ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্টারের ডায়েরি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

রিপোর্টারের ডায়েরি

সংসদে কোরাম সঙ্কট ২৫ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার, বিকেল সাড়ে ৪টা। জাতীয় সংসদ ভবনের সাংবাদিক লাউঞ্জে বসে অপেক্ষা করছি কখন অধিবেশন শুরু হয় তা দেখার জন্য। অবশ্য রীতি অনুসারে আরও আগেই বেল বাজানো শুরু হয়। কিন্তু কোরাম না হওয়ায় অধিবেশন শুরু হচ্ছে না। জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুক্ষণ পর পর সদস্যদের উপস্থিতি গণনা করে তা স্পিকারকে জানাচ্ছেন। অবশেষে পূর্বনির্ধারিত সময়ের চেয়ে আধাঘণ্টা বিলম্বে বিকেল ৫টায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পর প্রশ্নোত্তর পর্ব দিয়ে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নোটিসের ওপর আলোচনা শেষে রাত পৌনে ৮টার দিকে ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বিরোধীদলীয় এক সংসদ সদস্য অধিবেশন কক্ষে কোরাম নেই বলে ডেপুটি স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ সময় এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া সেখানে কয়জন সংসদ সদস্য উপস্থিত আছেন তা গুনতে শুরু করেন। অবশ্য এরই মধ্যে সরকারী দলের হুইপগণ সংসদ লবিতে গিয়ে ক’জন সদস্যকে ডেকে অধিবেশন কক্ষে পাঠান। তাই সংসদে কোরাম আছে দেখে ডেপুটি স্পীকার অধিবেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুসারে অধিবেশন কক্ষে ৬০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে কোরাম হয়। আর কোরাম না থাকলে সংসদের অধিবেশন কার্যক্রম চলতে পারে না। এ কারণে অতীতে জাতীয় সংসদের কোরাম সঙ্কট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা এবং হৈচৈ হয়েছে। তবে এখন সংসদে আগের মতো কোরাম সঙ্কট তেমন একটা হয় না। আর মাঝেমধ্যে হলেও এ নিয়ে তেমন কথা উঠে না। ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস। তাই অনেক সংসদ সদস্য অধিবেশন কার্যক্রম শেষ করে সাধারণত নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় গিয়ে থাকেন। শুক্র ও শনিবার ২ দিন তারা সংসদীয় এলাকায় সামাজিক ও পারিবারিকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর এ জন্যই তারা চান, বৃহস্পতিবার যেন তাড়াতাড়ি সংসদ অধিবেশন শেষ হয়। মাঝেমধ্যে বৃহস্পতিবারের অধিবেশন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ও। তবে ২৫ ডিসেম্বর তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা না দেখে হয়তো কোরাম সঙ্কটের বিষয়টি নিয়ে স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতে পারে। বর্তমান সংসদে সরকারী ও বিরোধী দলের সরব উপস্থিতি থাকার পরও কেন কোরাম সঙ্কট হয় জানতে চাইলে একজন সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আসলে অনেক সংসদ সদস্য ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই সবসময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকতে পারেন না। বিশেষ করে প্রতি বৃহস্পতিবার অনেক সংসদ সদস্য নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় চলে যান। তাই তাদের তাড়া থাকে। তারা চান ওই দিন যেন তাড়াতাড়ি অধিবেশন শেষ হয়। আর তা না হলে তারা নিজ দায়িত্বে চলে যান। আর এ কারণেই মাঝে মধ্যে কোরাম সঙ্কট হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, এক সময় জাতীয় সংসদের কোরাম সঙ্কট নিয়ে প্রায়শই পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হতো। আর এ খবর শুনে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হতো। অবশ্য তখন জাতীয় সংসদের বিরোধী দল বিভিন্ন ইস্যুতে কখনও কখনও ওয়াকআউট বা সংসদ বর্জন করত। এর ফলে সংসদে সদস্যদের উপস্থিতি কমে যাওয়ায় কোরাম সঙ্কট হতো। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। এখন সরকারী দলের দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাঘরিষ্ঠতা থাকায় এবং বিরোধী দল সরকারের অংশ হওয়ায় সমঝোতার ভিত্তিতেই সবকিছু চলে। সংসদের বর্তমান বিরোধী দলকে ওয়াকআউট কিংবা সংসদ বর্জন করতে দেখা যায় না। তাই স্বাভাবিকভাবেই সংসদে সদস্যদের উপস্থিতিও থাকে বেশি। তারপরও যদি কোরাম সঙ্কটের কারণে আধাঘণ্টা বিলম্বে সংসদ অধিবেশন শুরু করতে হয়, তাহলে বিষয়টিকে দুঃখজনক ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। শরীফুল ইসলাম স্যারের ৯০তম জন্মদিন সাংবাদিক দীপু ও লিপু ভাই কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন তাদের পিতা মাগুরার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হকের ৯০তম জন্মদিন পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা। আমিও স্যারের একজন ছাত্র হিসেবে শুক্রবার সন্ধ্যায় আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে যাই। গিয়ে দেখি অনুষ্ঠান শুরু হবে। একটু পরেই শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্যারের শুভাকাক্সক্ষী ও ছাত্রছাত্রীরা তাঁর জীবনী নিয়ে তথ্যচিত্র, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হকের প্রাক্তন ছাত্র প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাক্তন ছাত্রী কামরুল লায়লা জলি এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম। স্মৃতিচারণ করেন প্রাক্তন ছাত্র অধ্যক্ষ কৃষপদ রায়, প্রাক্তন ছাত্র শিক্ষক আব্দুল বারী, অ্যাডভোকেট হাসান সিরাজ সুজা, অ্যাডভোকেট রাশেদ মাহমুদ শাহীন, আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শফিকুর রহমান প্রমুখ। ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হকের জীবনের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র নাইবা মনে রাখলে প্রদর্শিত হয়। এর পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হক ১৯২৮ সালে মাগুরার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যশোর জেলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন, কলকাতা রিপন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং যশোর এমএম কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যশোরে ব্যাপক পুলিশি তৎপরতা শুরু হলে তিনি মাগুরায় নিজ বাড়িতে এসে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে পরদিন মাগুরায় বিশাল মিছিল বের হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে খান জিয়াউল হকসহ তিনজনকে আটক করে। খান জিয়াউল হক পেশাগত জীবনে মাগুরা শহরের এজি একাডেমির প্রধান শিক্ষক হিসেবে ৩৪ বছর চাকরি শেষে ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ সম্মান রৌপ্য ব্যাঘ্য, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সমাজ কল্যাণ পুরস্কার, নরেন বিশ্বাস পদক, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কার, আবদুল হক গোল্ড মেডেল, হরিশ দত্ত নাট্য পদক, থিয়েটার ইউনিট নাট্য পদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাাননায় ভূষিত হয়েছেন খান জিয়াউল হক। অনুষ্ঠানে সকলেই তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। প্রিয় স্যার আজও সকলের হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে বসে আছেন। সঞ্জয় রায় চৌধুরী
×