ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাঁচামাল হিসেবে পাহাড়ী ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার

লালমনিরহাটে ইটভাঁটির কবলে কৃষি জমি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

লালমনিরহাটে ইটভাঁটির কবলে কৃষি জমি

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২ ফেব্রুয়ারি ॥ লালমনিরহাটে প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৯ কোটি পিস ইট। এবার ইট উৎপাদনের টার্গেটে প্রায় ১ কোটি সিএফটি মাটি পোড়ানো হচ্ছে। এর সিংহভাগ মাটি আসছে কৃষি জমি থেকে। কৃষি জমির মূল্যবান অংশ ‘টপ সয়েল’ হিসেবে পরিচিত এ মাটি ইটভাঁটিগুলোর পেটে গেলেও এ নিয়ে তেমন তাপ-উত্তাপ নেই কোন প্রতিষ্ঠানের। ফলে কৃষি জমির টপ সয়েলের বিনাশ করা হলে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে। অথচ ইটভাঁটির সর্বশেষ আইন অনুযায়ী কৃষি জমির মাটি ভাঁটিতে ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদফতর, কৃষক ও কৃষি বিভাগ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, ইটভাঁটি মালিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে।একটি সূত্র মতে, জেলায় ২৭টি ইটভাঁটি রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি ইটভাঁটি পরিবেশ অধিদফতর বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও তা চালু রাখা হয়েছে। ‘কৃষিতে ইটভাঁটির প্রভাব’ বিষয়ে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর প্রতিবেদন প্রকাশ হলে ক্ষতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন সম্ভব হবে। কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ নিয়ে এই উদ্বেগ সম্পর্কে ধারণা নেই কৃষকদের। তারা সামান্য অর্থের প্রয়োজনে বা কোন প্রয়োজন ছাড়াই মাটির উপরিভাগ তুলে দিচ্ছেন ভাঁটি মালিকদের কাছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল ধারণা থেকেও তারা মাটি বিক্রি করছেন। ইটভাঁটির ‘টপ সয়েল’ বিক্রি নিয়ে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে নানা চিত্র উঠে এসেছে। কোথাও কৃষককে বোঝানো হয়, তোমার জমি উঁচু, সেচের পানি নেমে যাবে, বোরো আবাদ হবে না। তাই উপর থেকে মাটি ভাঁটিতে বিক্রি করে দাও। কোথাও বলা হয়, উপরের মাটিতে ভাইরাস-ময়লা। উপরের মাটি বিক্রি করে নিচের ‘ভাল’ মাটিতে চাষ করলে ভাল ফসল হবে। এভাবেই নানাভাবে কৃষককে বিভ্রান্ত ও প্ররোচিত করা হয় ‘টপ সয়েল’ বিক্রির জন্য। আর এ কাজে সক্রিয় রয়েছে মাটি সরবরাহকারী কন্টাক্টররা। টপ সয়েল দিলে সে জমিতে প্রায় ২০ বছর কোন ভাল ফসল হয় না। স্থাপনে সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। ইটভাঁটি নদী তীরবর্তী পরিত্যক্ত নিচু জমিতে স্থাপন করতে হবে। যা এলজিইডির পাকা সড়ক হতে কমপক্ষে আড়াই কিলোমিটার দূরে হতে হবে। আবার স্কুল ও লোকালয় হতে দূরে হতে হবে। জেলায় ইটভাঁটি স্থাপনে এই সব নিয়ম মানা হয়নি। পৌরসভায় আর্দশ মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন লোকালয়ে ইটভাঁটি স্থাপন করা হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, জমির উপরের মাটিতে ময়লা-ভাইরাস থাকে। এ জন্য তিনি ওপর থেকে মাটি ইটভাঁটিতে বিক্রি করে দিয়েছেন। একই ধরনের বক্তব্য ওই উপজেলার নাওদাবাস গ্রামের কৃষক আশরাফ হোসেনেরও। কৃষি কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম মন্ডল জানান, জমির উর্বরতা শক্তি ১৫-২০ ইঞ্চির মধ্যে থাকে। এই অংশে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। এই উপাদান গাছকে ঘন সবুজ রাখে, শিকড় বিস্তারে সহায়তা করে, সময় মতো ফুল ফোঁটায় ও ফসল পাকায়, ফসলের গুণগত মান বাড়ায়, ডাল ও ফসলের ফলন বাড়ায়, শস্যের দানা পুষ্ট করে এবং উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই ওপর থেকে মাটি সরিয়ে ফেলায় উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় সেই জমির ওপর বিভিন্ন পদার্থ জমে উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে শুরু করে। এভাবে আগের মতো উর্বরতা শক্তি ফিরে আসতে কমপক্ষে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আর এভাবে মাটি বিক্রি অব্যাহত থাকলে এক সময় ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
×