ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল হামিদই আবার রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আবদুল হামিদই আবার রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রপতি পদে মাটি ও মানুষের নেতা মোঃ আবদুল হামিদের প্রতি আবারও আস্থা রাখল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বর্তমান রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী করেছে দলটি। বুধবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দীর্ঘ আলোচনা শেষে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকেই দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই হবেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদে মোঃ আবদুল হামিদই রাষ্ট্রপতি থাকছেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দলীয় মনোনয়নে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নাম প্রস্তাব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পরে সর্বসম্মতিক্রমে মোঃ আবদুল হামিদকে রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। বৈঠকে রাষ্ট্রপতি পদে দ্বিতীয় কোন নাম আসেনি। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন পাওয়ায় মোঃ আবদুল হামিদই রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হচ্ছেন। একাধিক প্রার্থী না থাকলে ওইদিনই নির্বাচন কমিশন মোঃ আবদুল হামিদকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত বলে ঘোষণা দেবে। একাধিক প্রার্থী না থাকলে সংসদে ভোটের কোন প্রয়োজন পড়বে না। মোঃ আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার হিসেবে দু’বার দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। বুধবার রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা শুরু হয়। সভায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দায়িত্ব দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, দক্ষ ও পরীক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয়বারের মতো মনোনয়ন প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করলে বৈঠকে উপস্থিত সকল সদস্যই তাকে সমর্থন দেন। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতির পদের জন্য মোঃ আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের সমর্থন লাভ করেন। বৈঠক শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে বলেন, সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, তার সুদীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন এবং দেশ ও জনগণের প্রতি কমিটমেন্টের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি পদে এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদকে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি পদে মোঃ আবদুল হামিদকে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী করার কারণ হিসেবে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ চায় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে। নির্বাচনকালীন সরকারে প্রধানমন্ত্রী শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবেন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কোন ক্ষমতা থাকবে না। এ সময় রাষ্ট্রপতির পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ফলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর মোঃ আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত নেতা। এ কারণে তাকেই প্রার্থী করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, যাচাই-বাছাই ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র সংসদ সদস্যরাই সংসদ অধিবেশনে ভোট দিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে এককভাবেই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। তাই আওয়ামী লীগ যাকে রাষ্ট্রপতির পদে প্রার্থী করবেন তিনিই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হবেন। এছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আগেই জানিয়ে দিয়েছে তারা রাষ্ট্রপতি পদে কোন প্রার্থী দেবে না। সব মিলিয়ে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকছে না। তাই বিনা প্রতিন্দ্বন্দ্বিতাতেই তার দ্বিতীয় মেয়াদে এবং দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মোঃ আবদুল হামিদই। নির্বাচন কমিশন থেকে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলে যিনি একক প্রার্থী থাকবেন তাকেই আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সংসদে কোন ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়বে না। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই আলোচনায় শীর্ষে ছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নাম। মেয়াদের শেষ এবং নির্বাচনী বছরে আওয়ামী লীগ কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না। এ কারণে বিশ্বস্ততা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সর্বোপরী যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারদর্শী বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উপলক্ষে গত ২৪ জানুয়ারি সংসদ সচিবালয়ে স্পীকারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠক শেষে স্পীকার সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংসদ সরবরাহ করেছে। ওই তালিকায় ভোটার হিসেবে ৩৪৮ জন এমপির তালিকা দেয়া হয়েছে। দুইজন এমপির মৃত্যুর কারণে তালিকায় নেই। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদ। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। স্পীকার জানান, ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তার মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আইন অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন এমপিরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
×