ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রিয়া ভৌমিক

ই-কাঁচাবাজার ও চার স্বপ্নবাজ তরুণের গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

ই-কাঁচাবাজার ও চার স্বপ্নবাজ তরুণের গল্প

প্রতিদিনে বাজার করা এই যান্ত্রিক কর্মব্যস্ততার যুগে হয়ে উঠেছে প্রায় অসম্ভব। সঙ্গে যোগ হয়েছে পণ্যের গুণগতমান নিয়ে শঙ্কা। এই হ্যাপা থেকে মুক্তি দিতে প্রযুক্তির এই যুগে ই-কমার্স হতে পারে একটি ভাল বিকল্প। এই বিকল্পকে সামনে রেখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে আসছে তরুণ প্রজন্ম। অনলাইন কেনাবেচা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে যথেষ্টই। এমন এক উদ্যোগের গল্প। লিখেছেন- সুপ্রিয়া ভৌমিক উদ্ভাবনী উদ্যোগ, তথ্যপ্রযুক্তি আর তারুণ্য একই সুতায় গাঁথা। নিয়ম আর প্রথাগত শৃঙ্খল ভেঙ্গে সব যুগেই পৃথিবীর প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে তারুণ্য। বাংলাদেশেও রয়েছে এমন কিছু তরুণ, যারা চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে দেশ সেবা করার স্বপ্ন দেখেন। একক পরিবার কাঠামো, রাস্তার জ্যাম আর নারী-পুরুষ উভয়ের কর্মব্যস্ততার মাঝে দৈনন্দিন বাজারের সময় বের করা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আমরা প্রায়শই খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকি আর রেস্টুরেন্টের মালিক ও ক্রয় ম্যানেজারের সততা আর ক্রয় দক্ষতা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে। এই জটিল বিষয়ের সহজ সমাধানের কথা ভেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে আবুল হাসনাত সোহাগ তার অভিনেতা বন্ধু ব্যারিস্টার সিয়াম আহমেদ ও দু’জন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র প্রিয় আর মাহিকে নিয়ে শুরু করেন স্বপ্নের ই-কাঁচাবাজার। হাতের কাছেই ভাল চাকরির অফার গ্রহণ না করে উদ্যোক্তা হওয়ার বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার গল্প নিঃসন্দেহে আরও অনেক তরুণকে উৎসাহিত করবে। নবেম্বর মাস, ২০১৬। চার হাজারের বেশি পণ্যসমৃদ্ধ ওয়েবসাইট, এ্যান্ড্রয়েট এ্যাপ, ৮ জন কর্মচারী আর চারটি সাইকেল নিয়ে ই-কাঁচাবাজার যাত্রা শুরু করে। কৃষি খাত আর সেবা খাতের সংমিশ্রণে গড়ে তোলা ই-কাঁচাবাজারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক ছিল সরবরাহ শৃঙ্খল আর লজিস্টিক। একই সময়ে নতুন চাহিদা তৈরির জন্য জ্ঞানগত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া নির্ধারণ, ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শক্তি, নানামুখী অর্থায়ন পরিকল্পনা আর স্টার্টাপের নানা ভুলভ্রান্তির মধ্য দিয়ে ই-কাঁচাবাজার বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। উদ্যোক্তারা বলেন, নরসিংদী আর ভৈরব থেকে তাজা শাক-সবজি, ময়মনসিংহ থেকে মাছ, নারায়ণগঞ্জ থেকে গরুর মাংস এবং নির্ধারিত কোম্পানি থেকে গ্রোসারি প্রোডাক্টের সমন্বয়ে ই-কাঁচাবাজারের সরবরাহ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয়েছে। আর গুণগতমান সমৃদ্ধ পণ্য পৌঁছাতে কোয়ালিটি ল্যাবের পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গৃহীত হয়েছে। ই-কাঁচাবাজার শুরুর ছয় মাস পর হোম ডেলিভারির বাজারজাতকরণ কমিয়ে পুরোটা ফোকাস করা হয় রেস্টুরেন্ট, ক্যাটারিং, হসপিটাল আর কর্পোরেট অফিসভিত্তিক। সঠিক সময়ে গুণগত মান রক্ষা করে চাহিদামতো পণ্য তুলনামূলক কম দামে রেস্টুরেন্টে পৌঁছে দেয়ার কঠিন প্রত্যয়ে কাজ করে চলেছে ই-কাঁচাবাজার টিম। আর এক্ষেত্রে লজিস্টিক হিসেবে সাইকেলের বদলে ব্যবহার করা হয় পিকাপ ও কাভার্ডভ্যান। অভিনেতা, ব্যারিস্টার ও উদ্যোক্তা সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘ই-কাঁচাবাজারের গুণগত মান উন্নয়ন নিয়ে এমন একটি দিনের স্বপ্ন দেখি যখন একজন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাদ্য গ্রহণের পূর্বে খাদ্যমান নিশ্চিত হতে ই-কাঁচাবাজার থেকে বাজার করা হয়েছে কিনা যাচাই করে দেখবে।’ ই-কাঁচাবাজারের মূল উদ্যোক্তা আবুল হাসনাত সোহাগ তার টিম ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং ২০১৮ সালের টোটাল সেলস টার্গেট ৯ ডিজিট অর্জন সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন।
×