ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিসেনার জন্য কঠিন সময়

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

সিরিসেনার জন্য কঠিন সময়

শ্রীলঙ্কায় ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাইথরিপালা সিরিসেনার বিজয়টা ছিল অবিস্মরণীয়। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্র রাজাপাকসেকে তিনি যে হারিয়ে দেবেন খুব কম লোকই তা আশা করেছিল। কারণ রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তরোত্তর কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠলেও ২০০৯ সালে তার শাসনামলেই বিচ্ছিন্নতাকামী তামিল টাইগাররা পরাজিত হয় এবং শ্রীলঙ্কার ২৬ বছর স্থায়ী গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। সিরিসেনা ছিলেন প্রেসিডেন্টের নিজস্ব দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির (এসএলএফপি) একজন বিদ্রোহী সদস্য মাত্র। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করা ও তারপর দেশ শাসন করার জন্য সিরিসেনা এসএলএফপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সমর্থনের ওপর নির্ভর করেছিলেন। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কার স্থানীয় নির্বাচন। এ অবস্থায় জোটের বিষয়টি আবার নতুন করে সিরিসেনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তত্ত্বগতভাবে ইউএনপি এবং সিরিসেনা নেতৃত্বাধীন এসএলএফপি উপদলের মধ্যকার জোটের অবসান ঘটেছে গত ডিসেম্বরে। কিন্তু কার্যত তা শেষ হয়নি। কারণ দুটি গ্রুপের কারোরই একে অপরকে বাদ দিয়ে দেশ চালানোর মতো পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন পার্লামেন্টে নেই। রাজা পাকসে শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্ট নামে একটি নতুন সংগঠনকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। তিনি সামনের নির্বাচনকে বর্তমান সরকারের ওপর গণভোট হিসেবে গণ্য করার জন্য ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। স্থায়ী রাজনৈতিক ভিত্তি না থাকার কারণে সিরিসেনার তিন বছরের কার্যকাল নানাভাবে রঞ্জিত হয়েছে। এসএলএফপির ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিরামহীন চেষ্টা চালাতে গিয়ে তার সময় ও এনার্জির অনেকটাই ব্যয়িত হয়েছে। অন্যদিকে ইউএনপির সঙ্গে জোট রক্ষা করতে গিয়ে সেই দলটির কিছু কিছু জনপ্রিয় নীতির সঙ্গে তিনি নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে ফেলেছেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় সিরিসেনা বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যেমন, নির্বাহী ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাত থেকে পার্লামেন্টের হাতে স্থানান্তর করা হবে; অঞ্চলগুলোর হাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে; দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে, যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগ সেনাবাহিনীকে জবাবদিহি করা হবে। এই প্রতিশ্রুতিগুলো বহুলাংশেই অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হয়েছে। অপূর্ণই থেকে গেছে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানো হয়েছে সত্য। তবে যে পরিমাণে কমানোর প্রতিশ্রুতি সিরিসেনা দিয়েছিলেন সে পরিমাণে হয়নি। একটা নতুন সংবিধানের প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন সেখানে অঞ্চলগুলোর সক্ষমতা জোরদার করা হবে। কিন্তু চেষ্টা কখনই বাস্তবায়িত হয়নি। এতে নির্বাচনে সিরিসেনাকে সমর্থনদানকারী তামিল ন্যাশনাল এলায়েন্স বিরক্ত হয়েছে। সাবেক সরকারের কোন সদস্যকে দুর্নীতির দায়ে বিচার করা হয়নি। তেমনি বিচার করা হয়নি উচ্ছৃঙ্খল সৈনিকদের। সিরিসেনা সরকারের ম্যান্ডেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল সরকারের ওপর জনগণের আস্থা গড়ে তোলা। কিন্তু সে কাজে তেমন কোনই অগ্রগতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের স্থানীয় এক কর্মকর্তা। বরং শরিক দল ইউএনপি তার নিজস্ব দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক পর্যবেক্ষক এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ কেলেঙ্কারি উন্মোচনে যথেষ্ট স্বাধীন নয়। এদিকে রাজা পাকসে পরবর্তী সরকারের জন্য যে সব প্রকল্প রেখে গিয়েছিলেন সেগুলোর জন্য ঢালাও ঋণ নিতে গিয়ে নয় সরকার দায় পরিশোধ সঙ্কটে পড়ে। এ কারণে সরকার ২০১৬ সালে আইএমএফের মুখাপেক্ষী হতে বাধ্য হয়। গত বছর সরকার ঘাটতির রাশ টেনে ধরতে কর কাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করে। কর বৃদ্ধি ও রুপীর মূল্য হ্রাসের পরিণতিতে বেড়ে যায় মুদ্রাস্ফীতি। সিরিসেনার আমলেই এই মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ শতাংশ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিরিসেনার সঙ্কটগুলো ঘনীভূত হতে পারে। রাজনীতিবিদদের প্রবণতাই হলো বাতাসের গতি কোন্ দিকে তা খেয়াল করা। এসএলএফপি যদি নির্বাচনে ভাল না করে তাহলে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য ফল আঁচ করে ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাত থেকে সরে যেতে থাকবে। সুতরাং সামনের দিনগুলো সিরিসেনার জন্য কঠিন হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×