নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১ ফেব্রুয়ারি ॥ মধুখালীর মনোরম ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বনাঞ্চলটির এখন মালিক কে? অন্তত ৬০ বছর আগে মধুখালী লেকের দুইপাড়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ প্রজাতির ছইলা-কেওড়া-বাইনসহ গাছগুলো এখন প্রাচীন। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর বন বিভাগের কর্মীরা এই গুরুত্বপূর্ণ বনটি দেখাশোনা থেকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। হঠাৎ করে দুই দিন আগে বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুণ-অর-রশীদ লিখিতভাবে ঘোষণা দিলেন এই বাগানের মালিক তারা নন। তাই প্রকৃতির সৌন্দর্যম-িত বন ছাড়াও মধুখালীর দুই দিকের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সিডরসহ দুর্যোগকালীন প্রাথমিকভাবে সবুজ দেয়াল খ্যাত বনাঞ্চলটি এখন অরক্ষিত হয়ে গেল। এটির নিয়ন্ত্রণ সরকারীভাবে না থাকলে বনটি বনদস্যুদের কারণে বিরানভূমি হয়ে যাবে। আর সরকার হারাবে কোটি কোটি টাকার বনজ সম্পদ, এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মধুখালী লেকের দুইপাড়ের বেড়িবাঁধের ভেতরের মানুষ যেমন অনিরাপদ হয়ে যাবে; তেমনি সম্পদও প্রাকৃতিক ঝুঁকির কবলে পড়বে।
সম্প্রতি পূর্ব-মধুখালী এলাকায় দুই শতাধিক গাছ কাটার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে এ বক্তব্য দেয় বন বিভাগ। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ বনাঞ্চলটির রক্ষণাবেক্ষণ করবে কারা। এমনিতেই নদীর দুই পাড়ে জেগে ওঠা চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনের দেখভাল বনবিভাগ করে আসছে। এখন বন বিভাগ এর দায় নিচ্ছে না। অথচ এই বনাঞ্চলের গাছ কাটার কারণে বহু মানুষসহ বনদস্যুদের নামে বনবিভাগ মামলা পর্যন্ত করেছে। নিলামে বহু গাছ বিক্রি করে রাজস্ব আদায় করেছে। আর এখন বলছে এই বনাঞ্চল তাদের নয়। সরকার যেখানে চরসহ বিভিন্ন নদীর পাড়ে বনায়ন করার নতুন নতুন পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধের বাইরে সৃজন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগান। বন বিভাগের এমন উদাসিনতার খবরটি এলাকার সচেতন মানুষকে হতবাক করেছে। প্রবীণ বাসীন্দা আব্দুল জব্বার জানান, বন বিভাগসহ তারা পাহারা দিয়েও গাছ রক্ষা করা যাচ্ছে না। আর এখন তো যে যার মতো করে গাছ কাটতে শুরু করবে। একই মন্তব্য আবুল কালামের। তবে বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন-অর-রশীদ জানালেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের রিভার সাইটের অধিগ্রহণ করা জমির ম্যানগ্রোভ গাছপালা তারা রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। আর বাকিটা ভূমি প্রশাসনের।
বনাঞ্চলটি দেখলে যে কারও মনপ্রাণ জুড়িয়ে যায়। মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া লেকটির দুইদিকে মনোরম সৌন্দর্যে ঘেরা দীর্ঘ এ বনাঞ্চল। বনটির অধিকাংশ গাছ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির।
এ বিষয়ে কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, কৃষি জমিছাড়া কাউকে বন্দোবস্ত দেয়ার সুযোগ নেই। কাউকে এমন জমি বন্দোবস্ত দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর বনাঞ্চল সরকারী খাস জমিতে থাকলে অবশ্যই তা যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে নেয়া হবে।