ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে শক্তিশালী ড্রোন জব্দ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

শাহজালালে মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে শক্তিশালী ড্রোন জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিভিল এভিয়েশনের নীতিমালা উপেক্ষা করেই ব্যাপক হারে আমদানি করা হচ্ছে ড্র্রোন। যখন তখন যত্র তত্র ড্রোন উড়ানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ড্রোন আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ থাকলেও প্রায়ই ধরা পড়ছে ড্রোনের চালান। সর্বশেষ মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্ক রুমাম কুটরোবস্কির নামের এক মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে শক্তিশালী ড্রোন। ওই ড্রোনে থাকা মেমরি কার্ডে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার বস্তি ও অন্যান্য এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করা রয়েছে। এ বিষয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ড্রোনসহ এদেশে রুমামের আগমন ও চিত্রধারণ রহস্যজনক বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা। শুল্ক গোয়েন্দারা জানায়, মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে ড্রোন জব্দ করার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখার কোন অবকাশ নেই। কারণ একটি সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিমাসেই বড় বড় চালানে ড্রোন চোরাই পথে আনছে। তারা এসব ড্রোন দিয়ে কি করছে কোথায় ব্যবহার বা ব্যবসা করছে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনিটর করার দায়িত্বে থাকলেও ড্রোন চোরাচালানের কোন তথ্য নেই তাদের কাছে। বরং শুল্ক গোয়েন্দা ও কাস্টমস বিভাগ চালান আটকের ভিত্তিতে বার্ষিক পরিসংখ্যান তৈরি করছে। শুল্ক গোয়েন্দার নজরদারিতে মঙ্গলবার যে চালান ধরা পড়েছে তার মালিককে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ড. মইনুল খান জানান, সাত দিন আগে মার্ক রুমাম কুটরোবস্কির ঢাকায় আসেন। তিনি আসার আগে সঙ্গে করে ড্রোন আনার কোন আগাম অনুমতিও নেননি। গ্রীন চ্যানেল পার হওয়ার সময়েও সঙ্গে থাকা কোন ধরনের ঘোষণা দেননি। আবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকার স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণেরও কোন অনুমতি নেননি। অথচ ড্রোন আমদানি নিয়ন্ত্রিত পণ্য। এটি ভাল কাজেও ব্যবহার হতে পারে আবার খারাপ কাজেও ব্যবহার হতে পারে। সেজন্য সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ড্রোন আমদানি করা যায় না এবং এটি উড্ডয়নের আগে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। নানা ধরনের নাশকতার কাজে ব্যবহার হতে পারে, এই আশঙ্কায় সম্প্রতি বাংলাদেশে ড্রোন আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এই নীতিমালা লঙ্ঘন করে যারাই ড্রোন আমদানি, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও উড্ডয়ন করছে-তাদেরই আইনের আওতায় আনা এবং সুনির্দিষ্ট জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে মার্কিন নাগরিকের কাছ থেকে এই আইনের বলেই একটি শক্তিশালী ড্রোন জব্দ করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি না থাকায় এবং দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় ড্রোনটি জব্দ করা হয়। বিমানবন্দরে বহির্গমনকালে ওই মার্কিন যাত্রীর কাছ থেকে একটি শক্তিশালী ডিজিআই ব্রান্ডের ড্রোন জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা। ওই যাত্রী আমেরিকান পাসপোর্টধারী। তার নাম মার্ক রুমাম কুটরোবস্কির (২২)। মার্ক ড্রোনসহ ২৬ জানুয়ারি এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে আসেন। সোমবার মধ্যরাতে ড্রোনসহ চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের (সিজেড ৩৯২) ফ্লাইটযোগে গোয়াংজু হয়ে আমেরিকা যাওয়ার সময় বোর্ডিং লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন। এ সময় গোপন তথ্য ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দারা ড্রোনটি জব্দ করে। এ বিষয়ে ড. মইনুল খান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন। এতে ৯টি ক্যামেরা রয়েছে। যাত্রীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ড্রোনটি ব্যবহার করে দেশের ভেতর বিভিন্ন স্থানের স্থিরচিত্র ও ভিডিও ধারণ করেন। ড্রোনে থাকা মেমরি কার্ড পরীক্ষা করে দেখছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। শুল্ক গোয়েন্দার এক কর্মকর্তা জানান, মার্কিন নাগরিক মার্ক রুমাম কি জন্য এদেশে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি নিজেকে একজন পর্যটক দাবি করেছেন। কিন্তু ঢাকার বস্তির ছবি দিয়ে তিনি কি করতে চান প্রশ্ন করা হলে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেননি। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইনে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সামনে তাকে জেরা শেষে তাকে মুচলেকা নিয়ে ফ্রি টু মুভ পলিসিতে ছেড়ে দেয়া হয়। এদিকে সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, সাম্প্রতি ড্রোন আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করায় হঠাৎ ড্রোনের চোরাচালান বেড়ে যায়। গত এক বছরে অন্তত শুধু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই ৬টি চালান ধরা পড়েছে। যাত্রীরা যে শুধু বিদেশ থেকে ফেরার সময় হাতে করে নিয়ে আসছে তেমনটি নয়। বড় তিনটা চালান ধরা পড়েছে যেগুলো কার্গো হাউস দিয়ে অবৈধভাবে অন্য পণ্যের আড়ালে আমদানি করা হয়েছে। সম্প্রতি উত্তরার একটি নাটক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে এক নায়িকার হেফাজতে থাকা তিনটি শক্তিশালী ড্রোন জব্দ করে সিভিল এভিয়েশন। পরে ওই নায়িকা নিজের নাটকের শূটিং করার কাজে ড্রোনগুলো ব্যবহার করার বলে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। সিভিল এভিয়েশনের উপ-পরিচালক ফায়জুল হক জানান, বর্তমানে ড্রোন আমদানি নিষিদ্ধ নয়। এটা আমদানি করতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে, উড্ডয়ন করতে হয় স্বরাষ্ট্র ও সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি নিয়ে। সিআর ৮৪ অনুযায়ী সিভিল এভিয়েশনের অনুমতি ছাড়া ড্রোন উ্ড্ডয়ন করলে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে।
×