ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাস

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সন্ত্রাস

সংঘাতময় ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির সূত্রপাত আবারও ঘটাচ্ছে বিএনপি। এতদিন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত বিএনপির ছত্রছায়ায় জঙ্গী স্টাইলে যে হামলা চালাত, এখন সেই কাজটি প্রকাশ্য করছে বিএনপি। মঙ্গলবার পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে জঙ্গী স্টাইলে অস্ত্র লুট করে তা ভেঙ্গে ফেলা এবং প্রিজনভ্যান থেকে বিএনপির দুই নেতাকে ছিনিয়ে নেয় তাদের কর্মীরা। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার ফেরার পথে ঘটনাটি ঘটে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। ছিনিয়ে নেয়া নেতাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এর আগেও একই মামলায় হাজিরা শেষে ফেরার পথে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে হাইকোর্টসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহে খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপি আবার জ্বালাও-পোড়াও এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু করার পাঁয়তারা করছে। উল্লেখ্য, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ আর রাজনৈতিক সহিংসতায় সাধারণ মানুষের প্রাণ বিপন্ন হয়ে উঠেছিল। সে সময় ভয়ভীতি আর দম আটকানো পরিবেশেই চলছিল মানুষের জীবনসংগ্রাম। আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনাটি আবারও এমনই অশনি বার্তা দিল। ঘটনার পর বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পুলিশ ভ্যান থেকে দুই নেতাকে উদ্ধার করেছে তাদের কর্মীরা। আরেক নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়েছে। দলের দুই শীর্ষ নেতার ভিন্নধর্মী বক্তব্য নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য নিঃসন্দেহে অশনি সংকেত। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাসী বাংলা ভাইদের আবির্ভাব হয়। জেএমবি, হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন জঙ্গী ভয়াবহ সন্ত্রাসী দল তৈরি হয়। সরকারী প্রশ্রয়ে বাংলা ভাইদের অত্যাচার-নির্যাতন লাগামহীন হয়ে উঠেছিল। নারী ও সংখ্যালঘু নির্যাতন, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় বহু নেতাকে হত্যা, এমনকি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনাও ঘটে। ক্ষয়তায় থেকে বিএনপি যে সন্ত্রাস করেছিল তা বিনা দ্বিধায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলা চলে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও বিএনপি গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে ফিরে আসেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে এই নির্বাচন বানচাল করতে পেট্রোলবোমা হামলায় বহু নির্দোষ মানুষকে হত্যা করেছে। এক কথায় ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে তারা দেশব্যাপী যে সন্ত্রাস চালিয়েছে তা বিশ্বের কোন উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে হলে বিএনপি সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ হতো। খালেদা জিয়ার উল্লিখিত মামলাটি প্রায় ১১ বছর আগের। আইনের পথ ধরে মামলাটি এগোচ্ছে। যতদূর জানা গেছে, কোন মামলায় অভিযুক্তের পক্ষে যত ধরনের সহযোগিতা দরকার তার সবই খালেদা জিয়া ও তাঁর আইজীবীরা পেয়েছেন। এখন মামলার রায়ের অপেক্ষা। রায় কি হবে তা নির্ধারণ করবে আদালত। অপরাধী হলে শাস্তি পাবেন। তাই বলে রাজপথে সন্ত্রাস কেন? রাজপথে সন্ত্রাস করে কি রায় প্রভাবিত করা সম্ভব? বিএনপি নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত একটি নিয়মতান্ত্রিক দল। একাধিকবার দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দলটি কেন সন্ত্রাসী পথে যাবে? এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজ করার পরও কি তাদের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন থাকতে পারেÑ এই প্রশ্নটি এখন অনায়াশেই করা যায়। তাহলে কি, রাজনীতির আদর্শগত বাস্তবতা বিএনপি উপলব্ধি করতে অপারগ। ২০১৮ সাল রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি দলেরই জনমুখী মিশন ও ভিশন নিয়ে কাজ করার কথা। সেখানে সন্ত্রাসের নামে জনগণের ভোগান্তির কারণ হওয়া সত্যিই দুঃখজনক। মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রয়েছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও। রাজপথে এই ধরনের সন্ত্রাস ঘটা মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অক্ষমতাকেই প্রকট করে। বিএনপি এখন যা করছে তা নিষিদ্ধ সংগঠনের আচরণ। কাজেই এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারকে তা দমনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষ শান্তি চায় নিরাপত্তা চায়।
×