ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে নৌকার জোয়ার

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

সিলেটে নৌকার জোয়ার

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ প্রান্তিক জেলা সিলেটে জোয়ার উঠেছে। নৌকার নির্বাচনী জোয়ার। এই জোয়ার সারা দেশকে ভাসিয়ে নেবে। উপস্থিত জনতার এমন ধারণায় পরিবেষ্টিত মঙ্গলবার সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানের জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার জন্য উপস্থিত জনতাকে হাত তুলে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্বানে উপস্থিত সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাত তুলে সাড়া দিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করার পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন। মঙ্গলবার আলীয়া মাদ্রাসা ময়দান ছিল কানায় কানায় ভর্তি। মাঠ উপচে মানুষের ঢল ছিল বহু দূর পর্যন্ত। নির্বাচনী আমেজে ফুরফুরে মেজাজে শীতের বিকালে মাদ্রাসা ময়দানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা আহ্বানের অপেক্ষা। মঙ্গলবার সিলেটে হযরত শাহজালাল (র), হযরত শাহপরান (র) ও সিলেটের প্রথম মুসলিম গাজী বুরহান উদ্দিনের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রথম প্রচার অভিযান শুরু করেন। সভা শুরুর পূর্বে ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৬টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিন। আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই দেশের উন্নয়ন হয়। দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কাকে নির্বাচিত করতে হবে। নৌকাকে নির্বাচিত করলে দেশ এগিয়ে যায়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে দেশে লুটপাট হয়, দেশ দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হয়। তাই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে আগামীতেও আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে হবে। তাই আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন আগামীতেও নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বিশ্ব দরবারে দেশ সম্মানের সাথে এগিয়ে যাবে। ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করুন। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মাদ্রাসা মাঠের সভার মঞ্চটি তৈরি করা হয় নৌকার আদলে। এই মঞ্চে বক্তব্যের মাধ্যমে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন শেখ হাসিনা। নৌকার আদলে সভা মঞ্চ তৈরির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টরা বলেন ‘নৌকা’ আওয়ামী লীগের প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। তাই, নৌকার আদলে এ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জয়লাভ করে চার বছর পূর্ণ করে পাঁচ বছরে পদার্পণ করেছি। সামনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনকে সামনে নিয়ে আমরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি। এবং সেটা শুরু করছি আমরা পুণ্যভূমি সিলেট থেকে। বিগত নির্বাচনে নৌকায় সবাই ভোট দিয়েছিলেন। তাই আজ বাংলার সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁঁয়া লেগেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদের যৌথ পরিচালনায় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ধ্বংস্তূপ বাংলাদেশকে গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির জনককে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভবে হত্যা করা হয়। ১৯৭৫ এর পর বাংলার মানুষের উন্নয়নের চাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করা শুরু হয়েছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে উন্নয়ন শুরু হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি সিলেটসহ সারাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। ২০০৪ সালে হযরত শাহজালালের মাজারে গ্রেনেড হামলা হয়। পরপর দুবার গ্রেনেড হামলায় ৯ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ৭ আগস্ট আমাদের সাবেক মেয়র কামরানের ওপর আক্রমণ হয়। সে আক্রমণে আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম আলী মৃত্যুবরণ করেন। একাধিকবার কামরানের ওপর হামলা হয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগের সভা চলাকালীন সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির হত্যাযজ্ঞ চলে সারাদেশে। তাদের হাত থেকে মা-বোনেরা রেহাই পায়নি। সারাদেশে অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করে নির্যাতন চালানো হয়, বহু নেতাকে গুম করা হয়। দীর্ঘ ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সে নির্বাচন ঠেকানোর নামে সন্ত্রাস-নাশকতা চালায়। সিলেটে শহীদ মিনারে হামলা ও ভাংচুর চালায়। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালায়। আমরা গাছ লাগাই, তারা গাছ কাটে; আমরা রাস্তা বানাই, তারা রাস্তা কাটে। আমরা কঠোর হস্তে সেসব সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিহত করি। বিএনপির সময় বাংলা ভাই, আবদুর রহমান তৈরি হয়, সারাদেশে একযোগে বোমা হামলা হয়। বিএনপি ঢাকায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালায়। এতে আমাদের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। তারা ২৯টি রেলগাড়িতে আগুন দিয়েছে, ৯টি লঞ্চে আগুন দিয়েছে, ২৫২টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে, প্রায় ১৪ শ’ সরকারী অফিস তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও আর অগ্নি-সংযোগ হচ্ছে তাদের আন্দোলন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ধ্বংস করতে জানে, সৃষ্টি করতে জানে না। মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করতে জানে। বিএনপি পেট্রোলবোমায় মানুষ মেরেছে। তাদের আগুন, পেট্রোলবোমায় বহু মানুষ জীবন দিয়েছে। তারা প্রায় ৫শ’ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। প্রায় তিন হাজার মানুষ তাদের আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে এখন ধুঁকছেন। তাদের অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে তিন হাজার ৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। তারা হাজার হাজার গাড়ি, সরকারী অফিস জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ রকম ধ্বংসাত্মক আন্দোলন আমরা দেখিনি। