ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হতাশায় ঘেরা বাংলাদেশের আরেকটি দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হতাশায় ঘেরা বাংলাদেশের আরেকটি  দিন

মিথুন আশরাফ ॥ নখদন্তহীন বোলিং। সুযোগ পেয়েও শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের আউট করতে না পারার কষ্ট। ফিল্ডারদের গা ছেড়ে দেয়া ফিল্ডিং মিলিয়ে এমনই অবস্থা হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টে হতাশায় ঘেরা আরেকটি দিনই কাটিয়েছে বাংলাদেশ। যদিও এখন শ্রীলঙ্কা থেকে ৯ রানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেই এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের ভাল অবস্থাকে বোঝাচ্ছে না। কারণ দিনটিতে যে ২ উইকেটের বেশি ফেলা যায়নি। শ্রীলঙ্কাও রানের পাহাড় গড়ছে। তাতেই হতাশার দিন মিলেছে। দ্বিতীয়দিনটিতেও মাত্র ১ উইকেট নিতে পেরে হতাশার দিন গেছে। তৃতীয়দিনটিও তাই গেল। প্রথম ইনিংসে ৫১৩ রান করেছে বাংলাদেশ। মনে হয়েছিল, শ্রীলঙ্কাকে বুঝি চেপে ধরতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু রানের খাতা খোলার আগেই শ্রীলঙ্কার ১ উইকেট পতনের পর যে পাল্টে গেল চিত্র, এরপর দিনগুলো শুধু শ্রীলঙ্কার দখলেই থাকল। দ্বিতীয়দিনে ১ উইকেটই নেয়া গিয়েছিল। ১৮৭ রানও করে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। হতাশায় দিনটি কেটেছিল। তৃতীয়দিন গিয়ে আরও ২টি উইকেট শিকার করা গেছে। কিন্তু আরও ৩১৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে শ্রীলঙ্কা। তাতে ৫০৪ রান হয়ে যায়। কুশল মেন্ডিস (১৯৬) ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১৭৩) দুইজনই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। দুইজন মিলে দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩০৮ রানের জুটিও গড়েন। এরপর রোশেন সিলভা (৮৭*) ও অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল (৩৭*) মিলে ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। এই দুইজন আজ চতুর্থদিন ব্যাট করতে নামবেন। বোঝাই যাচ্ছে ম্যাচের মোড় বাংলাদেশের হতাশার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই শ্রীলঙ্কা আজ প্রথম সেশনে যত বেশি রান করতে পারে করবে। এরপর সুবিধামতো ২০০ বা ২৫০ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দেবে। এরপর যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা শ্রীলঙ্কান বোলারদের রুখে দিতে না পারেন, বিধ্বস্ত হন; তাহলেই বাংলাদেশের সামনে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। শ্রীলঙ্কা যদি আজ প্রথম সেশনে লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। তাহলে হাতে সবমিলিয়ে পাঁচ সেশন থাকবে। তখন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের কম করে হলেও আজ ও রবিবার মিলিয়ে চার সেশন খেলে দিতে হবে। তা না হলে শ্রীলঙ্কা থেকে বাঁচা মুশকিল হয়ে পড়তে পারে। এখন সবকিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ওপরই। প্রথম ইনিংসের মতো সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক, হাফ সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলে দিতে পারলে। তার সঙ্গে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাসরাও ভাল স্কোর গড়তে পারলেই রক্ষা মিলবে। ম্যাচের যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ভাল করলে ড্র হবে। আর যদি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় ইনিংসে বিধ্বস্ত হন। তাহলে তো হারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সব এখন ব্যাটসম্যানদের ওপরই নির্ভর করছে। বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান মুমিনুল ও মুশফিক মিলে যেমন শ্রীলঙ্কা বোলারদের জ্বালা দিয়েছেন। ঠিক তেমনি দ্বিতীয়দিন ৮৩ রানে অপরাজিত থাকা কুশল মেন্ডিস ও ১০৪ রানে অপরাজিত থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও বাংলাদেশ বোলারদের পুড়িয়েছেন। এই দুই ব্যাটসম্যান মিলে দ্বিতীয়দিনটি শুরু করেন। প্রথম সেশনে তো বাংলাদেশ বোলাররা দুইজনের একজনকেও আউট করতে পারেননি। দ্বিতীয় সেশনে গিয়ে যখন দুইজনকেই আউট করা গেছে, ততক্ষণে রান অনেক বেশি হয়ে গেছে। মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ধনঞ্জয়া ২২৯ বলে ১৭৩ রান করে আউট হওয়ার ১০৭ রান পর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে মেন্ডিসও আউট হন। তবে চার রানের (৩২৭ বলে ১৯৬) জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ধনঞ্জয়ার সঙ্গে ৩০৮ রানের জুটি গড়ার পর সিলভাকে নিয়ে ১০৭ রানের জুটি গড়েন মেন্ডিস। অবশেষে ৪১৫ রানে গিয়ে আউট হন। দ্বিতীয় সেশনে ধনঞ্জয়া ও মেন্ডিসকে আউট করার পর স্বস্তি মিলে। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। পরের সেশনে যে আর কোন উইকেট শিকার করা যায়নি। অবশ্য দ্বিতীয় সেশনেই আরেকটি উইকেট নেয়া যেত। কিন্তু ১ রানে থাকা সিলভার ক্যাচটি ধরতে ব্যর্থ হন অমনোযোগী উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাস। সিলভা এই সুযোগটি পেয়ে আর আউটই হননি। চান্দিমালকে নিয়ে দিন শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। শ্রীলঙ্কাকেও নিয়ে যান ৫০৪ রানে। এখন এই রান যে অনায়াসেই টপকে যাবে শ্রীলঙ্কা তাতো নিশ্চিত। এই টপকে যাওয়া কতদূরে থামে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কি করেন, তারপরই ম্যাচের গতিবিধি নির্ভর করছে। আজ চতুর্থদিনের ম্যাচের পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নিচ্ছে তা বোঝা যাবে। তার আগে তৃতীয়দিনটি বাংলাদেশের জন্য হতাশার আরেকটি দিন হিসেবেই ধরা দিল।
×