ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি মেয়র

হোল্ডিং ট্যাক্স আপাতত বাড়ছে না, ফুটপাথে অভিযান আজ থেকে

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

হোল্ডিং ট্যাক্স আপাতত বাড়ছে না, ফুটপাথে অভিযান আজ থেকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেয়র আঙ্কেল, আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় সারা বছরই পানি জমে থাকে। সঙ্গে যানজট আর ময়লার কারণে আমি স্কুলে যেতে পারি না। আপনি আসবেন বলেই রাস্তাটি গত দুই দিনে পরিষ্কার করা হয়েছে। সারা বছরই কেন এটি পরিষ্কার থাকে না ? এটাকে কি সারা বছরই এমনটা রাখা যায় না ? এই রাস্তাটি কি ঠিক করে দেবেন ? ঠিক এমন করেই এলাকার সমস্যার দুরবস্থার কথা তুলে ধরে রাজধানীর ১৬ সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা ছোট্ট শিশু দিব্যময় দাস। বুধবার সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার ১৯ নং ওয়ার্ডের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ অনুষ্ঠানে এমন শত শত অভিযোগ তুলে ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুন্সী কামরুজ্জামান কাজলের সভাপতিত্বে সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শত শত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, মুসল্লি, সমাজসেবক, শিক্ষক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, অভিভাবক,ব্যবসায়ী, যুবক, বৃদ্ধসহ সমাজের সকল শ্রেণীর নাগরিক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মেয়র সকলের বক্তব্য শোনেন ও সময় করে অবশ্যই তা করার আশ্বাস দেন এবং কিছু সমস্যার সমাধান তিনি তাৎক্ষণিকভাবে দিয়ে দেন। এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আগামী এক বছর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হবে না। অনুষ্ঠানে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সালাহউদ্দীন আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী স¤্রাটসহ সংস্থাটির বিভাগীয় প্রধান ও সরকারী সেবাদানকারী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। ছোট্ট শিশুর প্রশ্নের জবাবে মেয়র সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কবে ঠিক করে দেবেন? পাশে থাকা অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারই ঠিক করে দেব। এরপর মেয়র বলেন, তোমার রাস্তা শুক্রবারই ঠিক করে তোমার বাসায় তোমার কাছে রাস্তাটির একটি ছবি পাঠিয়ে দেব। সমস্যা মনে হলে তুমি আমার কাছে চলে এসো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাঈদ খোকন বলেন, ৮ ফেব্রয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যেকোন ধরনের বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর হুঁশিয়ারি করে দিচ্ছি। ওই রায়কে ঘিরে যদি কোন নাগরিককে লাঞ্ছিত করা হয়, কারও গায়ে আঁচড় দেয়া হয় বা আহত করা হয়, আমরা কাউকে ছাড় দেব না। মেয়র বলেন, ঢাকা শহরের কোন ফ্ল্যাটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থাকেন যেমন জানি তেমনি কোন ফ্ল্যাটে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী থাকেন, সেটাও জানি। তাই আমাদের কোন নাগরিককে আহত করলে জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে পৌঁছে যাব। কোন অন্যায়কে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেব না। এদেশের নাগরিক হিসেবে সবারই মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমাদের সরকার সেই সুযোগ দিয়েছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার রায় কি হবে, আমরা জানি না। রায়ে যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হন তাহলে আদালত আছে সেখানে আপীল করবেন। কিন্তু রায়কে কেন্দ্র করে যদি আমার কোন নাগরিকের গায়ে একটা আঁচড় লাগে, যদি কোন নাগরিক আহত হয় তাহলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি মেয়র হিসেবে আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়ভার আমার। নাগরিক সমস্যা সম্পর্কে মেয়র বলেন, রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ অসুখী হওয়ার প্রধান কারণ ‘যানজট’। তিনি বলেন, এক সমীক্ষা মতে, মনোবিজ্ঞানীদের মতে আরবান এলাকায় আনহ্যাপিনেসের ৬০-৭০ শতাংশ হয় যানজটের কারণে। এই যাজটের কারণে রাজধানীবাসীর নাভিশ্বাস উঠেছে। বর্তমানে নগরবাসীর গৃহবিবাদের অন্যতম এই কারণে প্রতিদিনই ঘরে স্ত্রীদের সঙ্গে স্বামী-সন্তানদের ঝগড়া হচ্ছে। এই শহরে পারিবারিক যত মনোমালিন্য, ঝগড়াঝাটি, রাগ-অভিমান হচ্ছে তার অন্যতম মূল কারণ যানজট। তবে সরকার যানজট নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। নগরবাসীকে এজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। মেয়র বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সরকার এমআরটি, বিআরটি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে, এজন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তি ফেরাতে নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএসসিসি এলাকার ফুটপাথ দখলমুক্ত করতে বিশেষ অভিযানে নামছে ডিএসসিসি। যা পুরো ফেব্রুয়ারি মাসই চলবে। নগরবিশেষজ্ঞদের কথা তুলে ধরে মেয়র বলেন, আমরা যদি ফুটপাথ পথচারীদের চলাচল উপযোগী করতে পারি তাহলে মানুষ রাস্তায় নামবে না। যানবাহন চলাচল সহজ হবে। ফুটপাথ চলাচলের উপযোগী হলে ২৫-৩০ শতাংশ যানজট কমে যাবে। এছাড়া ডিএসসিসি এলাকায় মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক অভিযান শুরু করা হবে। ডিএসসিসি এলাকার রাস্তাঘাটের বিবরণ তুলে ধরে মেয়র বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম, এই শহরের শতকরা ৯০ ভাগ রাস্তঘাট ভাঙ্গাচোরা ছিল, আমাদের অর্থেরও সঙ্কট ছিল। আমরা সেই সঙ্কট নিয়েই যাত্রা শুরু করেছি। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর এখন ঢাকা দক্ষিণের শতকরা ৮৫ ভাগ রাস্তা ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। আর ১৫ ভাগ রাস্তা নষ্ট থাকতে পারে। এসব রাস্তা সংস্কারে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এই শুষ্ক মৌসুমেই আমরা শতভাগ রাস্তা ঠিক করে দেব, যেন নগরবাসী সাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারেন। অনুষ্ঠানে দেখা যায়, সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বেশিরভাগ সমস্যাইÑপ্রকাশ্যে দিনে ও রাতে ছিনতাই, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অনুপস্থিতি, ময়লার বক্স স্থাপন, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানায় এলাকাবাসী। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ওয়াসাকেন্দ্রিক। এ কারণে ওয়াসাকে দুষলেন এলাকাবাসী। মেয়র এলাকাবাসীকে সকল সমস্যা সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেন; একই সঙ্গে আগামী এক বছর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
×