ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অননুমোদিত স্কুল-মাদ্রাসা

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অননুমোদিত স্কুল-মাদ্রাসা

অনুমতি ব্যতিরেকে সারাদেশে যেসব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা চলছে সেগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম অনতিবিলম্বে কেন বন্ধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের প্রতি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে ৪ সপ্তাহের মধ্যে। উল্লেখ্য, সারাদেশে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ও স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও অসংখ্য অননুমোদিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, কিন্ডার গার্ডেন স্কুল ইত্যাদি রয়েছে। শিক্ষাকে নিছক পুঁজি করে প্রায় অবাধে ব্যবসা করে যাচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী পর্যন্ত নেই। নিয়মিত বেতন-ভাতার বালাইও নেই। অথচ অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রায় জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা হয় নিয়মিত। না দিতে পারলে পাঠদান বন্ধ। ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির খবরও আছে। তদুপরি সরকার কর্তৃক বিতরণকৃত বিনামূল্যের বই চোরাইপথে অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে বিক্রির অভিযোগও আছে এ সব অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অধিকন্তু সরকারের ওপর বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে কথায় কথায় আন্দোলন ও অনশনÑ এমপিওভুক্তিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের দাবিতে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং বলেছেন, রংপুর নিবাসী তার এক আত্মীয় মাত্র দেড় শ’ শিক্ষার্থীর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আদালতের রুল অনুযায়ী এসব অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াই উত্তম। প্রাথমিক শিক্ষায় এবার ফল বিপর্যয় ঘটেছে। এর আগে প্রতি বছরই পাসের হারের ক্ষেত্রে মাইলফলক অতিক্রম করছিল পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম। পাসের হার ও জিপিএ-৫সহ প্রায় সব সূচকেই এবার খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণীর জেএসসিতে পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে ১০ শতাংশ। আর পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে পাসের হার কমেছে ৩ শতাংশ। অবনতি ঘটেছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও। মোট কথা, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে ফেলের সংখ্যা। অতীতের মতো এবারও বলা হচ্ছে ইংরেজী ও গণিতে খারাপ করায় ঘটেছে ফল বিপর্যয়। উল্লেখ্য, এ দুটো বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব আছে সারাদেশে। এসবের জন্য ভুয়া ও অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম দায়ী নয়। প্রধানমন্ত্রী ফল হাতে পেয়ে সারাদেশে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য নিবিড় তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি। সত্য বটে, এক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যথেষ্ট অবহেলা ও ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষকরা ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন কি?Ñ উল্টো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিয়মিত বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সব শিক্ষকের এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘটসহ আমরণ অনশনে নেমেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বান সত্ত্বে¡ও ঘরে ফিরে না গিয়ে তারা চালিয়ে গেছেন কর্মসূচী। ভুয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেলে এহেন দুরবস্থার অবসান হতে পারে। দেশে শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক চিন্তকের অভাব আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত এবং সমৃদ্ধ একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নেও সমস্যা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেন শিক্ষার সমন্বয় সাধন ও আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক ও জরুরী। শিশুদের জন্য একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে এবং শুরুতেই তা হোঁচট খেতে বাধ্য। তাতে ভুয়াদের দৌরাত্ম্যও বাড়বে। সে অবস্থায় ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তর বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে ধাপে ধাপে। অবকাঠামো বিনির্মাণসহ শিক্ষকদের নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তদনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক, যা হবে আধুনিক ও যুগপোযোগী। একাধিক মন্ত্রণালয় এ অধিদফতরের পরিবর্তে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থা আনতে হবে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বর্তমানে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আশানুরূপ নয়। নানামুখী ও একমুখী শিক্ষা প্রবর্তনে আমলাতন্ত্রও প্রতিবন্ধক। পাঠ্যপুস্তকের প্রকাশকগোষ্ঠী এবং কোচিং ও গাইড বই ব্যবসায়ীরাও কম অন্তরায় নয়। দীর্ঘদিন থেকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এর পেছনে কাজ করছে। শিক্ষার মান উন্নয়নসহ যথাযথ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে এ সবই দূর করতে হবে। ভুয়া ও অননুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকার আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে সক্রিয় এবং কঠোর হবে বলেই প্রত্যাশা।
×