ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন ও সঞ্চালনের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিদ্যুত খাতে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

উৎপাদন ও সঞ্চালনের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিদ্যুত খাতে

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত খাতের উৎপাদন এবং সঞ্চালনে একটি স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কৃর্তপক্ষ বা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সিস্টেম অপারেটর (আইএসও) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারকে (এনএলডিসি) ভেঙ্গে এই পরিচালনা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হচ্ছে। বিদ্যুত খাতে উৎপাদন করে পিডিবি আবার সঞ্চালন করে এককভাবে পিজিসিবি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন শুধু নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করলেই হবে না। বিদ্যুত খাতের এই কৃর্তপক্ষ পরিচালনার জন্য বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। পাওয়ারসেল সূত্র জানায়, আইএসও করার জন্য গত ৩০ নবেম্বর ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। কিন্তু কেউ আগ্রহ না দেখানোতে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সময় বৃদ্ধি করেও কোন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে পাওয়া যায়নি। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার নামে বাঘাবাড়ির কেন্দ্রটির দুর্নীতির তদন্ত করেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। এই কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি সব সময় বন্ধ থাকলেও এনএলডিসি থেকে সব সময় কম চাহিদা দেয়া হতো। এতে একটি ইউনিটের উৎপাদন করার প্রয়োজন পড়ত না। এভাবে একটি ইউনিট বন্ধ রেখেই শত শত কোটি টাকা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এবং অন্যান্য সুবিধা নিয়েছে কোম্পানিটি। আবার জ্বালানি তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ নিয়েও কোন কোন কোম্পানি কম বিদ্যুত দিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে তদন্ত হলেও প্রভাবশালীদের কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। এখানে একটি স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ থাকলে সমস্যাগুলোর উদ্ভবই হতো না। তিনি বলেন, ভারতে পোসোকো নামে এমন স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রয়েছে। আবার ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই কাজ করছে। এমন স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কেন প্রয়োজন জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন এবং সঞ্চালন ব্যবস্থা ক্রমেই বড় হচ্ছে। এখন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আইএসও এসব ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে বিতরণ কোম্পানির কাছে চাহিদা চাইবে আলাদা করে উৎপাদন কোম্পানিকে সে অনুযায়ী তৈরি থাকতে বলবে। একইভাবে সঞ্চালন কর্তৃপক্ষকে সঞ্চালন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বলবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরা যাক পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড- আরইবি বছরের শুরুতে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াটের চাহিদা দিল। কিন্তু বাস্তবে তারা সিস্টেম থেকে এর বেশি বিদ্যুত নিল এক্ষেত্রে তাদের জরিমানা গুনতে হবে। আবার চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত না দিতে পারলেও পৃথক ব্যবস্থা থাকবে। আবার পিডিবি কোন কারণে তাদের প্রতিশ্রুত বিদ্যুত না দিতে পারলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। একইভাবে সঞ্চালন ত্রুটি বিচ্যুতির দায় নিতে হবে পিজিসিবিকে। এখন এ অবস্থার বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ করে এককভাবে পিডিবি। পিজিসিবিও পিডিবিরই একটি কোম্পানি। সেই হিসেবে এনএলডিসির নিয়ন্ত্রণের রশিও পিডিবির হাতেই থাকে। এতে মানুষ বিদ্যুত না পওয়ার অভিযোগ উঠলেও কোন কিছু করার থাকে না কারো। প্রতিবার গ্রীষ্ম এলেই একই সমস্যায় পড়তে হয়। বিদ্যুত বিভাগ পরিস্থিতির উন্নয়নের সব বৈঠকেই উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করলেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে পরিস্থিতি থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করে। আবার উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলেও বাস্তবে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না। এসব ক্ষেত্রে শুরুতেই যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেজন্যই আলাদা নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করলেই সব সমস্যা থেকে রাতারাতি সমাধান মিলবে বিশেষজ্ঞরা এমনটা বিশ^াস করতে নারাজ। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, নিয়োগ, নির্বাচন এবং ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট রয়েছে এমন কাউকে কোম্পানির বোর্ডে বসানো ঠিক নয়। তিনি বলেন সব কোম্পানির বোর্ডেই বিদ্যুত বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন তিনিই যদি কোম্পানি পরিচালনা করেন তো তাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কে এমন প্রশ্ন তুলে শামসুল আলম বলেন, কোম্পানি তো কোন না কোন মানুষই পরিচালনা করবে। কোন পদ্ধতির পরিবর্তন সব কিছু আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। এক্ষেত্রে পদ্ধতির পরিচালককে সৎ হতে হবে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন এর আগে আমরা দেখেছি একটি কোম্পানির চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে সেই কোম্পানির বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে তার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ হয়েছে। কিন্তু ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। এমন হলে শুধু পদ্ধতি তৈরি করে কোন লাভ হবে না বলে মনে করেন তিনি।
×