ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাখাইনে গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় সারাবিশ্বে তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাখাইনে গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় সারাবিশ্বে তোলপাড়

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাখাইনে পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় নতুন করে আন্তর্জাতিক চাপে পড়েছে মিয়ানমার। রাখাইনে এই গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে এখন তোলপাড় শুরু হয়েছে। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিও উঠেছে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র অনুসন্ধানে রাখাইনে নতুন পাঁচটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে এপি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তবে রাখাইনে এই গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় এখন নতুন করে চাপে পড়েছে মিয়ানমার। এর আগে রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক গণ আদালত। গত বছর ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা, কাচিনসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সরকার পরিচালিত গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য, বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিলের ভিত্তিতে ইতালির রোমভিত্তিক সংস্থা পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) গত ২২ সেপ্টেম্বর ওই রায় ঘোষণা করে বলেছিল, মিয়ানমার সরকারের ওপর জরুরী ভিত্তিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। ওই রায় ঘোষণার ফলে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক চাপেও পড়েছিল। এখন গত বৃহস্পতিবার রাখাইনে আবারও গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় নতুন করে চাপে পড়েছে মিয়ানমার। এই গণকবরের বিষয়ে শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, এটা প্রমাণ করে রাখাইনে জাতিসংঘের প্রবেশের অনুমতি প্রয়োজন। এখন আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি নেই। আমরা তা চাই। এমন খবর যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এখন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, মানবাধিকার হরণ ও লঙ্ঘনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে সহযোগিতাই আমাদের মূল লক্ষ্য। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় একটি তদন্তের মাধ্যমেই সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা সম্ভব। বিশ্বের জানা উচিত আসলেই সেখানে কী ঘটেছে। মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন মিয়ানমার সরকার রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ ও নিপীড়ন চালানোর কথা অস্বীকার করে আসছে। তবে এপির প্রতিবেদনে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে মিয়ানমারে নতুন পাঁচটি গণকবর চিহ্নিত হয়েছে। রাখাইনের গোদার পাইনের একই এলাকার ওই পাঁচ গণকবরে চার শতাধিক মানুষের মরদেহ থাকতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ২৪ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে নতুন গণকবরের সম্পর্কে নিশ্চিত হয় এপি। নিপীড়নের অভিযোগকারীদের কেউ কেউ নিজেদের দাবির পক্ষে সময় চিহ্নিত ভিডিও সরবরাহ করেছেন। পরে নির্দিষ্ট ওই অঞ্চলে গিয়ে অনুসন্ধানের চেষ্টা করলেও প্রবেশাধিকার না থাকায় ব্যর্থ হয় এপি। এপিকে দেয়া সাক্ষাতকারে রোহিঙ্গারা জানান, তারা প্রত্যেকেই গোদার পাইনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রবেশ পথের মূল রাস্তায় তিনটি গণকবর দেখেছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন, গ্রামের পার্বত্য এলাকার কবরস্থানের কাছে আরও বড় দুটি গণকবর রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সেনারা সেখানে রোহিঙ্গাদের একত্রিত করে হত্যা করেছে। এছাড়া গ্রামজুড়ে বেশকিছু ছোট ছোট গণকবর থাকার কথাও জানিয়েছেন তারা। খবরে বলা হয়েছে, গোদার পাইনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কতজন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এপির পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে গ্রামটি ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতারা এখন পর্যন্ত ৭৫ জনের মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তবে গ্রামবাসীদের আত্মীয়দের সাক্ষাতকার এবং গণকবর ও আশপাশে তাদের দেখতে পাওয়া মৃতদেহের সংখ্যা বিচার করে নিহতের সংখ্যা চার শ’র বেশি হতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো রাখাইনের ইনদিন গ্রামে দশ রোহিঙ্গাকে হত্যার স্বীকারোক্তি দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারও আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী হিন্দুদের দুটি গণকবর সাংবাদিকদের দেখিয়ে দাবি করেছিল সশস্ত্র রোহিঙ্গারা এসব হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
×