ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম দিন শেষে ৪ উইকেটে টাইগারদের সংগ্রহ ৩৭৪ রান

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও মুমিনুলের দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ও মুমিনুলের দিন

মিথুন আশরাফ ॥ কি অসাধারণ ব্যাটিং করলেন মুমিনুল হক। যে মুমিনুলকে একটা সময় দল থেকেই বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল তিনিই কিনা অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলে দেখালেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটি নিজের করে নিলেন। মুমিনুলের এ ইনিংসের সঙ্গে মুশফিকুর রহীমের ৯২ রানের ইনিংসে বাংলাদেশও প্রথমদিনে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩৭৪ রান করল। তাতে দিনটি বাংলাদেশেরও হয়ে গেল। টেস্টে টস জেতে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের উইকেট মানেই টার্নিং উইকেট। বিশেষ করে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমদিন উইকেট অনেক বেশি টার্নিং থাকার সম্ভাবনা থাকে। যদি প্রথম ইনিংস দুইদিন খেলা যায়, এরপর প্রতিপক্ষকে শুরুতে চাপে ফেলা যায়; তাহলে ম্যাচ থেকে ফল বের করে নেয়ার সম্ভাবনাও থাকে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট সেই চিন্তা থেকেই আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। দলে ছয় স্পিনার রাখা হয়। মনে করা হয় যুব বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া নাঈম হাসানকে নিউজিল্যান্ড থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছে প্রথম টেস্টেই খেলানোর জন্য। সঙ্গে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাককেও আবার দলে নেয়া হয়েছে খেলানোর জন্যই। কিন্তু পুরো উল্টো হলো। তানভির হায়দারকে একাদশের বাইরেই রাখা হয়। সেই সঙ্গে নাঈম ও রাজ্জাকও একাদশে সুযোগ পেলেন না। সানজামুল ইসলামের অভিষেক হলো। তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ তো টেস্টের নিয়মিত স্পিনারই। সাত ব্যাটসম্যান, তিন স্পিনার ও এক পেসার নিয়ে নামে বাংলাদেশ। প্রথমদিনটিতেই বাজিমাতও করে। শুরুতে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে ৭২ রান পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যান। এমন সময় তামিম (৫২) আউট হয়ে যান। এরপর ইমরুল ও মুমিনুল মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। আরও ২০ রান যোগ হতেই ইমরুলও (৪০) লাকসান সান্দাকানের ঘূর্ণি বলটি বুঝতে না পেরে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। যদিও ‘রিভিউ’ নিলে বেঁচে যেতেন ইমরুল। তা রিপ্লেতে বোঝাও গেছে। কিন্তু ইমরুল ‘রিভিউ’ নেননি। সাজঘরে ফেরেন। ইমরুল আউট হলেও ভরসা থাকে। কারণ মুমিনুল ততক্ষণে উইকেটে সেট হয়ে গেছেন। মুমিনুলের সঙ্গে উইকেটে যিনি যোগ হয়েছেন তিনি তো দেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তিনি মুশফিকুর রহীম। এই শুরু হলো। একজন বাংলার ‘ব্র্যাডম্যান’ খ্যাত ব্যাটসম্যান। আরেকজন দলের সেরা ব্যাটসম্যান। দুইয়ে মিলে এমন নৈপুণ্যই দেখার মিলল, টেস্টের প্রথমদিনে দেশের সেরা স্কোরই জমা হলো। মুমিনুল ও মুশফিক মিলে ২৩৬ রানের জুটি গড়লেন। তৃতীয় উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন। দলকে সাড়ে তিন ’শ রানে নিয়ে গেলেন। দ্বিতীয় সেশনে মুমিনুল-মুশফিকের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে আর কোন উইকেটই হারাল না বাংলাদেশ। অসাধারণ ব্যাটিং করতে থাকেন মুমিনুল ও মুশফিক। মুশফিক একদিকে হাল ধরেন। মুমিনুল আরেকদিকে রান তুলতে থাকেন। তা করতে করতে ৯৬ বলেই সেঞ্চুরি করে ফেলেন মুমিনুল। টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন। চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ৫০ রানের ওপরে করেছেন এমন ইনিংসে সেঞ্চুরি না করে থামেননি মুমিনুল। পাঁচ সেঞ্চুরির মধ্যে চট্টগ্রামেই চারটি সেঞ্চুরি করে দেখালেন। আবার টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৬ ম্যাচেই দুই হাজার রান করে ফেললেন। শেষদিকে ২০৩ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ১৭৫ রান করলেন। ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন মুমিনুল। আরেকদিকে মুশফিকও সেঞ্চুরি করেই ফেলেছিলেন। সেঞ্চুরির ধারে কাছেও যান। কিন্তু ১৯২ বলে ১০ চারে মুশফিকের ৯২ রান হতেই আউট হয়ে যান। লাকমালের হাল্কা বাউন্স বলটি ছোঁয়া লাগাতে গিয়েই সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। দিন শেষ হতে তখন ৬ ওভার বাকি ছিল। এমন সময়ই মুশফিক আউট হন। পরের বলেই লিটন কুমার দাসও আউট হয়ে যান। শেষ বেলায় যেন উইকেট পড়ার মিছিলে নামা শুরু করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এসে সেই উইকেট পড়ার মিছিল থামান। মুমিনুলকে নিয়ে দিন শেষ করেন মাহমুদুল্লাহ (৯*)। আজ এ দুইজন দলের স্কোরবোর্ড আরও বাড়াতে ব্যাট হাতে নামবেন। যে স্কোর হয়েছে তাতে টেস্টের প্রথমদিনে দেশের সেরা স্কোর হয়ে গেছে। তা সম্ভব হয়েছে মুমিনুলের উড়ন্ত ইনিংসে। যে মুমিনুলকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাদ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই মুমিনুলই কিনা তিন বছর পর আবার সেঞ্চুরি করে দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা পারদর্শী। তবে মুমিনুলের ভেতর যেন অন্য জেদ ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত বছর নিজেদের ইতিহাসের শততম টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সেই ম্যাচটি খেলে। তাতে জিতেও বাংলাদেশ। সেই সিরিজে বর্তমানে শ্রীলঙ্কার কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। হাতুরাসিংহে শততম টেস্টে মুমিনুলকে একাদশে রাখেননি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দেশের মাটিতে হওয়া সিরিজেও মুমিনুলকে শুরুতে রাখতে চাননি। সেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ ও মুমিনুল। শ্রীলঙ্কার কোচ এখন হাতুরাসিংহে। হাতুরাসিংহেকে বুঝিয়ে দিতেই যেন এমন একটি ইনিংস উপহার দেন মুমিনুল। সেঞ্চুরি করার পর যেভাবে সদা চুপচাপ থাকা মুমিনুল উল্লাস করে দেখালেন তাতে তাই বোঝা যায়। দিনশেষেও উইকেটেই টিকে আছেন মুমিনুল। তার ১৭৫ রানের অসাধারণ ইনিংসে দিনটি নিজের করে নেন মুমিনুল। মুমিনুলের এ ইনিংসে দিনটি বাংলাদেশেরও হয়ে যায়।
×