ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবল তারকা থেকে প্রেসিডেন্ট ‘জর্জ উইয়া’

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

ফুটবল তারকা থেকে প্রেসিডেন্ট ‘জর্জ উইয়া’

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইব্রেরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সাবেক ফুটবল তারকা জর্জ উইয়া। দুটি গৃহযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো এই দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটতে চলছে। জর্জ উইয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোয়াকাই-এর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। ৯৮ দশমিক ১ শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যায়, উইয়া ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। যা নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়। আগামী মাসে উইয়া যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, এখন তা হবে ১৯৪৪ সাল যাবত দেশটিতে প্রথম গণতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তর। ভোটাভোটিতে কিছুটা বিলম্ব হলেও, গোটা নির্বাচনে কোন সংঘাত ঘটেনি এবং পুরোপুরি আস্থাভাজক নির্বাচন নিষ্পন্ন হয়েছে বলে পর্যবেক্ষকরা মন্তব্য করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য লাইবেরিয়ার সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। দারিদ্র্য থেকে খ্যাতি ও ক্ষমতার শীর্ষে উঠে আসা ৫১ বছর বয়সী উইয়া পিএসজি, এসি মিলান ও চেলসির মতো ইউরোপের সেরা ফুটবল ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। তিনিই একমাত্র আফ্রিকান, যিনি ফিফার ‘ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ খেতাবটি জয় করেছেন। নবাগত হিসেবে রাজনীতি শুরু করার পর তিনি ২০০৫ সালের রান অব ভোটে সারলিফের কাছে পরাজিত হন। ২০১১ সালে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টায়ও ব্যর্থ হন উইয়া। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি লাইবেরিয়ার সিনেটের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। রাজধানীর মনরোভিয়ার একটি বস্তিতে মানুষ হয়েছিলেন জর্জ উইয়া। তার দৃষ্টান্ত বিশেষ করে তরুণ লাইবেরিয়ানদের উদ্বুদ্ধ করেছে। যাদের দৃষ্টিতে উইয়া জনগণের প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের কথা বোঝেন। অপরদিকে উইয়ার সমালোচকদের মতে, তার রাজনীতির অভিজ্ঞতা সীমিত। এছাড়া উইয়া, যে দ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী চার্লস টেলরের সাবেক স্ত্রী জুয়েল হাওয়ার্ড টেলকে তার ভাইস প্রেসিডেন্সিয়াল রানিং মেট হিসেবে মনোনীত করেছেন, এই বিষয়টাও অনেকের পছন্দ হয়নি। গত অক্টোবরে উইয়া, হাওয়ার্ড টেলরের মনোনয়কে সমর্থন করেন। টেলর বর্তমান সিনেটের সদস্য। এ বিষয়ে উইয়ার বক্তব্য হলোÑ হাওয়ার্ড টেলর একজন শিক্ষিত, যোগ্য লাইবেরিয়ান মানুষ। এছাড়া আমি নারী-পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাস করি বলেই হাওয়ার্ড টেলরকে সমর্থন করেছি। আফ্রিকার প্রাচীনতম প্রজাতন্ত্র হলো লাইবেরিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান থেকে মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসরা ১৮৪৭ সালে দেশটি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু আধুনিক যুগে লাইবেরিয়া হলো এক রক্তাক্ত ইতিহাস। ১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে লাইবেরিয়ায় পর পর যে দুটি গৃহযুদ্ধ ঘটে তাতে আনুমানিক আড়াই লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। ২০০৫ সালে সারলিফ সরকার ক্ষমতায় আসেন ও দেশটিকে যুদ্ধ ও ধ্বংসের হাত থেকে মুক্ত করেন। কিন্তু তিনি দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের অন্ত ঘটাতে ব্যর্থ হন বলে সারলিফের সমালোচকরা মনে করেন। জর্জ উইয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি রাস্তাঘাট তৈরি, চাকরির সৃষ্টি ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন করবেন। এখন দেখা যাক, উইয়া তার খেলোয়াড়ি জীবনের সফলতার মতো রাজনৈতিক জীবনে কতটা সফল হতে পারেন এবং লাইবেরিয়ার জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারেন। সূত্র : ইন্টারনেট
×