ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাটেনি অগোছালো ভাব, আছে ধুলার উৎপাত

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কাটেনি অগোছালো ভাব, আছে ধুলার উৎপাত

মনোয়ার হোসেন ॥ ছুটির দিনে শিশু প্রহরে সকাল থেকেই খুলেছে বইমেলার দ্বার। খুদে পাঠকের আনাগোনায় মুখর হয়েছে শিশু কর্নার। বই কেনার সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য বটতলার সিসিমপুরে চত্বরে হালুম-টুকটুকির সঙ্গে কেটেছে মজার সময়। আর বিকেলে বইমেলায় ভিড় জমিয়েছেন বড়রা। তাই উপচেপড়া পাঠক আসেনি মেলায়। অন্যদিকে মেলার দ্বিতীয় দিন শুক্রবারেও কাটেনি অগোছালো ভাব। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ধুলোর উৎপাত সইতে হয়েছে পাঠক কিংবা দর্শনার্থীদের। ধুলো-বালির উৎপাত থেকে রেহাই পেতে অনেকেই ব্যবহার করেছেন নাসিকা বন্ধনী বা মাস্ক। মেলার মাঠে চোখে পড়েছে বালুর স্তূপ। সেই স্তূপের পাশেই আবার ছড়িয়ে আছে অসংখ্য অব্যবহৃত বাঁশ। এখনও পর্যন্ত চালু হয়নি মেলাকে নান্দনিক রূপ দেয়ার জন্য গড়ে তোলা ফোয়ারা। খুঁজে পাওয়া যায়নি দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থাও। গুণীজনদের নামাঙ্কিত মেলার চত্বরগুলো নির্ধারণ করা হয়নি। পাওয়া যায়নি স্টলের নির্দেশনাও। এছাড়া সুচারু স্টল বিন্যাসে সজ্জিত মেলার দ্বিতীয় দিনের ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে প্রথম দিনে বন্ধ থাকা স্টলগুলো সব খুলে গেছে। বিকেলে মেলা ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয় গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার অগোছালো ভাব নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। গ্রন্থমেলাকে আরও পরিচ্ছন্ন করতে জনবলের প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পানি ছিটানো হয়েছিল। আর শুক্রবার সকাল থেকেই মেলায় শুরু হওয়ায় পানি ছিটানো যায়নি। ফলের রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধুলোর উৎপাতও বেড়ছে। আশা করছি, রবিবার থেকে এই সমস্যাটি আর থাকবে না। ওইদিন দুপুরে মেলা শুরু হবে, সেক্ষেত্রে সকালে পানি ছিটানো হলে ধুলাবালিতে খুব একটা আক্রান্ত হবে না বিকেলের মেলা। আশা করছি, ফোয়ারাটিও দুই-একদিনের মধ্যে চালু হবে। মেলার চত্বরের নামফলকগুলোও খুব শীঘ্রই লেগে যাবে। আসলে এ ধরনের একটি বৃহৎ মেলা পরিচালনা করতে হলে আয়োজক বাংলা একাডেমির আরও লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে। নিরাপদ নামের একটি সংস্থা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিলেও এ বিষয়ে তারা ততটা দক্ষ নয়। লাভ কম হবেÑ এই বিবেচনায় বড় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর মেলা ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আগ্রহী হয় না। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল মেলার শিশু প্রহর। বাবা-মা কিংবা আপনজনের হাতটি ধরে শিশুরা মনের আনন্দে ঘুরেছে শিশু কর্নারসহ শিশুতোষ গ্রন্থ পাওয়া যায় এমন স্টলগুলোয়। ঘুরতে ঘুরতে সংগ্রহ করেছে পছন্দসহ নতুন বইটি। সেই সঙ্গে অল্পক্ষণের জন্য উদ্যান অংশের বটতলার সিসিমপুর চত্বরে হাজির হয়েছিল হালুম-টুকটুকি আর ইকরি। তাদের সঙ্গে হই-হুল্লোড় করে কেটেছে মজার সময়। কথা হয় তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জহিরুল হক জিদানের সঙ্গে। উচ্ছ্বসিত এ খুদে পাঠক বলে ওঠে, দারুণ লাগছে। হালুম আর টুকটুকিকে দেখেছি। এখন বই খুঁজছি। ভূতের গল্পের বই কিনবো। এই শিক্ষার্থীর বাবা প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ছুটির দিনে বাচ্চাকে নিয়ে চলে এলাম মেলায়। ওর ভাললাগা আমাকে অনেক আনন্দ দিচ্ছে। তাছাড়া শিশুদের মনন বিকাশে অমর একুশে গ্রন্থমেলার জুড়ি নেই। শীতের সকালে স্বজনের হাত ধরে কিংবা কোলেপিঠে চড়ে মেলা প্রাঙ্গণ চষে বেড়িয়েছে খুদে পাঠকরা। নিজেরাই পছন্দ করে কিনেছে নতুন বই। মেলা উপলক্ষে ফেনী থেকে সপরিবারে চলে এসেছে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী অবন্তী পাল। প্রথম উদ্দেশ্যটি ছিল প্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাক্ষাত পাওয়া। সেই আশা না মিটলেও সংগ্রহ করেছে জনপ্রিয় এই লেখকের ‘সাইক্লোন’ নামের বইটি। