ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের ডাক ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মঙ্গলবার তার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে আমেরিকাবাসীদের জন্য নতুন মুহূর্ত এবং দেশবাসীকে সেবা করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট। ট্রাম্প তার ভাষণ প্রদান করার সময় বেশ নমনীয় ও আপোসকামী কণ্ঠে কথা বলেন। বিগত সারাবছর তার কণ্ঠে যে উগ্রতা ও বিভাজনমূলক নীতির মারমুখী প্রকাশ ছিল- এই ভাষণে তা ছিল অনুপস্থিত। তবে তিনি তার প্রথম বছরের শাসনকালকে যেসব তথ্য দিয়ে মহিমান্বিত করেছেন- তা নিয়ে রাজনীতি বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, গত বছর আমরা আমেরিকার অবিশ্বাস্য অগ্রগতি এবং অসাধারণ সাফল্য এনে দিয়েছি এবং এসবের মাধ্যমে আমেরিকার আত্মার সৌন্দর্য্য ও দেশটির ইস্পাতসম শক্ত মেরুদণ্ড দৃশ্যমান হয়েছে। ট্রাম্প তার এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের ভাষণে আত্মতুষ্টি, বিগত বছরের সাফল্য, আগামী বছরের করণীয় রূপরেখা ও উত্তর কোরিয়াসহ অনেকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমালোচনা করেন। তার এই ভাষণকে ২০০০ সালে বিল ক্লিনটনের এসওইউ ভাষণের পর সবচেয়ে দীর্ঘ ভাষণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। ট্রাম্প তার দ্বিতীয় বছর শুরুর প্রথম দিকেই তার পরবর্তী কর্মপরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন। এ জন্য তিনি দেশের ভঙ্গুর অবকাঠামো নির্মাণের লক্ষ্যে চার স্তরের অভিবাসী প্রক্রিয়ার কথা ঘোষণা করেন। তার গৃহীত এই বিস্তারিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ে জাতীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধের মূল্য হ্রাস করা। এ ছাড়াও ড্রিমার্স নামে পরিচিত অভিবাসীদের অনিবন্ধিত সন্তানদের নাগরিকত্ব প্রদানের বিনিময়ে নিরাপত্তা ব্যয় হিসেবে কংগ্রেসে অতিরিক্ত অর্থ অনুমোদন করার ওপর তিনি জোর দেন। এসব অর্থ সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ব্যয় করা হবে। এদের নাগরিকত্ব প্রদানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা লটারি বন্ধ করে দেয়াসহ এদেশে অবস্থানরত নাগরিকদের সঙ্গে পরিবারের অন্যান্য সদস্য পুনঃএকত্রিত হওয়ার জন্য ভিসা দেয়ার সুযোগ সীমিত করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টগণ দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে ভাষণ দিয়ে থাকেন। গত বছরের প্রায় পুরো সময়জুড়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতি ও কর্মকা-ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব ও মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প দুই দলকে অভিবাসন ও অবকাঠামোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা এবং এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তার এই ভাষণ এমন সময় প্রচারিত হয় যখন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সঙ্গে তার নির্বাচনী দলের গোপন সংযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে এবং এ বিষয়ে আগামী যে কোন দিন ট্রাম্প বিশেষ উপদেষ্টা রবার্ট মুলারের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হবেন। ট্রাম্পের এই ভাষণের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও স্পীকার পল রায়ানসহ অনেক রিপাবলিকান উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়লেও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাদের অনেককে ভাবলেশহীন অবস্থায় নিজ নিজ আসনে বসে থাকতে দেখা গেছে। তবে ট্রাম্পকে যারা ভাল করে চেনেনÑ তাদের বিশ্বাস এটি সুন্দর সুন্দর কথা সম্বলিত একটি লিখিত ভাষণ যা প্রেসিডেন্টের সহযোগী জন কেলি, স্টিফেন মিলার ও রবার্ট পোর্টার সম্মিলিতভাবে তৈরি করে দিয়েছেন। ট্রাম্প অতীতের মতো তার প্রদত্ত বক্তব্য থেকে যে কোন মুহূর্তে ইউ টার্ন দিতে পারেনÑ কারণ তিনি যা বলেন তা বিশ্বাস করেন না। অতীতে দেখা গেছে যে, তার বক্তব্য দেয়ার কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি তার টুইটারে সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। তিনি তার মনোভাব ও প্রতিপক্ষের কথার জবাব দিতে টুইটারের আশ্রয় নেন বলে অনেকে ঠাট্টা করে তাকে টুইটার-ইন-চীফ বলে ডাকে। প্রেসিডেন্টের এই ভাষণ দেয়ার সময় কংগ্রেসের ব্ল্যাক ককাস দল ঘোষণা দিয়ে ভাষণ অনুষ্ঠান বর্জন করে। এ দলের মুখপাত্র গ্রেগরি ডব্লিউ মিক্্স তার টুইটে বলেন, তিনি (ট্রাম্প) আমাকে বা আমার সম্প্রদায়কে সম্মান করেন না, তাই তার লিখিত ভাষণ শোনার জন্য অধিবেশন কক্ষে বসে থাকার কোন যুক্তি আমি খুঁজে পাই না।
×