ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জবাব ভালই দিচ্ছে লঙ্কানরা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

জবাব ভালই দিচ্ছে লঙ্কানরা

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা বিশেষ করে প্রথমদিন মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম ও দ্বিতীয়দিন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি অসাধারণ ব্যাটিং করলেন। এত সুন্দর ব্যাটিং করেও শক্ত জবাবই পাচ্ছে বাংলাদেশ। যে দুই ক্রিকেটার বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের টেস্ট দলের তালিকা থেকেও বাদ পড়ছিলেন সেই দুই ক্রিকেটারই কিনা তাকে দেখিয়ে দিলেন। নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিলেন। একজন মুমিনুল হক। যিনি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। তবে ১৭৬ রানের ইনিংস খেললেন। আরেকজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি ৮৩ রানে অপরাজিত থেকেছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনে মুমিনুল দ্যুতি দেখা গেছে। দ্বিতীয়দিনে মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং ঝলকেই তো বাংলাদেশ ৫১৩ রানের বিশাল স্কোর গড়তে পেরেছে। অবশ্য এ স্কোর গড়েও শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলা যায়নি। দ্বিতীয়দিনে শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে শক্ত জবাবই পাচ্ছে মাহমুদুল্লাহবাহিনী। ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অপরাজিত ১০৪ ও কুশল মেন্ডিসের অপরাজিত ৮৩ রানে ১ উইকেট হারিয়ে ১৮৭ রান করে ফেলেছে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য ফিল্ডারদের জন্যই এ জবাবটি পেয়েছে বাংলাদেশ। মেন্ডিস যে এত রান করেছেন তা সম্ভবই ছিল না। সেই সঙ্গে ধনঞ্জয়া ও মেন্ডিস মিলে যে ১৮৭ রানের জুটি গড়েছেন তাও করতে পারতেন না। যদি মেন্ডিসের ক্যাচ একবার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আরেকবার ইমরুল কায়েস না ছাড়তেন। এখনও শ্রীলঙ্কা ৩২৬ রানে পিছিয়ে রয়েছে। টেস্টের দুইদিন শেষ হয়েছে। দুইদিনে দুই দলই যেন চমক দেখাচ্ছে। প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয়দিনটিও বাংলাদেশেরই হতে পারত। যদি মেন্ডিসকে আউট করা যেত। প্রথমদিনে বাংলাদেশ ৩৭৪ রান করেছিল। দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখায়। প্রথমদিনে দেশের সেরা স্কোর দাঁড় হয়। মুমিনুল ১৭৫ রানে ও মাহমুদুল্লাহ ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। দ্বিতীয়দিন মুমিনুল খুব বেশি এগিয়ে যেতে পারেননি। ১ রান যোগ করতেই সাজঘরে ফেরেন। তবে মাহমুদুল্লাহ হাল ছাড়েননি। তিনি এগিয়ে গেছেন। যদিও তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি বাকিরা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৮), মেহেদী হাসান মিরাজ (২০), অভিষেক টেস্টে ব্যাট হাতে নামা সানজামুল ইসলাম (২৪) চেষ্টা করেছেন। কিন্তু উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেননি। এরপর তাইজুল ইসলাম (১) ও মুস্তাফিজুর রহমান (৮) আউট হলে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়। তবে মাহমুদুল্লাহ শেষ পর্যন্ত উইকেট আঁকড়ে থাকেন। ১৩৪ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৮৩ রান করেন। দ্বিতীয়দিন তার এমন ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশ ৫০০ রান ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয়দিন আরও ১৩৯ রান যোগ করেছে বাংলাদেশ। এর আগে ছয়বার ৫০০ রানের ওপরে স্কোরবোর্ডে যোগ করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চট্টগ্রামেই তিনবার ৫০০ রানের ওপরে করল বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০১ ও ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫০৩ রান করে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ৫০০ ছাড়ানো স্কোর করে দেখাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে টেস্টে ৬৩৮ রানের সর্বোচ্চ স্কোর ২০১৩ সালে গল টেস্টে করেছিল, সেটি বাংলাদেশের এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। এবার দেশের মাটিতে যে এমন স্কোর করা গেছে দ্বিতীয়দিন মাহমুদুল্লাহর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই। যিনি আবার এ ম্যাচের অধিনায়কও। টেস্টে ২ হাজার রানের মাইলফলকও করে দেখালেন মাহমুদুল্লাহ। শুধু তাই নয়। হাতুরাসিংহেকে একটা জবাবও তো দিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর নিজেদের ইতিহাসের শততম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সেই টেস্টে মুমিনুলের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহকেও বাদের তালিকায় রেখেছিলেন সাবেক কোচ হাতুরাসিংহে। এরপর মুমিনুলকে টেস্ট দল থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেও পারেননি। তবে মাহমুদুল্লাহকে টেস্ট দল থেকে দূরেই রাখেন। মুমিনুল তো প্রথমদিনেই সেই জবাবটা দিয়েছেন। দ্বিতীয়দিন দিলেন মাহমুদুল্লাহ। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের যে কি মূল্য তা যেন বুঝিয়ে দিলেন। বাংলাদেশ এত বড় স্কোর করার পর মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কা চাপেই পড়বে। কিন্তু ধনঞ্জয়া ও মেন্ডিস মিলে সেই চাপ দূর করে দেন যেন। শুরুতেই রানের খাতা খোলার আগেই দিমুথ করুনারতেœকে হারায় শ্রীলঙ্কা। মেহেদী হাসান মিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করে করুনারতেœকে সাজঘরে পাঠান। আরেকটি বাংলাদেশের দিন মিলছে মনে করা হয়। সেই সুযোগ মিলেও গিয়েছিল। কিন্তু মেন্ডিসকে দুইবার আউট করার সুযোগ কাজে লাগাতে না পারাতেই সব ভেস্তে যায়। ধনঞ্জয়া ও মেন্ডিস মিলে ১৮৭ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। যা আবার শ্রীলঙ্কারই দ্বিতীয়দিন শেষের স্কোর। ধনঞ্জয়া দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ১২৭ বলে ১৫ চারে অপরাজিত ১০৪ রান করেন। মাত্র ১২ টেস্টেই চতুর্থ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। শুরুতে একবার ও হাফ সেঞ্চুরির পর আরেকবার মেন্ডিস ‘নতুন জীবন’ পেয়ে ১৫২ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৮৩ রান করেন। দুইজন মিলেই শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নিয়ে চলছেন। আজ তৃতীয়দিনের খেলা এই দুই ব্যাটসম্যানই শুরু করবেন। যত দ্রুত সম্ভব এই দুইজনকে আজ আউট করতে হবে। বোলারদের লক্ষ্যও তাই। তা না করা গেলে ম্যাচ থেকে ফল বের করে নেয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে। আজকের দিনটিতে যদি শ্রীলঙ্কা টিকে যায় তাহলে ম্যাচ ড্র’র সম্ভাবনা জেগে যাবে। এত দুর্দান্ত ব্যাটিং করল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। রানও অনেক করা গেছে। কিন্তু ক্যাচ মিসের কারণে শক্ত জবাব পাচ্ছে বাংলাদেশ।
×