো। পুলিশ কর্মকর্তাদের (কমিশনার থেকে সহকারী কমিশনার) জন্য যানবাহন থাকলেও থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। বেশি পুরনো ও ভাঙ্গাচোরা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। ভাঙ্গাচোরা গাড়ি দেয়া হলেও তার সংখ্যাও অপর্যাপ্ত। এ কারণে টহল পুলিশের ডিউটির জন্য পুলিশকেই বেসরকারী পর্যায়ের গাড়ি রিক্যুইজিশন করতে হয়। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, পুলিশ গাড়ি রিক্যুইজিশনের নীতিমালা না মেনে ব্যক্তিগত, রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজের শিক্ষক পরিবহনের গাড়ি রিক্যুইজিশন করে। এ গাড়ি রিক্যুইজিশন করতে গিয়ে পুলিশকে গাড়ি মালিকদের মুখোমুখি অবস্থায় নিয়ে যায়। এতে পুলিশ সম্পর্কে গাড়ি মালিকদের কাছে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধা নেই বললেই চলে। পদস্থ কর্মকর্তারা তাদের পরিবারের চিকিৎসার জন্য বেসরকারীভাবে নিজ খরচে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করলেও কনস্টেবল থেকে সাবইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সেবায় এক ধরনের নিগৃহীত হতে হয়। এদের পরিবারের চিকিৎসা সেবার জন্য নির্ভর করতে হয় রাজারবাগ পুলিশ কেন্দ্রীয় হাসপাতালের ওপর। পুলিশ সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে জনগণের কাক্সিক্ষত প্রত্যাশা ও নির্ভরতার মূর্ত প্রতীক হিসেবে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ, মহিলা ও অসহায়দের হয়রানি, নির্যাতন ও অপরাধের শিকার হতে রক্ষার দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পুলিশের সেবার পাশাপাশি অপরাধ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন কার্যক্রমকে গতিশীল ও কার্যকর করতে উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় অসাধু পুলিশ সদস্য নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। উর্ধতন কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশের পরও নানাভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। ভুক্তভোগীরা থানায় গেলে সহযোগিতা না করে, উল্টো নাজেহাল করার অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিবছর ডিএমপির বিরুদ্ধে নানা অপরাধে লিখিত অভিযোগ করা হচ্ছে। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে ডিএমপি’র উর্ধতন কর্মকর্তারা জানান।
×