ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একই চিন্তা ... একই কাজ বারবার ॥ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

একই চিন্তা ... একই কাজ বারবার ॥ অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার

মিসেস লায়লা একজন গৃহবধূ। ময়লা লাগার ভয়ে হাত দিয়ে টাকা পয়সা ধরেন না। কিন্তু না ধরেও তো থাকা যায় না, তাই ভুলক্রমে বা বাধ্য হয়ে হাত দিয়ে টাকা ধরে ফেলেন, তা একেবারে কচকে নতুন ব্যাংকনোট বা ছেড়াফাটা ময়লা টাকা যাই হোক না কেন এরপর শুরু হয় তার হাত ধোয়ার পালা- একবার দু’বার নয় কমপক্ষে দশ থেকে পনেরোবার তিনি সাবান-ডেটল ইত্যাদি দিয়ে বারবার হাত ধোবেনই ধোবেন। এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় বাধ্যতাধর্মী চিন্তা ও আচরণ বা অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি)। কারও কারও সমস্যা কেবল চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে- যেমন কারও মনে হতে পারে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তিনি বোধহয় দরজায় তালা দিতে ভুলে গেছেন। সারা দিন এই চিন্তায় তিনি কাতর হয়ে রইলেন- এটিকে বলা হয় অবসেসন। আবার কেউ কেউ চিন্তার পাশাপাশি একই কাজ বার বার করতে থাকেন- যদি চিন্তা হয় বাসা তালা দেয়া হয়নি তবে তিনি বার বার পাশের দু’তিনটি বাসায় ফোন করে জানার চেষ্টা করেন তার দরজায় তালা আছে কিনা অথবা নিজেই অফিস থেকে একাধিকবার বাসায় গিয়ে দেখে আসেন দরজায় তালা দিয়েছিলেন কিনা- এটিকে বলা হয় কম্পালসন। কারও কারও মধ্যে কেবল অবসেসন আবার কারও মধ্যে কেবল কম্পালসন থাকতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় একই ব্যক্তির মধ্যে খুঁতখুঁতে চিন্তা। (অবসেসন) ও আচরণ (কম্পালসন) দুই-ই থাকে। লক্ষণ : একই ধরনের চিন্তা, অনুভূতি বা অবয়ব বারবার মনের মধ্যে আসতে থাকে। এগুলো মনের মধ্যে অনধিকার প্রবেশ করে ফলে তৈরি হয় উৎকণ্ঠা আর তীব্র মানসিক চাপ। আক্রান্ত ব্যক্তি এসব চিন্তা অনুভূতি বা অবয়বকে দমন করতে চান এবং সেজন্য একই কাজ বার বার করতে শুরু করেন। ৩. একই চিন্তা ও কাজ বারবার করার জন্য অনেক সময় নষ্ট হয় এবং তা দৈনন্দিন কর্মকা-কে ব্যাহত করে। কম্পালসনের লক্ষণের মধ্যে রয়েছে- বারবার একই জিনিস পরীক্ষা করা (দরজা বন্ধ কিনা তা অনেকবার দেখা), অসংখ্যবার হাত ধোয়া- বেশি সময় গোসলে থাকা, কোন কিছু বার বার গোনা (অনেকবার টাকা গুনে দেখা ঠিক আছে কিনা), একই প্রশ্ন বারবার করা, সবকিছু নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখার চেষ্টা করা, প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সবকিছু সংগ্রহে রাখা অর্থাৎ পরে কাজে লাগতে পারে ভেবে নিতান্ত অপ্রয়োজনীয় বস্তুটিও ফেলে না দেয়া ইত্যাদি। চিকিৎসা : অবসেসন- কম্পালসনের জন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা রয়েছে। মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটারের তারতম্যের কারণে এ সমস্যা হয় বলে বিশেষ ওষুধের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ ওষুধ সেবন করা প্রয়োজন। লক্ষ্য রাখতে হবে যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শেই এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত আর যেহেতু এক-দুইদিনে ফল পাওয়া যাবে না তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি ধারণা ও আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসা (কগনিটিভ-বিহেভিয়ার থেরাপি) এ রোগের জন্য বিশেষ কার্যকরী। এ পদ্ধতির মূলনীতি হচ্ছে ‘এক্সপোজার ও রেসপন্স পিভেনশন’। এক্সপোজার পদ্ধতিতে যে বিষয়টি নিয়ে তার খুঁতখুঁতে চিন্তা আছে তাকে সে বিষয়টির মুখোমুখি করতে হবে। যেমন কারও যদি ময়লা-আবর্জনা নিয়ে খুঁতখুঁতে চিন্তা থাকে তবে তাকে ময়লার ঝুড়িতে হাত দেয়ার জন্য বলতে হবে। প্রথমে এ বিষয়টি তার জন্য অসম্ভব মনে হলেও ধীরে ধীরে (সিস্টেমিক ডিসেনসিটাজিশন) অথবা একবার (ফ্লাডিং) কাজটি তাকে দিয়ে করাতে হবে। আর রেসপন্স প্রিভেনশন পদ্ধতিতে যে কাজটি বারবার না করলে সে শান্তি পায় না সে কাজটি করা থেকে তাকে বিরত রাখতে হবে। যেমন সে বারবার হাত ধোয়- তাকে হাতে ময়লা লাগিয়ে হাত না ধুয়ে বসিয়ে রাখতে হবে আর তাকে বোঝাতে হবে যে এখন হাত ধোয়ার প্রয়োজন নেই- খাবার আগে হাত ধোবেন। খুঁতখুঁতে চিন্তা বন্ধ করার জন্য অন্য কোন বিকল্প চিন্তা বা আচরণের অভ্যাস করা যেতে পারে- যেমন হাতে একটি রাবার ব্যান্ড লাগিয়ে রাখতে হবে এবং যখনই মনে অবসেসিভ চিন্তাটি আসবে তখনই রাবার ব্যান্ডে টান নিয়ে ছেড়ে দিতে হবে- হাতে মৃদু আঘাত লাগবে; মনের অবসেসিভ চিন্তাটি অন্যদিকে ধাবিত হবে- উৎকণ্ঠা কমে আসবে। অনেক সময় এ ধরনের রোগীকে একটি ডায়েরি রাখতে বলা হয়- সেখানে প্রতিদিনের শেষে সে তার সারাদিনের সব চিন্তা ও আচরণের বর্ণনা সময়সহ লিখবে। ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা soton [email protected]
×