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের সামনে কথা হয় এর অন্যতম পরিচালক এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়কের সঙ্গে। তিনি বললেন, প্রথম শিশু প্রহর হিসেবে ভালই বিক্রি হয়েছে। আমাদের প্রকশানী থেকে নব আঙ্গিকে প্রকাশিত দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদারের ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ নজর কেড়েছে খুদে পাঠকের। এদিন শিশু চত্বরের সিসিমপুরের মঞ্চে উন্মোচিত হয়েছে খুদে লেখক অলীন বাসারের দুইটি বইয়ের মোড়ক। এর মধ্যে ‘পালোয়ানের হার’ ঘাস ফড়িং এবং ভূতের টিউশনি’ বের করেছে জ্ঞান বিতান। বই দুইটির মোড়ক উন্মোচন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। বেলার ৩টার পর থেকেই নানান বয়সী মানুষের দেখা মেলে মেলায়। তবে সেই ভিড়টি মেলা তুমুলভাবে জমে ওঠার মতো ছিল না। ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখাই ছিল বেশি। প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে জমবে মেলা। এ বিষয়ে ঐতিহ্যের প্রকাশক আরিফুর রহমান নাঈম বলেন, মেলার সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এবারের মেলা ভাল হবে। দ্বিতীয় দিন অনুযায়ী জমে না উঠলেও দর্শনার্থীদের উপস্থিতি আশাব্যঞ্জক। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আগামী শুক্রবার থেকে জমে উঠবে মেলা। যেটা কিনা বিগত বছরগুলো ১০ বা ফেব্রুয়ারির পর হতো। আজ শনিবার মেলার তৃতীয় দিন। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্রন্থমেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন বই ॥ মেলার দ্বিতীয় দিনে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এসেছে ৫৪টি নতুন বই। এর মধ্যে সময় প্রকাশন এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘এভিনা’ সময়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘সঙ্কট ও সুযোগ’ সময়, পিয়াস মজিদের ‘নাচ মারবেল ও গোধূলি’ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স, মোস্তফা কামালের ‘চন্দ্রমুখীর সুইসাইড নোট’ অন্যপ্রকাশ, হারুন হাবীবের ‘গণমাধ্যম ১৯৭১ : বিশ্ব সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধ’ অন্যপ্রকাশ, সৈয়দ শামসুল হকের ‘উৎকট তন্দ্রার নিচে’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘সাইক্লোন’ তা¤্রলিপি, পিয়াস মজিদের ‘পড়ার টেবিল থেকে’ ছায়াবিথী। মেলামঞ্চের আয়োজন ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শহিদ নূতন চন্দ্র সিংহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সজিব কুমার ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মহীবুল আজিজ, প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ এবং রাশেদ রউফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। প্রাবন্ধিক বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থান, চিকিৎসা সেবার বিকাশ ও নারীশিক্ষায় অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের উদ্যোগ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ভালভাবে নিতে পারেনি। সর্বোপরি স্বাধীনতা আন্দোলনে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের কারণে অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও বাঙালী দোসরদের যৌথ আক্রমণ ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ তাদের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্রা। অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহ অর্থনৈতিক মুক্তি আনার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সংগ্রামে যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন বাঙালীর ইতিহাসে তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, শহিদ নূতন চন্দ্র সিংহ স্বশিক্ষিত একজন দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। বর্তমানে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিদেশে পাড়ি জমাবার বা দেশত্যাগ করার একটি প্রবণতা লক্ষণীয়। অথচ মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার মুহূর্তে নূতন চন্দ্র সিংহকে যখন দেশত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল তিনি বলেছিলেন ‘আমি এদেশের মাটি ছেড়ে কোথাও যাব না। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী, মিতা হক ও অণিমা রায়। আজকের অনুষ্ঠানসূচী ॥ আজ শনিবার মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শফিউল আলম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মোঃ মনিরুল ইসলাম, সরকার আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কাজী রফিকুল আলম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×