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন হবে মানুষের জন্য। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন ধ্বংস করার জন্য। তারা পারে দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করতে। বিপরীতে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে, উন্নয়নে বিশ্বাস করে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করে। আজ সিলেট থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সিলেট এসেছি আপনাদের উপকার করতে। আজ অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। সামনে আরও কিছু উন্নয়ন প্রকল্প হবে, সেগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার ছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে পেয়েছিলাম মাত্র ১৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত। আজ আমরা দেশে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত দিচ্ছি। আমরা কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করে তা সহজলভ্য করেছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা শিক্ষার হার ৬৫.৫ ভাগে উন্নীত করেছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সাক্ষরতার হার কমিয়ে ৪৫ ভাগে নিয়ে আসেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা এ হারকে ৭২ ভাগের উপরে নিয়ে গেছি। আমরা প্রতিটি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। বিভিন্ন বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করছি, টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করে শিক্ষাকে বহুমুখী করে দিচ্ছি। অমরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়েছি। আমরা চলতি জানুয়ারি মাসে ৩৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করেছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে পারে। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠঅনগুলোতে কম্পিউটার ল্যাব তৈরি করে দিয়েছি। আমরা বেসককারী অনেক কলেজকে সরকারী করে দিয়েছি। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করে দিচ্ছি। যাতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। প্রাইমারি লেভেলে দুই কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা চালু করেছি। যাতে তারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠে। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে একটি জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। প্রযুক্তি খাতে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ১৪ কোটি সিম ব্যবহার করা হয়। অনেকে দুইটা/তিনটা করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। দেশের ৮ কোটি মানুষ আজ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। আমরা আজ সব জায়গায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে পেরেছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছি। কৃষকদের ভর্তুকি প্রদান করছি। মাত্র ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কৃষকদের নিজ একাউন্টে আমরা ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দিতে পারি। দুই কোটির উপর কৃষক এ সেবা পাচ্ছে। সিলেটের চা শিল্পের উন্নয়নের কথা তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য, তাদের সন্তানের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সিলেট থেকে যাতে চা’র নিলাম হতে পারে সেজন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সিলেটে যেসব পণ্য উৎপাদন হয় যেমনÑ ভ্ট্টুা, আগর, কমলালেবুসহ অন্যান্য উৎপাদনের জন্য এখানে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের সম্প্রসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সে লক্ষ্যে প্রত্যেক অঞ্চলে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সিলেটে আমরা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি যেখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে। আমাদের প্রবাসী বাঙালীরা সেখানে অগ্রাধিকার পাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমরা তা করতে পেরেছি। ৮ হাজার ৫৪৫টি রিসার্চ সেন্টার গড়ে তুলেছি। আমরা ঘরে বসে সেবা পাওয়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ দেশে ১৪ কোটি সিমকার্ড ব্যবহৃত হয়। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করছি। মাত্র ১০ টাকায় কৃষক এ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। দুই কোটির উপর কৃষক উপকরণ কার্ড পাচ্ছে। এক কোটির উপর কৃষক ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছে। যেখানে বন্যায় আক্রান্ত, সেখানে বীজ, সারসহ অনান্য উপকরণ আমরা দিচ্ছি। কৃষকের ঋণ আদায় যেন স্থগিত থাকে তার ব্যবস্থা করছি। সিলেটের চা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবস্থা করছি। চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেট থেকে যাতে চায়ের নিলাম হয়, তার জন্য নিলাম কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেক এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। সিলেটে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি। ঘরে বসে প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার প্রযুক্তিগত সুযোগ আমরা দিয়েছি। ৮ হাজার ৫শ’ পোস্ট অফিসকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করেছি। ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনা পয়সায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছি, ওষুধ দিচ্ছি। সিলেটে আমরা একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, গ্রামের জনগণের উন্নতি। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের প্রতিটি মানুষ পেট ভরে খাবার খাবে। