ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতাদের রাজপথে দেখা না গেলে বাড়ি গিয়ে চুড়ি পরানো হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

নেতাদের রাজপথে দেখা না গেলে বাড়ি গিয়ে চুড়ি পরানো হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের রাজপথে দেখা না গেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুড়ি পরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন মহানগর বিএনপির নেতারা। সোমবার নয়াপল্টনের ভাষাণী মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির এক সাংগঠনিক সভায় নেতারা এ মন্তব্য করেন। এ সময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভোটের ওই ফল আঁচ করতে পেরেই নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে বাইরে রাখতে সাজানো মামলায় রায়ের দিন ঠিক করেছে সরকার। কিন্তু মানুষ অপেক্ষা করে আছে নির্বাচনের দিনে ভোটে সিলটা মারবে। তাদের কোন ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। সফল হবেও না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি টিকে আছে, টিকে থাকবে উল্লেখ করেন। বিএনপির এই মহাসচিব আরও বলেন, মানুষ ব্যালটে জবাব দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে সিল মেরে জনগণ গণেশ উল্টিয়ে দেবে। গণেশ হচ্ছে ভারতের পশ্চিম বাংলার কথা। যখন সরকার পাল্টায়, তখন বলে যে গণেশ উল্টে গেছে। স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়া কোন দিন পরাজিত হবেন না। পরাজিত করা যাবে না। এক-এগারো সরকার তাকে এক বছর আটকিয়ে রেখেছিল। আটকে রাখতে পেরেছিল কি? আওয়ামী লীগ বারবার চেষ্টা করেছে বিএনপিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য, পেরেছে কি? পারেনি। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। আমাদের লড়াই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে। এই সরকার একটি দানবে পরিণত হয়েছে। দানবীয় সরকার ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ফ্যাসিবাদের পতন ছাড়া বিকল্প নেই। এই দানবকে সরাতে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একদিনে জয়ী হওয়া যায় না। তবে আন্দোলন চলবেই। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকব। এখানে হতাশার কোন সুযোগ নেই, সূর্য উঠবেই। একনায়ক দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। আজকে যখন সরকার জনগণ তাদের সঙ্গে নেই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে। তখন তারা সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, আজকে লক্ষ্য হবে জনগণের সুনামি সৃষ্টি করা। জনগণকে সেই ¯্রােতের মতো নিয়ে আসতে আমাদের কাজ করতে হবে। তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা বুড়ো হয়ে গেছি, বয়স হয়ে গেছে। সারাটা জীবন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে আছি, কখনও সরে যাইনি। আপনারা যারা তরুণ আছেন সময় আপনাদের। পরিবর্তন আপনাদেরই আনতে হবে। পরিবর্তন আনতে হলে আপনাদের শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, জনগণ যাদের সঙ্গে থাকে, তাদের কোন ভয় নেই। জনগণের কাছেই যেতে হবে। তাদের আন্দোলনে আনতে হবে। তারা রাজপথে নামলে আন্দোলন সফল হবে। তাই তাদের কাছে যেতে হবে তাদের বোঝাতে হবে। বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রধান কাজ। রাজনৈতিক উদ্দেশে খালেদা জিয়াকে সরাতে মিথ্যা মামলা দিয়েছে এ সরকার। তারা ভেবেছে, খালেদাকে দূরে রাখতে পারলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। তাই তারা একটা ‘মিথ্যা মামলায়’ খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে চায়। এখনও মামলায় আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক বাকি আছে, যুক্তিতর্ক বাকি থাকা সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে মামলার রায়ের দিন দেয়া হয়েছে। এসব করে খালেদাকে কোন মতেই পরাজিত করা যাবে না। সভায় দক্ষিণের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজানো মামলার রায়ের দিন সবাইকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানান। এ সময় মহানগর নেতারা সব কেন্দ্রীয় নেতাকে মাঠে নামার দাবি জানান। তারা বলেন, ‘সম্মান রেখে’ বলতে চাই, কেন্দ্রীয় নেতারা যারা সেদিন রাস্তায় নামবেন না, পরদিন তাদের বাসায় গিয়ে ‘চুড়ি পরিয়ে দেয়া হবে। হাবিব উন নবী সোহেল আরও বলেন, এবার সকলে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিন, দেখা হবে রাজপথে। কত শক্তি আছে তাদের, দেখব আমরা। অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন মহানগর দক্ষিণের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শামসুল হুদা, সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী, হাবিবুর রশীদ হাবিব প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ॥ রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সিটি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হবে ৩ ফেব্রুয়ারি। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি বিকেল পাঁচটায় শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি। বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের বিধান বলে খালেদা জিয়ার সম্মতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সভা ডেকেছেন। ইতোমধ্যে নির্বাহী কমিটির সবাইকে বৈঠকের নোটিস দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার ‘রাজদর্শন হলে’ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান রিজভী। তৃতীয়বারের মতো মহাবিপদে বিএনপি ॥ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় সামনে রেখে বিএনপি ‘তৃতীয়বারের মতো মহাবিপদে’ পড়েছে বলে মনে করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কী ধরনের রায় আসতে পারে তা ‘সহজেই আঁচ’ করা যায়। রোববার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে এক রেস্তরাঁয় প্রবাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের এক সমাবেশে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোকন এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এবার বিএনপি মহাবিপদে পড়েছে তৃতীয় বারের মতো। প্রথমবার পড়েছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর সেনাশাসক এইচ এম এরশাদের আমলে। সে সময় বিএনপির ৮০ ভাগ নেতাকর্মীকে এরশাদের দলে ভিড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাবিপদটি এসেছিল ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর তৃতীয়বারের মতো বিএনপি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে বর্তমান সময়ে উল্লেখ করেন।
×