ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন্ পথে... অধ্যাপক জহুরুল আলম

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন্ পথে... অধ্যাপক জহুরুল আলম

(গত বুধবারের পর) প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এবং এর সদস্য দুর্বল নারী-পুরুষকে অতি অল্পমূল্যে কেনা যায়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগানো শুরু করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী, চোরাচালানি ও মাফিয়ার দল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পরাজিত শক্তি পাকিস্তানও সক্রিয় হয়ে ওঠে এ অঞ্চলে। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের নামে পাকিস্তানের আইএসআই ও তাদের এ দেশীয় এজেন্টদের সহায়তায় গড়ে ওঠে আরসা নামক সংগঠন। এ সংগঠনটি জনগণকে সম্পৃক্ত করে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লিপ্ত না হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে লিপ্ত হতে থাকে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ হতে থাকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মাধ্যমে। সব কর্মকা-ই রোহিঙ্গাদের কল্যাণে বলে প্রচারণা চালানো হলেও এ যাবতকালের তাদের সকল কর্মকা-ের ফলাফল হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া এবং তাদের দেশত্যগের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছানো যে, খুব তাড়াতাড়ি কোন বাস্তব ভূমিকা গ্রহণ না করলে এক সময় যে আরাকান রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ছিল তা ইতিহাসের পাতা থেকেও বিস্মৃত হয়ে যাবে। নির্যাতনের শিকার দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাস করছে। এর মধ্যে প্রায় ছয় লাখ এসেছে ২০১৬ সালের ২৫ আগস্টের পর। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে এসে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্নভাবে সমাজের সঙ্গে মিশে গেছে বলে ধারণা করা হয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ বহুবিধ কারণে। বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা ও সমাজ ব্যবস্থাপনায় এই বিপুলসংখ্যক উদ্বাস্তুর আগমন, বসবাস ও সমাজের সঙ্গে সহজেই মিশে যাওয়ার প্রক্রিয়া এক বিশাল নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে যদি এর আশু সমাধান না হয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা আগমনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে পুশব্যাক করার নীতি গ্রহণ করেছিল স্বাভাবিক নিয়মেই। যে কোন সার্বভৌম রাষ্ট্রই তার সীমান্তে বেআইনী চলাচল প্রতিহত করে। কিন্তু যখন বিষয়টি একটি বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হলো তখন মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এ ভূমিকা, বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবাদী ও শান্তিকামী ভূমিকা সারা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের শর্ত হিসাবে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন সেই প্রস্তাবের আলোকে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারে, যেমনÑ ১. অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা; ২. অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা; ৩. জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় (ংধভব ুড়হবং) গড়ে তোলা; ৪. রাখাইন রাজ্য হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা; ৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত- এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করা হয়েছে আমাদের দেশেরই কিছু রাজনৈতিক দল ও সুশীলদের পক্ষ হতে। অথচ এরা এখন পর্যন্ত এর চেয়ে উত্তম আর কোন প্রস্তাবও দিতে পারেননি। যেহেতু রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি বহু পুরনো চলমান বিষয় এবং মিয়ানমারের কোন সরকারই রোহিঙ্গাদের অধিকারের বিষয়ে কখনই কোন ইতিবাচক ভূমিকা দেখায়নি, এবং বিশেষত সুচির সরকারই রোহিঙ্গা নির্যাতনের নৃশংস কর্মকা-গুলো ঘটিয়েছে, সেহেতু ১৯১৬ সাল থেকেই আন্তর্জাতিক মহল এটাকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কিছু কাজ শুরু করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের মিয়ানমার সফর এবং পরবর্তীতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ। এই প্রতিবেদনের মূল বিষয়ও ছিল রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত। দুঃখের বিষয় হচ্ছেÑ ২৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়, তাতে