ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক

খালেদার অবর্তমানে ফখরুল ও মোশাররফকে গুরুত্ব

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার অবর্তমানে ফখরুল ও মোশাররফকে গুরুত্ব

শরীফুল ইসলাম ॥ আজ শনিবার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক। সকাল ১০টায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেত সংলগ্ন হোটেল লা মেরিডিয়ানে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে খালেদা জিয়া জেলে গেলে কিভাবে দল পরিচালনা করা হবে এবং আন্দোলন কর্মসূচী কি হবে তা ঠিক করা হবে। ৩ পর্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে প্রায় অর্ধশত নেতাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দিয়ে শেষ পর্যায়ে খালেদা জিয়া দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। তার অনুপস্থিতিতে দলের মহাসচিব ও সিনিয়র নেতা ড. মোশাররফকে যেন বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় এমন দিকনির্দেশনা থাকবে। সূত্রমতে, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল এখনই করার কোন পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা হওয়ায় দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সবার মতামত নিয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলের প্রায় ২ বছর পর বিএনপির এবারের জাতীয় কাউন্সিলটি দলের জন্য বিশেষ গুরুত্ববহ। বিশেষ করে মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার জেল হলে কিভাবে দল পরিচালিত হবে, আন্দোলন কর্মসূচী কি হবে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত কি হবে এসব নিয়ে বিএনপির আজকের নির্বাহী কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে। জানা যায়, বৈঠকের শুরুতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, খালেদা জিয়াসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বিএনপির এখন কি করা উচিত এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেবেন নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে। এর পর এক এক করে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত নেয়া হবে। সবশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর বর্তমান জাতীয় নির্বাহী কমিটির গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিনমাস পর জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও আজ শনিবারইএ কমিটির প্রথম বৈঠক হচ্ছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার জন্য আধা ডজন ভেন্যুতে যোগাযোগ করে বিফল হওয়ার পর হোটেল লা মেরিডিয়ানে করার অনুমতি পাওয়া গেছে। খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের মহাসচিব ক’দিন আগেই সকল নির্বাহী কমিটির সদস্যকে সভায় উপস্থিত থাকার জন্য নোটিস দিয়েছেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুসারে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাসহ বর্তমানে ৫৯২ জন নির্বাহী কমিটির সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া গঠনতন্ত্র বলেই বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এবং ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদাধিকার বলে নির্বাহী কমিটির সদস্য। এদিকে শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠক যাতে সফল না হয় সেজন্য সরকার বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, এই সভা করার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দলের নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আজিজুল বারী হেলাল, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু ও মশিউর রহমান বিপ্লবসহ বেশ ক’জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চার দিনে বিএনপির ২৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিজভী বলেন, এ ছাড়াও ঢাকা মহানগর নেতা শফিকুল ইসলাম রাসেল, মোঃ খলিল, রানী বাবু, আমির সর্দার, রোমান, লিংকন, মোঃ মুক্তার হোসেন, রহমত উল্লাহ দুলাল, তোজাম্মেল হক সোহাগ, রাহাত খান, জাকির হোসেন সজীব, আলমগীর, সৈয়দা দিলারা কলি, মনোয়ারা বেগম, সাহিদা, মোসামাৎ শামীমা, আবদুল্লাহ আল মামুন, সুমন, বি.বাড়িয়ার নেতা মোমিনুল হক, শরীফ হেসেন, মোঃ আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা তাদের মুক্তি দাবি করছি। নয়াপল্টন কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে এসেও বিএনপি নেতারা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। যাতে শনিবার বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক সফল ও সার্থক না হয়, এটাই সরকারের উদ্দেশ্য। রিজভী বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুতুল খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন ইচ্ছা গ্রেফতার করা হচ্ছে। বাসা থেকে, রাস্তা থেকে, হাটবাজার থেকে, দলীয় কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে প্রথমে অস্বীকার করার পর দরকাষাকষি শুরু হয়। বলা হয়, বেশি টাকা দিলে হালকা মামলা দেয়া হবে, আর কম টাকা দিলে কঠিন মামলা দেয়া হবে। অর্থ দিতে অক্ষম হলে শুরু হয় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র ও সুশাসনের নমুনা। রিজভী বলেন, বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে তার বহরের কর্মীদের ওপর পুলিশের হামলা ও ধরপাকড় চালানো হয়। এর পর থেকে নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার-নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারসহ বেশ ক’টি ভেন্যুতে নির্বাহী কমিটির সভা করতে চাইলে অনুমতি দেয়ার পরও সরকারের হস্তক্ষেপে তা বাতিল করে দেয়া হয়। পরে খিলক্ষেতের লা মেরিডিয়ান হোটেলে এ সভার জন্য ঠিক করে বিএনপি। নির্বাহী কমিটির বৈঠকের জন্য সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নির্বাহী কমিটির সদস্যদর মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। সকাল ১০টায় খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দিনব্যাপী এ সভা শুরু হবে। জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তার নির্দেশেই বিএনপি চলবে। যেভাবে তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সময় জেলে থেকেও দল পরিচালনা করতেন। তবে মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এ ক্ষেত্রে জরুরী পরিস্থিতিতে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র নেতা ড. মোশাররফ হোসেনকে যেন বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় খালেদা জিয়ার সে নির্দেশনাও থাকবে। আর এসব বিষয় অনুমোদন করে নেয়া হবে আজকের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে। খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়া হলে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হলে তা বাস্তবায়নের কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া খালেদা জিয়া নির্বাচনের বাইরে থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির করণীয় কি হবে তাও আজকের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কোন মহল যেন দলে ভাঙ্গন সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে খালেদা জিয়া সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেবেন। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বৈঠকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দলের করণীয় ঠিক করতে শনিবার নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে দলের করণীয় ও কৌশল ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দল ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দিনব্যাপী বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। অভিজ্ঞমহলের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে বিএনপি এখন কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি। ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে রায় হবে, এর মধ্য দিয়ে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর বিএনপিও ধরে নিয়েছে আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার জেল হয়ে যেতে পারে। আর তাহলে ওইদিন রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করার পাশাপাশি সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করে রাজপথ দখলের চেষ্টা চালাবে বিএনপি। আর এসব বিষয়ে আজকের নির্বাহী কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
×