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি। আজ আমরা বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি। যারা হতদরিদ্র, শ্রমিক শ্রেণী, সেসব মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন সময়ের জন্য ভাতা দিচ্ছি। ছেলেমেয়েরা যেন উচ্চশিক্ষা নিতে পারে, সেজন্য প্রাইমারী থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। দেশকে উন্নত করতে হলে, জাতিকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হলে জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রবাসীদের টাকায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। প্রবাসীদের জন্য তিনটি ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি হয়ে গেছে। আমরা চাই, দেশ এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের সুনাম হয়। দেশ পুরস্কার পায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস হয়ে যায় তাদের মূল কাজ। এ দেশকে উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে দেশে এতো উন্নয়ন হতো না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় না। নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হয়েছে। আমরা কথা দিয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব। তা করেছি। জাতির জনকের খুনীদের বিচার করেছি। বাংলার মাটিতে জঙ্গীবাদের স্থান হবে না। প্রত্যেক মা, বোন, শিক্ষক, সচেতন নাগরিক, সকল অভিভাবক সবাইকে নিজেদের ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মিশে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেশিদিন অনুপস্থিত কিনা, তা খেয়াল রাখতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সিলেট আজ শান্তির নগরী। এই শান্তি যেন বজায় থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে, যাতে সিলেটের সকল পাড়া-মহল্লায় শান্তি বজায় থাকে। আমরা বীরের জাতি, বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশকে আমরা উন্নত করে গড়ে তুলব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত করব।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যের জন্য বাংলাদেশকে কারও কাছে ভিক্ষা চাইতে হবে না। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, বিএনপির খালেদা জিয়া, তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান বলেছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভাল না। তাতে বিদেশী সাহায্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু আমরা ভিক্ষা করতে চাই না। যারা নিজেদেরকে ভিক্ষুক হিসেবে অন্যের কাছে পরিচিত করতে চায়, তারা কিভাবে দেশের উন্নয়ন করবে। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী নিজের বক্তব্যে প্রয়াতমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, শাহ এএমএস কিবরিয়া, হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দেওয়ান ফরিদ গাজীসহ প্রয়াত জাতীয় নেতাদের স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ডাঃ দীপু মনি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আব্দুর রহমান, যুবলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক প্রমুখ। জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তৌফিক-ই-এলাহী, আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল, সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য গোলাম কবির রব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, একই বছরের ২৩ নবেম্বর তিনি সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৭-পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ঐ দিন জনসভায় বক্তব্য দেয়ার কথা থাকলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছিল। মুহিত ॥ সমাবেশে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য এগোচ্ছেন। দুইবার নির্বাচিত হয়ে নয় বছর সাংসদ হিসেবে তাকে নির্বাচিত করায় উপস্থিত জনতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দেশের দারিদ্র দূরীকরণে সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একসময় দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত, বর্তমান সরকার সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে মানুষের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বাজেটের আকার বড় করে চার লক্ষ দুই কোটি টাকা করা হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এভাবে বাজেটের আয়তন এত বড় করা হয়নি। আমরা সিলেটের উন্নয়ন কর্মকা- সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। দুইশত বছরে সিলেটের উন্নয়ন যতটুকু হয়েছিল গত ৯ বছরে ততটুকু হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। ওবায়দুল কাদের ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ-সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গত বছরে সিলেটের সকল আসনে আওয়ামী লীগ একশতে একশো হয়ে জয় লাভ করেছে। বিএনপির অপপ্রচারে কিছুই হয়নি বলে তিনি বলেন, সিলেটে উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার সরকার অনেকগুলো প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে পুনরায় সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার জন্য তিনি উপস্থিত জনতার প্রতি আহ্বান জানান। মতিয়া চৌধুরী ॥ মতিয়া চৌধুরী বলেন সরকার গঠনের ৪৯তম দিনের মধ্যে ঢাকায় বিডিআর বিদ্রোহ হয়। সেই দিনের ঘটনায় সরকার তছনছ হয়ে যেতে পারতো, সবার দোয়ায় ও প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে এই বিডিআর বাহিনীকে সুশৃঙ্খল বিজিবি বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই দিতে পেরেছি। বাংলাদেশের আশেপাশের কোন দেশই এখন পর্যন্ত বিনামূল্যে এতোগুলো বই দিতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে এবং হবে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন সাঈদী চান্দে গেছে বইলা বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তছনছ করেছে বিএনপি জামাত। জঙ্গী সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে ইসলাম কি বলে সুইসাইডের কথা? এমন প্রশ্ন রেখে কৃষিমন্ত্রী বলেন জঙ্গীরা সুইসাইড ভেস্ট পরে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে। এতো কিছুর পরও শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন। জিএসপি সুবিধা বাতিলের জন্য খালেদা জিয়া চিঠি দিয়েছে বলে জানান মতিয়া চৌধুরী।
×