ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সহায়ক সরকারের দাবি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সহায়ক সরকারের দাবি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি কোন দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। আর এ জন্যই বর্তমানে তারা অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের সরকার গণতন্ত্রকে সব সময় সমুন্নত রাখবে, সে জন্য সংবিধান পরিপন্থী কোন সরকার ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব না। আর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান অনুয়ায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সহায়ক সরকার বলে কোন সরকার গঠনের বিধান নেই। বিএনপি জন্ম নিয়েছে মার্শাল ল’ জারি করে সংবিধান লঙ্ঘন করার মাধ্যমে অবৈধ পথে, তাই অবৈধ দাবি করাটা তাদের অভ্যাস। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য তানভীর ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সরকারের কথা বলেছিলাম। তার মানে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে এবং সরকারের পরিসর ছোট করা হবে। সরকার নির্বাচনকালীন শুধু রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করবে, কোন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে ভোটারবিহীন গণভোট (হ্যাঁ/না ভোট) করেছিল বিএনপি এবং সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে কোন নিয়মনীতি অনুসরণ না করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে সরিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে এবং সরকার গঠন করে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের রায়ে পরবর্তীতে তার ওই কর্মকা- অবৈধ ঘোষিত হয়। তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে মাগুরা ও ঢাকার উপনির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপি করেছিল এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে অবৈধ সরকার গঠন করে বিএনপি। গণআন্দোলনের সম্মুখীন হয়ে মাত্র দেড় মাসের মাথায় তাদের পতন ঘটে। ওই সময় বিএনপি নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষ্পষ্ট রূপরেখা থাকা সত্ত্বেও তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার চেষ্টা করে। সংসদ নেতা বলেন, বিএনপির নির্বাচনের নামে প্রহসন করার উদ্দেশ্য থাকায় দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা হয় এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২ বছর ক্ষমতায় থাকে। এসব ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিএনপি কোন দিনই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পক্ষে ছিল না। আর এজন্যই বর্তমানে তারা অসাংবিধানিকভাবে সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছে, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি হবে না ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারী চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই। ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখা যাবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অবসরসীমা বাড়ানো হয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অবসরের বয়সসীমা ৬৭ থেকে ৬৯ বছর করে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যদি অবসরের বয়সসীমা শুধু বাড়ানোই হয় তবে নিচের স্তরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং নতুনদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ অনেক হ্রাস পায়। তাই যত বেশি অবসরের বয়স বাড়ানো হবে তত চাকরিতে প্রবেশ কমে যাবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেসনজট ছিল এখন তেমন সেসনজট নেই। ফলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য এখন অনেক সময় পাচ্ছে। তাই এখন আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, দেশের ভেতরে বিনিয়োগের জন্য সকল সুযোগই নিশ্চিত করেছে সরকার। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ না করে যারা অর্থ পাচার করতে চায় তারা তো তা করতেই চাইবে। কিন্তু টাকা পাচার করলে আমরা তা শনাক্ত করে দেশে ফেরত আনছি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচারকৃত অর্থ আমরা দেশে ফেরত এনেছি। অন্যরা যারা অর্থ পাচার করছে তা শনাক্ত এবং দেশে ফেরত আনতে সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা কমেছে ॥ সরকারদলীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে বর্তমান সরকার কঠোর আইন করে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। নতুন করে ৪১টি নারী ও শিশু বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু ট্রাইব্যুনালই নয়, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইভটিজিংসহ নারী-শিশুদের উত্ত্যক্ত কিংবা সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের তাৎক্ষণিক বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কঠোর পদক্ষেপের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবে পারিবারিক বিরোধ ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। ৩৭ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে ॥ জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইসলামের লিখিত বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণকে ন্যায়বিচার দেয়ার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়টি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার উদ্যোগ নেয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি ২৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ আসামিকে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দায়ে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ জনকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে এবং বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ৩৩টি মামলা বিচারাধীন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো ঘৃণ্য একটি অপরাধের অপরাধী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাজা কার্যকর করার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একটি নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পদ্মা সেতু হলে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে ॥ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে এই সেতু নির্মাণ করা একান্ত প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী, স্বাধীনচেতা নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এ সেতু প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হলে জাতীয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এক দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ফলে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে কোন বিদ্যুত ঘাটতি নেই ॥ সরকারদলীয় অপর সংসদ সদস্য শেখ মোঃ নুরুল হকের প্রশ্নের জবাবে প্রধামন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে শীতকালে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে প্রায় ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৫ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। ফলে বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। তবে গ্রীষ্মকালে সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মাঝে মধ্যে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই দেশের শতভাগ এলাকায় নিরবছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য বিদ্যুত সুবিধা নিশ্চিতকল্পে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করেছি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা পুনর্বার উল্লেখ করে বলেছেন, আগে মাদকের বিস্তার ব্যাপক ছিল। অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরাই পদক্ষেপ নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করেছি। সংসদে যেসব মাদকের স্পট ও ভাসমান শিশুদের মাদক ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা নোট নিয়েছি। আজ (বুধবার) থেকেই অভিযান চলবে। বুধবার রাতে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ পয়েন্ট অব অর্ডারে সারাদেশে ভয়াবহ মাদকের বিস্তার ও ভাসমান ছোট ছোট শিশুদের মাদক ব্যবহার নিয়ে দেয়া বক্তব্যের জবাব দিতে ফ্লোর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদ নেতা বলেন, সংসদ সদস্য (কাজী ফিরোজ রশীদ) যেসব বিষয় বলেছেন, সেগুলো আমি নোট নিয়েছি। আজকেই অভিযান চালাব। কারণ আমরা চাই না এসব ঘটুক। আর সংসদ সদস্যরা যারা রয়েছেন, তাদেরকেও স্ব স্ব এলাকার দিকে একটু বিশেষ নজর দিতে হবে। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, আর যারা ভবঘুরে আছে তাদের বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ আছে, তাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়ে যাওয়া হবে।
×