ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুষ্পবাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পুষ্পবাণিজ্য

বাংলা সাহিত্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ফুলের মূল্য’ শিরোনামের সুখ্যাত গল্পটি যে বা যারাই পড়েছেন, তাদের আর নতুন করে ফুলের মূল্য নিয়ে বলার কোন অবকাশ নেই। আধুনিক কবির আক্ষেপও আজ বুঝি প্রায় অসার হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বসন্তে ফুল ফুটক আর নাই ফুটুক বলা হলেও বর্তমানে প্রায় সারা বছরই কম-বেশি ফুলের আবাদ হচ্ছে দেশের নানা স্থানে, নানা জায়গায়। বুনো ফুল ও গাছ-গাছালির পাশাপাশি অপরূপ সাজে শোভা পাচ্ছে নানাবিধ নানা জাতের নানা রঙের ফুলের খামার। কোথাও বা দেখা যাচ্ছে গ্রীনহাউজের ফুল, অর্কিডসহ দুর্লভ প্রজাতির বিদেশী ফুল ও লতাপাতা, সত্যি বলতে কি রাজধানীসহ সারাদেশে ফুল চাষ এতই ব্যাপক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে, কবির ভাষাই ধার করে বলতে হয়, ফুলের বনে যারে দেখি তারেই লাগে ভাল। অধুনা রাজধানীসহ সারাদেশে প্রায় নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে পুষ্পমেলা ও বৃক্ষমেলা। এসব মেলায় একই সঙ্গে সুলভ ও দুর্লভ নানা প্রজাতির ফুলের গাছ, লতাপাতা ও অর্কিড, সর্বোপরি বনদ ও ফলদ বৃক্ষের বেচাকেনা হয়ে থাকে। সরকারী প্রচার- প্রচারণাসহ গণমাধ্যমের বদৌলতে এখন প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। বৃক্ষরোপণ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফুল ও বৃক্ষের সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠাসহ এর বাণিজ্যিক গুরুত্ব এবং ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়েও ভাবতে শিখেছে মানুষ। অথচ এক সময় ফুল নিছক সীমাবদ্ধ ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ের অন্যতম একটি উপকরণ হিসেবে। ক্রমে ক্রমে তা ঢুকে পড়েছে মানুষের ড্রয়িংরুমে সৌন্দর্যবর্ধনে। সরকারী-বেসরকারী নানা অনুষ্ঠানে সাজসজ্জার অন্যতম উপাদান, সর্বোপরি বিয়েশাদির অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন দিবস ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আজকাল ফুল ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিপুলভাবে। এতে একই সঙ্গে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য, সুরুচি ও গাম্ভীর্য বাড়ে বৈকি। বিশেষ করে মহান ভাষা আন্দোলনের মাস একুশে ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ সর্বোপরি বিশ্ব ভালবাসা তথা ভ্যালেন্টাইনস দিবসে রাজধানীসহ সারাদেশে ফুলের চাহিদা, আবেদন ও বেচাকেনা লাখো-কোটি ছাড়িয়ে যায়। অধুনা এসব অনুষ্ঠানে একই দিনে কয়েক কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনা প্রায় ডাল-ভাতে পরিণত হয়েছে। এর মানে দাঁড়ায় আজকাল ফুল যেন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন ও চাহিদার অন্যতম একটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। আর তাই অনেক শৌখিন ও পেশাদার চাষী আটঘাট বেঁধে নেমে পড়েছেন ফুল চাষে। একেবারে পরিকল্পিত উপায় ও পদ্ধতিতে বাজারের চাহিদা ও মানুষের শখ বিবেচনায় নিয়ে মন দিয়েছেন ফুলে আবাদে। মাঝে-মধ্যে বিরূপ আবহাওয়া, অতিবৃষ্টি, বন্যা অথবা খরায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সার্বিকভাবে ফুল চাষ অত্যন্ত লাভজনক। এক সময় যা ছিল যশোরের গদখালিতে সীমাবদ্ধ তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে সাভার, সোনারগাঁওসহ প্রায় সর্বত্র। সর্বোপরি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকেও নানাবিধ ফুল আমদানি হচ্ছে। কিছু পরিমাণ রফতানিও যে হচ্ছে না, তা নয়। তবে এখন পর্যন্ত আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে ফুল সংরক্ষণ, প্যাকেজিংসহ বাজারজাতকরণের সমস্যা রয়ে গেছে। ফুলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রফতানি সম্ভাবনা আরও বাড়াতে গেলে এক্ষেত্রে আমাদের নজর দিতে হবে অবশ্যই। বিশ্বে বৃহৎ ফুল রফতানিকারক দেশ আমস্টারডাম। ভারতের চেন্নাই, থাইল্যান্ডও কম যায় না কোন অংশে। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হতে পারে দেশের ফুল চাষ ও বাণিজ্য।
×