সচেতনভাবেই রোহিঙ্গা শব্দটি পরিহার করা হয়। এটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই প্রতিবেদনের মূল দুর্বলতা। একটি জনগোষ্ঠীকে তার নিজ বাসভূমির বা দেশ ও জাতিসত্তার স্বীকৃতি না দেয়ার বা এ বিষয়ে দ্বিধাহীন না থাকার ‘সদিচ্ছা’ থেকেই রোহিঙ্গা শব্দের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ‘মুসলিম কমিউনিটি অব রাখাইন’ শব্দটি। আমাদের মতে রোহিঙ্গা সম্পর্কিত সকল সমস্যার মূল কারণই হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগণের সে অঞ্চলের স্থায়ী এবং আইনসম্মত (ষবমরঃরসধঃব) অধিবাসী হিসাবে মেনে না নেয়ার প্রবণতা। তা হলে এই জনতার দেশ কোনটি তাও মিয়ানমারের সুচি সরকারের স্পষ্টভাবে বলে দেয়া উচিত এবং তার যৌক্তিকতাও সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া তাদেরই দায়িত্ব। মোটকথা হচ্ছেÑ মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণের ফলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সৃষ্টি হয়েছে এক দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার পটভূমি, যার প্রতিকারে মিয়ানমার আন্তরিক না হলে কেবলমাত্র বাংলাদেশ নয় পুরো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন, সম্মৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য এটি হয়ে দাঁড়াবে এক মারাত্মক হুমকির বিষয়। বাংলাদেশের উগ্রবাদী শক্তিগুলো এই সুযোগ সদ্ব্যবহার করবে যথেচ্ছভাবে, যার পরিণামে এই অঞ্চলটি হয়ে উঠতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক (নিরাপত্তা বিষয়ক) এলাকা হিসাবে। অন্তিমে দেখা যেতে পারে যে, বড় দেশগুলো, যেমনÑ চীন, ভারত ও রাশিয়া এ অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পথ পরিষ্কার করার জন্য মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নিপীড়নে মদদ দেবে, তাদের সামরিক ব্যয়ের পিঁপড়া লাভের গুড় খেয়ে নেবে এবং আরও বেশি খাওয়ার দিকে ধাবিত হবে। তাই এসব দেশকেই সর্বপ্রথমে এগিয়ে আসতে হবে এই সমস্যা সমাধানে। চীনের ভূমিকাই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মিয়ানমারের সরকার কোন কিছু করারই দুঃসাহস দেখাবে না। কারণ, চীন হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবেই সে দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার প্রধান স্তম্ভ। রাখাইনে চীনের দীর্ঘমেয়াদী ও কৌশলগত স্বার্থের মূল বিষয়টি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরের প্রভাব বলয়কে আরও শক্তিশালীকরণ। আর এই বিশ্ব রাজনীতির বলি হতে হচ্ছে এক অতি নিরীহ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণকে। সংক্ষিপ্তাকারে আনান কমিশনের প্রতিবেদনে নিচের বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়- ১. মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা; ২. মিডিয়ার প্রবেশাধিকার; ৩. আইন ও সমতা; ৪. সীমান্ত ইস্যু ও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন; ৫. সামাজিক অর্থনীতির উন্নয়ন; ৬. নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ; ৭. নাগরিকত্ব ও স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার; ৮. আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ; ৯. সাংস্কৃতিক ইস্যু; ১০. বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃজাতি আলোচনা; ১১. নাগরিক জীবনে অংশগ্রহণের সুযোগ; ও ১২. আঞ্চলিক সম্পর্কের উন্নয়ন। মূলত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফাভিত্তিক প্রস্তাব যা জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে উপস্থাপিত করা হয় এবং আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে ভিত্তিমূল ধরে বাংলাদেশ পরবর্তীতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের একটি সম্মানজনক, টেকসই ও নিরাপদ সমঝোতায় আসার। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা উদবাস্তুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দশ লাখ পঁচাত্তর হাজারে, যার মধ্যে ছয় লাখের বেশি দেশছাড়া হয়েছে ২৫ আগস্ট ২০১৭ এর পরে। এই বিপুলসংখ্যক উদবাস্তুর ভার বাংলাদেশের পক্ষে বহন করা কঠিন হলেও বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশের জনগণ এ বিষয়টিকে মানবিক দিক থেকে বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা সবচেয়ে ইতিবাচক। নবেম্বরের ২৩ তারিখে সম্পাদিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির মাধ্যমেই প্রকৃতপক্ষে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারকে পাওয়া