ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত ॥ উৎকণ্ঠায় বাংলাদেশীরা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সৌদিতে প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র সঙ্কুচিত ॥ উৎকণ্ঠায় বাংলাদেশীরা

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে প্রবাসী কর্মীদের কাজের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত করা হয়েছে। দেশটিতে প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজ থেকে পর্যায়ক্রমে সরে যেতে হবে। সম্প্রতি সৌদি শ্রম মন্ত্রণালয় এমন ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণার পর কর্মীদের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সৌদি নাগরিকদের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করতেই প্রবাসী কর্মীদের ১২ ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখা হবে। এ ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশী কর্মীরা। ইতোমধ্যে সৌদিতে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের অনেক সঙ্কুচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশী কর্মীরা মনে করছেন, তাদের অনেককেই কাজ হারাতে হতে পারে। বর্তমানে হাজার হাজার কর্মী ১২ ধরনের কাজের বাইরে নতুন করে কাজ খুঁজছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরব গত কয়েক বছর ধরেই বাজেট ঘাটতিতে চলছে। বিদেশী কর্মীদের কয়েক ধরনের কাজ থেকে সরিয়ে তাদের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বেকার সমস্যা দূর করার জন্যই তারা মূলত এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না। কারণ দেশটিতে নানা ধরনের কাজ রয়েছে। ওই সব কাজে বাংলাদেশ থেকে তাদের বিপুলসংখ্যক কর্মী প্রতি বছরই নিতে হবে। সূত্র জানিয়েছে, নারী-পুরুষ, শিশুদের রেডিমেড সব কাপড়ের দোকান, ক্রোকারিজ সামগ্রীর দোকান, গাড়ির শোরুম, গাড়ির পার্টসের দোকান, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দোকান, হাসপাতাল, যন্ত্রপাতির দোকান, চকলেট বা মিষ্টান্নের দোকান, গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দোকান, চশমার দোকান, ঘড়ির দোকান, কার্পেট পাপোশ ও ফার্নিচারের দোকানে লাখ লাখ বাংলাদেশীরা কর্মরত রয়েছেন। এসব পেশায় বাংলাদেশী কর্মীদের চাকরির সীমাবদ্ধতা তৈরি করা হয়েছে। আগে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যবসা করতে পারতেন। এখন এই জায়গাটিও সঙ্কুচিত করা হয়েছে। সৌদি নাগরিকদের বেকারত্ব দূর করতে সৌদি কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ ঘোষণা দেয়ার পর হাজার হাজার বাংলাদেশী নতুন করে কাজ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এক কাজ হারানোর আগেই যাতে তারা কাজ পেয়ে যান এমন এক চিন্তা তাদের মাথায় কাজ করছে। বেকার হয়ে পড়লে বসে খাওয়ার মতো কোন অবস্থা বাংলাদেশী কর্মীদের নেই। বেশি দিন বেকার থাকলে খালি হাতে তাদের দেশে ফিরে আসতে হবে। দেশে ঋণ করে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা খরচ করে সৌদিতে গিয়ে যদি খরচের টাকাও তুলতে না পারেন তাহলে তারা দেশে ফিরে বিপদে পড়বেন। যাদের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে তারা নতুন চাকরি খুঁজতে মরিয়া হয়ে ছুটছেন। অস্থির সৌদি প্রশাসনের কারণেও শ্রম বাজারে এমনিতেই প্রভাব পড়েছে। গত বছরের শেষ দিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি জানিয়েছেন, বিদেশে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ১০ লাখ ৮ হাজার কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি পেয়েছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম এত বেশি সংখ্যক কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। এ হিসাব ২০১৬ সালের তুলনায় শতকরা ২৮ শতাংশ বেশি। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী নিয়োগ পেয়েছে সৌদি আরবে। এরপরেই জর্দান ও ওমানের স্থান। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য অভিবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশের মানুষই দেশের সম্পদ। তারা বিশ্বের ১৬৫টি দেশে শ্রম ঘাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন কর্মীরা। তাদের টাকায় দেশের অর্থনীতি প্রতিনিয়ত সুসংহত হচ্ছে। অভিবাসন খাতকে দেশের অন্যতম প্রধান খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ১০ লাখ ৮ হাজার কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৭ সালেই প্রথম এত বিপুলসংখ্যক কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। ২০১৮ সালে কর্মী নিয়োগের টার্গেট নেয়া হয়েছে ১২ লাখ। আমরা আশা করছি এ বছরও এই টার্গেট পূরণ হবে। সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার। মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৬৫টি দেশে আমরা কর্মী প্রেরণ করছি। এর মধ্যে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে সর্বাধিক পরিমাণ কর্মী প্রেরণ করেছি। এসব দেশ থেকেই সর্বাধিক পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়ে আসছি। নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে নারী কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। সৌদি আরবেই সর্বাধিক সংখ্যক নারী কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। তবে গৃহকর্মী ও গার্মেন্টস কর্মীর বাইরেও সেলসম্যান, কেয়ার গিভার, বেবি সিটারসহ অন্যান্য পেশায় নারী কর্মীরা আগ্রহ নিয়েই কাজ করছেন। ঢাকাসহ ২৬টি জেলায় বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের সেবা সহজ করার লক্ষ্যে ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রম বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ফলে এই ২৬টি জেলার কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট কার্যক্রমের জন্য ঢাকায় আসতে হয় না। তাদের বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতেও কোন সমস্যা হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এ সেবা নিশ্চিত করা হবে।
×