ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কানেরিয়া-মেন্ডিস-এ্যামব্রোসকে ছাড়িয়ে আজমল-হরভজন-ব্রেট লিকে ছোঁয়ার সুযোগ

দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে মিরাজ

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

দ্রুততম ৫০ উইকেটের রেকর্ডের দ্বারপ্রান্তে মিরাজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দেশের ষষ্ঠ বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ উইকেট শিকারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ১০ টেস্টে ৪৩ উইকেট ঝুলিতে পোরা এ ডানহাতি অফস্পিনার বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়দিন শ্রীলঙ্কার পতন ঘটা একমাত্র উইকেট শিকার করেন। ফলে তার নামের সঙ্গে এখন ৪৪ টেস্ট উইকেট। বুধবার শুরু হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিন বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছে। পুরোপুরি ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে লঙ্কান স্পিনাররা খুব বেশি সুবিধা পাননি। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয়দিনেই বল হাতে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন ২০ বছর বয়সী মিরাজ। দিনের শুরুতেই উইকেট তুলে নিলেও পরে আর সফল হননি। দুই ইনিংসে আর ৬ উইকেট নিতে পারলেই দেশের পক্ষে সবচেয়ে কম টেস্টে ৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়বেন তিনি। তবে সেটা করে দেখানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে আপাতত সাগরিকার উইকেটে ব্যাটসম্যানদের দৌরাত্ম্য দেখে তেমনটাই মনে হচ্ছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট যাত্রা শুরু করেছিলেন মিরাজ। সবাইকে চমকে দিয়ে ২ টেস্টের ওই সিরিজে রেকর্ড ১৯ উইকেট শিকার করেন। সেবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উভয় ইনিংসে ৬টি করে উইকেট নেন। এক টেস্ট সিরিজে দেশের পক্ষে সেটাই ছিল কোন বোলারের সর্বাধিক উইকেট নেয়ার ঘটনা। তিনি অভিষেক সিরিজেই ছাড়িয়ে যান এনামুল হক জুনিয়র ও সাকিব আল হাসানের গড়া রেকর্ডকে। এনামুল ও সাকিব দু’জনই এক সিরিজে ১৮ উইকেট দখলের কীর্তি গড়েছিলেন। এরপর অবশ্য একই বিস্ময় আর দেখাতে পারেননি। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ও সর্বশেষবার দুই ইনিংসে মাত্র ৩ উইকেট নিতে পেরেছিলেন। তবে এবার স্পিন সহায়ক চট্টগ্রামের উইকেটে তিনি ঝলসে উঠবেন এমনটাই প্রত্যাশা দেশের ক্রিকেট ভক্তদের। আর তাহলেই দেশের পক্ষে দ্রুততম ৫০ টেস্ট উইকেটের মালিক হওয়া তার জন্য কঠিন হবে না। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ১০০ টেস্ট উইকেটের মালিক মোহাম্মদ রফিকের ৫০ উইকেট ছুঁতে লেগেছিল ১৩ টেস্ট। তিনিই এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ৫০ টেস্ট উইকেট শিকারের ক্ষেত্রে। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৮৮ টেস্ট উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। তবে তারও ১৫ টেস্ট লেগেছিল ৫০ পূর্ণ করতে। ৫৪ টেস্ট উইকেটের মালিক তাইজুল ইসলামের লেগেছে ১৬ টেস্ট। ৭৮ টেস্ট উইকেটের মালিক মাশরাফি বিন মতুর্জা ৫০ উইকেট শিকার করতে খেলেছিলেন ২০ টেস্ট। ৭২ উইকেট শিকারি পেসার শাহাদাত হোসেনের পঞ্চাশ ছুঁতে লেগেছিল ২১ টেস্ট। বাংলাদেশের পক্ষে ৫০ টেস্ট উইকেট এ কয়জনেরই। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে সে পথে এগিয়ে চলেছেন মিরাজ বেশ দ্রুত বেগেই। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম ২ টেস্টে ১৯ উইকেট নিলেও বাকি ৮ টেস্টে মাত্র ২৪ উইকেট নিতে পেরেছেন। শুরুর সেই চমকটা আর ধরে রাখতে পারেননি। এর কারণ ৬ টেস্টই খেলেছেন দেশের বাইরে অপরিচিত পরিবেশে। মাত্র ২ টেস্ট খেলার সুযোগ হয়েছে দেশের মাটিতে স্পিন সহায়ক এবং পরিচিত পরিবেশে। এরপরও দেশের পক্ষে সবচেয়ে কম ম্যাচে ৫০ উইকেট শিকারের সুযোগটা এসে গেছে মিরাজের। সাগরিকার উইকেট শেষ দু’দিন স্পিনারদের পক্ষে আসবে এমনটাই বলা হয়েছে। তাই সুযোগটা কাজে লাগাতেই পারেন এ তরুণ অফস্পিনার। মাত্র ৬ টেস্টে ৫০ উইকেট শিকার করে দ্রুততম রেকর্ডটি অস্ট্রেলিয়ান পেসার চার্লি টার্নারের। ১৮৮৭ সালেই তিনি ওই বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন যা ১৩১ বছর ধরে ভাঙ্গতে পারেননি কেউ। ইংলিশ পেসার টম রিচার্ডসন ১৮৯৩ সালে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ভারনন ফিল্যান্ডার ২০১১ সালে ৫০ উইকেট শিকার করে ওই রেকর্ড ভাঙ্গার কাছাকাছি গিয়েও পারেননি। তাদের লেগেছিল ৭ টেস্ট। এভাবে ক্রিকেট ইতিহাসে ৮ টেস্টে ৪ জন বোলার, ৯ টেস্টে ১২ জন বোলার, ১০ টেস্টে ২০ জন বোলার, ১১ টেস্টে ২২ জন বোলার তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫০তম উইকেট শিকার করেছেন। ১২ টেস্টেই ৫০ উইকেট দখল করার তালিকায় আছেন ৩২ জন বোলার। মিরাজ এই টেস্টে ৫০ উইকেট পূর্ণ করতে পারলে বিশ্বের অনেক কিংবদন্তি বোলারকেই ছাড়িয়ে যাবেন। সে তালিকায় আছেন জিম লেকার, স্যার এ্যালেক বেডসার, চন্দ্রশেখর, কার্টলি এ্যামব্রোস, ম্যাথু হগার্ড, এ্যাঙ্গাস ফ্রেজার, দানিশ কানেরিয়া, শেন বন্ড, অজন্তা মেন্ডিসরা। আর ছুঁয়ে ফেলবেন জেফ থমসন, নরেন্দ্র হিরওয়ানি, ইয়ান বিশপ, এ্যালান ডোনাল্ড, ডোমিনিক কর্ক, হরভজন সিং, সাঈদ আজমল, ব্রেট লি ও লেন প্যাসকোদের।
×