ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দিনের সফরে বেজিংয়ে টেরেসা মে

নতুন মাত্রায় চীন-ব্রিটেন সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নতুন মাত্রায় চীন-ব্রিটেন সম্পর্ক

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বুধবার তিন দিনের সফরে চীন পৌঁছেছেন। এই সফরে তিনি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ বা ব্রেক্সিটের নতুন ব্যবসায়িক অংশীদার দরকার হবে ব্রিটেনের। সেই লক্ষ্যে তিনি চীন সফরে গেলেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে ‘ঐতিহাসিক’ ঘটনা বলে মন্তব্য করেছে। এএফপি ও বিবিসি। চীন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়িয়েছে ব্রেক্সিট। ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তাই অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে এখনই পরিকল্পনা শুরু করেছে লন্ডন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক সফর’ হিসেবে উল্লেখ করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ককে আমরা সব সময়ই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আশা করি, তার এই সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা গভীরতর হবে এবং আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। সফরের প্রথমে তিনি যান মধ্যঞ্চলীয় শিল্পশহর উহানে। তিনি এদিনই রাজধানী বেজিং পৌঁছেন এবং চীনের প্রধানমন্ত্রী লে কেকিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি এ সফরকালে চীনা নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সাংহাই ও হুবেই পরিদর্শন করবেন। মে’র চীন সফর সামনে রেখে উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীন সফর করেন। মে এমন এক সময় চীন সফর করছেন যখন ব্রেক্সিট ইস্যুতে দেশে তিনি প্রচ- চাপের মুখে রয়েছেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে এখন ইইউ পরিত্যাগ সম্পর্কিত আইনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে এ সম্পর্কিত একটি গোপন সরকারী রিপোর্ট সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেন কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়বে। মে’র এই সফরের আগে হংকংয়ের সাবেক গবর্নর ক্রিস প্যাটেন স্বায়ত্তশাসিত নগরটির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে মে’র কাছে চিঠি লিখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকং বেজিংয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। বর্তমানে সেখানে মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বেজিং হুমকি তৈরি করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচও এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে কঠোর হওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মে’র সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন ৫০ শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ ব্যবসায়ী নেতা। মোটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ডরোভার এবং ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রজেনেকার চীফ এক্সিকিউটিভরাও তাদের মধ্যে আছেন। এর আগে ২০১৫ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রথম ব্রিটেন সফর করেন। মে চাচ্ছেন তার এই সফরের মধ্য দিয়ে নতুন ‘সোনালি যুগের’ সূচনা হোক। ২০১০ সাল থেকে চীনে ব্রিটেনের রফতানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে চীন ২০২০ সালের মধ্যে ব্রিটেনে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী দেশগুলোর একটি হতে চায়। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ডিসেম্বরে চীন সফর করেন। ওই সফরে তিনি চীনের মেগা প্রকল্প বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ চীনের একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা, ইউরোপের সঙ্গে এশিয়ার বাণিজ্য আরও বাড়ানোই এর উদ্দেশ্য। তবে মে চীনে বিনিয়োগের বিষয়ে কিছুটা সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী। কারণ ২০১৬ সালে ব্রিটেনে একটি পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে চীন বিনিয়োগ করতে গড়িমসি করেছিল। মানবাধিকার ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো ইস্যুগুলো নিয়ে চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মে’র আলোচনার কথা রয়েছে।
×