ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেন্ডার হয় না সাত বছর

যশোর হাসপাতালে রোগীর খাবার নিয়ে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 যশোর হাসপাতালে রোগীর খাবার নিয়ে  অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর খাদ্য সরবরাহে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত পরিমাণের কম এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছেন রোগীরা। এমনকী সপ্তাহে দুদিন খাসির মাংস দেয়ার কথা থাকলেও ব্রয়লার মুরগি ও রুই মাছের স্থলে সিলভার কার্প মাছ সরবরাহ করার কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন ঠিকাদার। আর হাসপাতালের কোন ওয়ার্ডে খাদ্যতালিকা না থাকায় এ নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্যও করতে পারেন না। উপরন্তু মামলার অজুহাতে দীর্ঘদিন একই ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করে আসছেন। হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, করোনারি কেয়ার ইউনিটের ২৮ শয্যাসহ মোট ২৭৮জন রোগীর জন্য সপ্তাহে দুদিন দু বেলা (দুপুর ও রাত) ভাতের সঙ্গে খাসির মাংস এবং বাকি পাঁচদিন রুই মাছ সরবরাহ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত ব্রয়লার মুরগি, সিলভার কার্প ও মৃগেল মাছ সরবরাহ করে যাচ্ছেন ঠিকাদার। অবশ্য মাসে দু-তিনদিন কাতলা মাছ সরবরাহ করা হয় বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি সোম ও শুক্রবার দু বেলা ব্রয়লার মুরগির ছোট্ট একটি টুকরা দেয়া হয়। দু বেলা সরবরাহ করা মাংসের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৭০ গ্রাম। অন্য পাঁচদিন সরবরাহ করা মাছের পরিমাণও খুব কম। সকালে ২০০ গ্রামের পরিবর্তে ১০০ গ্রাম পাউরুটি, দুটি শবরিকলার পরিবর্তে সাগরকলা, দুটি ডিমের পরিবর্তে একটি ডিম সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত কোন রোগীর জন্য লাল আটার রুটি এবং ভাত খেতে না পারা রোগীর জন্য গরুর দুধ দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোন দিনই তা দেয়া হয় না। মডেল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আজিজুল ইসলাম, লেবার ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন বীথি খাতুনসহ একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরবরাহকৃত খাবারের রান্নার মান এতই খারাপ যে, রোগীরা তো দূরের কথা, স্বজনরাও মুখে দিতে পারেন না। রোগীর স্বজন শফিকুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন, নুর আমিনসহ অনেকেই বলেন, খাদ্যের মান অত্যন্ত নিম্ন হওয়ায় অনেকেই এ খাবার নেন না। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খান। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খাবার পরিবেশনকারীরা নোংরা পাত্রে কিছু ভাত ও একটি বাটিতে সামান্য তরকারি এনে ওয়ার্ডের একপাশে দাঁড়ান। সেখান থেকে সবাইকে নিজ নিজ থালা-বাটিতে করে খাবার নিয়ে যেতে বলেন। দুস্থদের রিলিফ নেয়ার মতো করে রোগীর স্বজনরা তাদের কথামতো খাবার সংগ্রহ করেন। এটা খুবই অপমানজনক। হাসপাতালে প্রায় দু সপ্তাহ ধরে যাওয়া-আসা করে এমন চিত্রের প্রমাণও মিলেছে। একজন খাবার পরিবেশনকারী অকপটে বলেন, আমাদের যা এনে দেয়া হয়, তাই রান্না করে পরিবেশন করে থাকি। রান্নাঘরের দায়িত্বে থাকা স্টুয়ার্ড (পাচক) শাহজাহান জানান, প্রতিদিন ১২৫ টাকার মধ্যে রোগীপ্রতি খাবারের স্কেল তৈরি করে নেয়া হয়। ওই টাকার মধ্যেই পরিমাণমতো রোগীদের সরবরাহ করা হয়। তবে তার দাবি, কোনদিন রোগীদের সিলভারকার্প মাছ দেয়া হয় না। যদি কেউ এমন অভিযোগ করে থাকে, সেটা মিথ্যা। তবে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাফিজুর রহমানের পরিচালক হাফিজুর রহমান শিলু বলেন, খাসির মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকায় রোগীদের মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগির মাংস সরবরাহ করা হয়। আর রুই-কাতলা-মৃগেলের মধ্যে যখন যে মাছ বাজারে পাওয়া যায়, তখন সেই মাছ দেয়া হয়। তার যুক্তি হলো, ২৭৮ রোগীর খাদ্য সরবরাহের বাজেট থাকলেও বাড়তি রোগীদের খাবার দিতে হয়। কেননা থালা নিয়ে এলে কাউকে খাবার না দিয়ে ফেরত দেয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য খাবারের পরিমাণ সামান্য কম হতেও পারে। এতদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠান খাবার সরবরাহের ঠিকাদারি কীভাবে পেল জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দরপত্রে অনিয়ম করায় তিনি আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই থেকে আর কোন দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। তবে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক রুহুল আলম জানান, আদালতে মামলা চলার কারণে ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে খাদ্য সরবরাহের কোন দরপত্র হয়নি। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম কামরুল ইসলাম বেনু বলেন, ওয়ার্ডে খাদ্য সরবরাহের তালিকা ঝোলানো না থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আর রোগীদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেব।
×