যায় কোন সমঝোতামূলক আচরণের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। মিয়ানমার ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর থেকে এদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় এই চুক্তির মাধ্যমে। এর আগে আসা আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ফেরত নেয়ার বিষয়ে নতুন করে চুক্তি করার কথা উল্লেখ করা হয় ওই চুক্তিতে। এই চুক্তির ফলে প্রকারান্তরে এটা স্বীকার করে নেয়া হয় যে, আগেও এ ধরনের রোহিঙ্গার ঢল বাংলাদেশে এসেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আমাদের দেশের জন্য যতখানি জরুরী, তার ঠিক উল্টোটি হচ্ছে মিয়ানমারের জন্য। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী দিনে ১৫০ জন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রায় ২০ বছর সময়ের প্রয়োজন। এ বিষয়টি আমলে নিলে এটি ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে যে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টি থেকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো মিয়ানমারের কূটকৌশলের একটি অংশ। আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি যে ঢাকা পড়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ বাংলাদেশকে যত বেশি সমস্যাসঙ্কুল করে রাখা যাবে তত বেশি লাভবান হবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি, যারা প্রকারান্তরে এ অঞ্চলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে এ যাবতকাল। সম্প্রতি স্বাক্ষরিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তিতে অনেক ভাল বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে এবং শেখ হাসিনার পাঁচ দফা ও কফি আনানের প্রস্তাবনাও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। যেমনÑ টেকসই সমাধানের আশা, জাতিসংঘকে সম্পৃক্তরণ, দায়মুক্তি, সংখ্যা বিবেচ্য নয়, আরও দলিল সই হবে, সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা, আগামীতে এ ধরনের বহির্গমন প্রতিরোধ, ইত্যাদি। কিন্তু বিশেষ কতগুলো সংযুক্তিকরণÑ যেমন মিয়ানমারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, নাগরিকত্ব পরীক্ষার নামে বহিষ্কৃত রোহিঙ্গাদের কাছে এমন কিছু ডকুমেন্ট দাবি করা যা হয়ত কখনই তাদের দেয়া হয়নি, অতীতে বসবাসের প্রমাণ সাপেক্ষে ফিরে যাওয়ার শর্ত, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার (অৎনরঃৎধঃরড়হ) বিষয়টি উহ্য রাখা বা সম্পন্নভাবে এড়িয়ে যাওয়া, অথবা দিনে ১৫০ জন করে নেয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো আখেরে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। বিশেষত মিয়ানমার সরকারের এখন পর্যন্ত যে ভূমিকা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, তাতে করে তাদের ওপর আস্থা রাখা যায় কী না সেটি বড় প্রশ্ন। এ ধরনের সন্দেহ যে অমূলক নয় তা সুচির আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্যানেল থেকে মার্কিন কূটনীতিকের পদত্যাগের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়। পদত্যাগী বিল রিচার্ডসনের মতে, সুচির রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আদৌ কোন ইচ্ছা আছে কী না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যে আন্তর্জাতিক পরামর্শক কমিটিটি করা হয়েছে তা নিছক আইওয়াশ। রিচার্ডসন মন্তব্য করেন যে, মিয়ানমার সরকারের চিয়ার লিডিং স্কোয়াডের সদস্য হয়ে থাকার তার কোন ইচ্ছা নেই। এমতাবস্থায় সরকারকে ত্বরিত কিছু বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে, এবং সে সকল পদক্ষেপের সঙ্গে জাতিসংঘকে বা আরও অন্য কোন বহুজাতিক সংস্থা যেমন আসিয়ান, সার্ক, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদিকে আস্থায় নিতে হবে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় মোড়ল চীনকে এ অঞ্চলের শান্তিরক্ষার ফলে তার সুফলভোগী হওয়ার বিষয়টিকে ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য প্রয়োজনে আরও ইনটেনসিভ লবিং করা যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি যে সরকার ইতোমধ্যেই এ বিষয়গুলোর প্রতি যথেষ্ট নজর দিয়েছে। মনে রাখতে হবে, দেশের কিছু অপশক্তি বর্তমানে যে কোন মূল্যবৃদ্ধি বা কুশাসনের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিষয়টিকে সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যে কোন ধরনের সংবেদনশীলতা, যা অহেতুক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা বিশেষ প্রয়োজন। সমাপ্ত লেখক : শিক্ষাবিদ
×