ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ডাবল সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুমিনুল

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চম সেঞ্চুরি করে ফেললেন মুমিনুল হক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্টের প্রথমদিনেই সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। দিন শেষ হওয়ার আগে ১৭৫ রান করেছেন। ২০৩ বল খেলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় এই রান করেছেন। অপরাজিতও থাকেন। এখন ডাবল সেঞ্চুরি করার অপেক্ষা মুমিনুলের। চট্টগ্রামে হাফ সেঞ্চুরি করা মানেই মুমিনুলের সেঞ্চুরি করে ফেলা। এখন পর্যন্ত ২৬ টেস্ট খেলছেন। চট্টগ্রামেই চারটি সেঞ্চুরি আছে। যে ইনিংসেই ৫০ রান বা তার বেশি করেছেন, সেই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল। ২০১৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে খেলা প্রথম ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮১ রানের ইনিংস খেলেছেন। এরপর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে, যেটি চট্টগ্রামে মুমিনুলের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচ ছিল; সেটিতে অপরাজিত ১০০ রান করেছেন। একই বছর নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১৩১ রানের ইনিংস খেলেছেন। বাংলার ‘ব্র্যাডম্যান’ খ্যাত মুমিনুল চট্টগ্রামে টানা তিন টেস্টেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। এরপর বুধবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও চট্টগ্রামের মাটিতে সেঞ্চুরি করেছেন। চট্টগ্রামে এ নিয়ে সাত ম্যাচ খেলে চার ম্যাচেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল। পাঁচ সেঞ্চুরিসহ দেশের হয়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ২ হাজার রানের মাইলফলকেও পাঁ রাখেন এ ব্যাটসম্যান। মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২৩৬ রানের জুটিও গড়েন তিনি। দেশের হয়ে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৫টি করে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্বও গড়েন। সেঞ্চুরি করার পর মুমিনুলের উল্লাসও ছিল দেখার মতোই। সবসময় শান্ত থাকেন। সেঞ্চুরি করলেও মুমিনুলকে এতটা উল্লাস করতে দেখা যায় না। কিন্তু এদিন হেলমেট খুলে ড্রেসিংরুমের দিকে উল্লাস প্রকাশ করেন। ২০১৪ সালের নবেম্বরের পর তিন বছর পর ৯৬ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করার পর উল্লাসটা একটু ভিন্নই হলো। যা মুমিনুলের সঙ্গে মানানসই নন। গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের শততম টেস্টে মুমিনুলকে বাইরে রাখা হয়। সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের সিদ্ধান্তে মুমিনুলকে একাদশের বাইরে থাকতে হয়। সেই মুমিনুল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, হাতুরাসিংহের দলের বিপক্ষেই যখন সেঞ্চুরি করেছেন, তখন উল্লাসটা যেন আবার স্বাভাবিকভাবেই ধরা দিচ্ছে। যখন ‘নার্ভাস নাইনটিজে’ মুমিনুল, তখন ধীরে ধীরে খেলবেন কি; উল্টো টানা দুই বলে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরিই করে ফেললেন মুমিনুল। নিজের দ্রুততম সেঞ্চুরি তুলে নেন। আগের সেঞ্চুরিটি ছিল ৯৮ বলের। তামিম ইকবাল ৯৪ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরিটা করেছিলেন। মুমিনুলকে দুর্দান্ত সঙ্গটা দিচ্ছিলেন মুশফিকুর রহীম। মুমিনুল সেঞ্চুরির পর দৌড়ে গিয়ে প্রাণখোলা হাসি দিলেন। মুশফিক একদিক দিয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকেন। আরেকদিকে নির্ভার হয়ে খেলতে থাকেন মুমিনুল। রানও তুলতে থাকেন। চোখ জুড়ানো ব্যাটিং করেন মুমিনুল। গত তিন বছরটি মুমিনুলের জন্য ভাল যায়নি। টেস্ট স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠা মুমিনুল সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছিলেন না। পাঁচটি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেও সেঞ্চুরির দেখা পাননি। মুমিনুল অনেক চাপেও ছিলেন। অবশেষে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। মুমিনুলের অবস্থা এমনই খারাপ হয়েছিল একটা সময় টেস্ট দল থেকেও তাকে বাদ দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত দলে থাকেন। ২৫ টেস্টে ১৮৪০ রান নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নামেন মুমিনুল। ১৬০ রান করলে টেস্ট ক্যারিয়ারে দুই হাজার রান পূরণ হবে মুমিনুলের। সেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পর সেইদিকেই সবার নজর থাকে। মুমিনুল সেটি করেও ফেলেন। টেস্টে সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের পাঁচটি করে সেঞ্চুরি আছে। মুমিনুলও তা করলেন। মুমিনুলের সামনে এখন ৬টি সেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ আশরাফুল ও ৮টি সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবালই আছেন। মুমিনুল ২৬ টেস্টের ৪৭ ইনিংসে পাঁচ সেঞ্চুরি করে সাকিব ও মুশফিকের ওপরে আছেন। সেই সেঞ্চুরিটাকে এখন ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করার পালা মুমিনুলের। এ জন্য দরকার আর ২৫ রান। আর ৭ রান করে টেস্ট ক্যারিয়ারে যে ১৮১ রান মুমিনুলের সর্বোচ্চ সেই রেকর্ড ভাঙ্গবেন। এরপর যদি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেন তাহলে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব দেখাবেন মুমিনুল। আজ টেস্টের দ্বিতীয়দিনে সেই অপেক্ষাই এখন তার। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ স্কোর কার্ড বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট প্রথমদিন শেষে টস ॥ বাংলাদেশ (ব্যাটিং) ভেন্যু ॥ চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস রান বল ৪ ৬ তামিম ব পেরেরা ৫২ ৫৩ ৬ ১ ইমরুল এলবি. ব সান্দাকান ৪০ ৭৫ ৪ ০ মুমিনুল নটআউট ১৭৫ ২০৩ ১৬ ১ মুশফিক ক ডিকভেলা ব লাকমাল ৯২ ১৯২ ১০ ০ লিটন ব লাকমাল ০ ১ ০ ০ মাহমুদুল্লাহ নটআউট ৯ ২০ ২ ০ অতিরিক্ত (নো ৪, ও ২) ৬ মোট (৪ উইকেট; ৯০ ওভার) ৩৭৪ উইকেট পতন ॥ ১/৭২ (তামিম), ২/১২০ (ইমরুল), ৩/৩৫৬ (মুশফিক), ৪/৩৫৬ (লিটন)। বোলিং ॥ লাকমাল ১৭-৩-৪৩-২, লাহিরু ১২-১-৬৪-০, পেরেরা ২৪-৪-৯৮-১, হেরাথ ২০-১-১০০-০, সান্দাকান ১৩-১-৫৮-১, ধনঞ্জয়া ৪-০-১১-০।
×