ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

এবার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন বইমেলার প্রত্যাশা, পরিসর বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

এবার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন বইমেলার প্রত্যাশা, পরিসর বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মাসব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মেলার পরিসর আরও বেড়েছে। বেড়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে নতুন বইয়ের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। তবে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। আছে। এ ক্ষেত্রে দায় প্রকাশকদের বলে মনে করছে বাংলা একাডেমি। প্রকাশকদের বই নির্বাচনে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সরকারী এ প্রতিষ্ঠান। মেলা শুরুর আগে মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রসঙ্গ ওঠে আসে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থমেলার সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেন সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও গ্রন্থমেলার ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। সংবাদ সম্মেলনে শামসুজ্জামান খান বলেন, এবার সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন একটি মেলা আমরা উপহার দিতে পারব বলে আশা করছি। সেভাবেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার সব প্রস্তুতি মোটামুটি শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, এবার মেলার পরিসর আরও বাড়ানো হয়েছে। উভয় অংশে বাংলা একাডেমি ও অন্য প্রকাশকদের ২৪টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। এবার ইউনিট বেড়েছে প্রায় ১০০। প্রকাশকের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে বইয়ের মান কতটা ভাল সে নিয়ে নিজেই প্রশ্ন তুলেন তিনি। বলেন, প্রতি মেলায় হাজার হাজার নতুন বই আসছে। কিন্তু অনেক বই নি¤œমানের। এরপরও ছাপা হচ্ছে। এখন মানুষের টাকা পয়সা হয়েছে। অনেকেই বই লিখে নাম কামাতে চান। এজন্য নিজের পকেটের টাকায় বই বের করেন। ফলে প্রচুর বই মেলায় আসলেও, মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকদের দায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের উচিত ভাল পা-ুলিপি দেখে প্রকাশ করা। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা জানালেও তিনি বলেন, সারাবছর খবর নেই। মেলার সময় এলে উটকো প্রকাশকরা ভিড় করেন। তারা জোড়াতালি দিয়ে বই করে নিয়ে আসে। মেলায় স্টল চান। এমন সব লোকদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেন, যে চাপ নেয়া মুশকিল হয়ে যায়। এমন আরও কিছু সীমাবদ্ধতা দূর করার ওপর জোর দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মেলার বিস্তারিত তুলে ধরেন সদস্য সচিব জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, এবারও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন বিকেল ৩টায় গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। থাকছেন বিদেশী কয়েকজন কবি ও সাহিত্যিক। যুক্তরাজ্যের এগনিস মিডোস, ক্যামেরুনের ড. জয়েস এ্যাসউনটেনটেং, মিসরের ইব্রাহিম এলমাসরি ও সুইডেনের অরনে জনসন উপস্থিত থাকবেন মঞ্চে। সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গ্রন্থমেলার সময়সূচী ॥ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবার ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে মেলা। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়া হবে সকাল ৮টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। একাধিক প্রবেশপথ ॥ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের জন্য ৬টি পথ থাকবে। টিএসসি ও দোয়েল চত্বর সংলগ্ন এলাকায় পথগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করার জন্য রাখা হয়েছে তিনটি পথ। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে। মেলার পরিসর ॥ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট জায়গায় আয়োজন করা হচ্ছে মেলা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলাকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। মোট ৪৫৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৭১৯টি ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ২৪ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ১৫৫৩৬ বর্গফুট আয়তনের ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২ প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একাধিক প্যাভিলিয়ন স্টলে বাংলা একাডেমির বই ॥ এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৪১টি নতুন বই। এর বাইরে পুরনো গুরুত্বপূর্ণ সব বই পাওয়া যাবে মেলায়। লিটলম্যাগ চত্তর ॥ বহেরা তলায় সাজানো হচ্ছে লিটলম্যাগ কর্নার। এবার ১৩৬টি লিটল ম্যাগাজিনকে জায়গা দেয়া হয়েছে এখানে। শিশু কর্নার ॥ শিশু কিশোরদের জন্য মেলায় থাকছে আলাদা আয়োজন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশকে সাজানো হচ্ছে শিশুচত্বর হিসেবে। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। থাকবে বিশেষ ‘শিশুপ্রহর।’ মেলা মঞ্চ ॥ ২রা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালী মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ॥ নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ গ্রন্থমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ খবরা-খবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ॥ গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় আড়াই শ’ ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার সচল থাকবে। সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ। র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করবে। পুরস্কার প্রদান ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। ২০১৭ সালের গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। একই বছর প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
×