ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল ওয়াহহাব মিঞার পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আবদুল ওয়াহহাব মিঞার পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান বলে জানিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের একটি সূত্র। দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপীল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেয়ার পর এ পদত্যাগপত্র পাঠান আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। চলতি বছরের ১১ নবেম্বরে তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যায় আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ওই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে সূত্রটি জানায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি আরও জানায়, প্রধান বিচারপতির নিয়োগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠান। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে ওই পত্রটি গ্রহণ করা হয়। রাতে কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যম ওই পদত্যাগপত্রের অনুলিপি প্রকাশ করে। দেখা গেছে, সুপ্রীমকোর্টের প্যাডে পাঠানো ওই চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘ব্যক্তিগত কারণের’ কথা বলেছেন বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা। দুই বাক্যের চিঠিতে তিনি লিখেছেন, আমি নি¤œস্বাক্ষরকারী আমার অনিবার্য ব্যক্তিগত কারণবশত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারকের পদ হইতে এতদ্বারা পদত্যাগ করিলাম। অনুগ্রহপূর্বক আমার পদত্যাগপত্রখানা গ্রহণ করিয়া আমাকে বাধিত করিবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলে আপীল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতে রায় এসেছিল; ওই রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত জানিয়েছিলেন বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা। যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লাসহ অন্যান্য মামলার ফাঁসির রায়ের সময় একমাত্র বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার দ্বিমত পোষণ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ওয়াহ্হাব মিঞা। দুই বছর পর তার নিয়োগ স্থায়ী হয়। ২০১১ সালে আপীল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টে দুই বছর পরে যোগ দিলেও ২০১১ সালে আপীল বিভাগের বিচারক পদে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞার সঙ্গে একই দিন নিয়োগ পেয়েছিলেন। ২২তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে সরকারকে। দায়িত্বরত প্রধানবিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা মানবতাবিরোধী অপরাধের সকল মামলায় ভিন্নমত পোষণ করে পৃথক রায় দেয়ার কারণে তার প্রতি সরকারের সন্তুষ্টির অভাব ছিল। একই রূপে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিরুদ্ধে তার দেয়া রায় সরকারকে নানারূপ চিন্তা ভাবনার ভেতরে ফেলে। ৩১ জানুয়ারি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অবসরগ্রহণের কথা থাকলেও দুর্নীতি ও অর্থপাচারসহ ১১ অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিন মাস আগেই পদত্যাগ করেন। সিনহার পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। এরই মধ্যে সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা শুক্রবার রাতে পদত্যাগ করেন। সূত্র জানিয়েছে আগামী রবিবার থেকে তিনি আর আপীল বিভাগে বসবেন না। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পরপরই বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা সুপ্রীমকোর্টে তার দফতর থেকে যাবতীয় বই, কাগজপত্র এবং মালামাল বাসায় নিয়ে যান। জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ডিঙ্গিয়ে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হলে আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করবেন এমন একটি গুঞ্জন বেশ আগে থেকেই সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনের বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, কোন বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। আমাদের দেশে এর আগেও এরকম হয়েছে। জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি করা হয়নি। তিনি বলেন, এটি শুধু আমাদের দেশে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
×