ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগে দু’দেশের সহযোগিতা স্মারক সই

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগে দু’দেশের সহযোগিতা স্মারক সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ থেকে জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগের বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সোমবার টোকিওতে একটি সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. নমিতা হালদার এবং জাপানের পক্ষে হেলথ, লেবার ও ওয়েলফেয়ার মন্ত্রণালয়ের পলিসি-সমন্বয় বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার জিনিচি মিয়ানো, বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ভাইস মিনিস্টার হিরোমু কুরোকাওয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কোইচি আইবোশি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও জাপান সরকারের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়োগে সপ্তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে এই স্মারক সই করল। সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ড. নমিতা হালদার বলেন, এই স্মারক জাপানের ৭৭টি পেশার ১৩৭ টি কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের জাপানী কাজে প্রশিক্ষণ ও জ্ঞানার্জন করতে পারবে। তারা জাপানে তিন থেকে পাঁচ বছর কাজ করার সুযোগ পাবে। কাজ শেষে তারা দেশে ফিরে জাপানী প্রযুক্তি ও জ্ঞানকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবেন। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কনস্ট্রাকশন, ম্যানুফ্যাকচারিং, গার্মেন্টস, কৃষি, ফুড প্রসেসিং ও কেয়ার গিভিং খাতে জাপানের জনবলের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও বাড়বে। কারণ এখানে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করলেও তারা ভাল বেতন পাবেন। এর আগে জাপানে শতাধিক ইন্টার্ন কর্মী জাপানী ভাষা শিখে জাপানে কাজ করছেন। দক্ষতা অর্জন করার সঙ্গে প্রতিবছর বেতন ভাতাও বাড়ছে তাদের। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের পাশাপাশি দু’পক্ষের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় মানবসম্পদ উন্নয়নে দু’দেশের পারস্পারিক সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনায় জাপানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে জাপান কর্মী নিয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলবে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে জাপান কর্মী নিয়ে দক্ষ করছে আগে থেকেই। বাংলাদেশ থেকে জাপান গত বছর থেকে ইন্টার্ন নিয়োগ শুরু করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়য়ের সচিব ড. নমিতা হালদার জাপানের অর্গানাইজেশন ফর টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিংয়ের (ওটিআইটি) প্রেসিডেন্ট ইয়োসিহো সুজুকির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সচিব টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং কার্যক্রম সহজ করা ও বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন নিয়ে মত বিনিময় করেন। নমিতা হালদার চার দিনের সফরে জাপান সফরের রয়েছে। তিনি আরও কয়েকটি কর্মসূচীতে যোগ দেবেন। তিনি আগামী ৩১ জানুয়ারি দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এর আগে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) আওতায় জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ থেকে এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে সর্বাধিক পরিমাণ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে নেয়া শিক্ষানবিশ কর্মীদের পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পরে তারা দেশে ফিরে নিজেরাই উদ্যোক্তা হতে পারবেন। আইএম জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ২০১৫ সালের ৮ জুলাই টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই সময় চারটি টেকনিক্যাল এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়। তখনকার চুক্তিতে টেকনিক্যাল ইনটার্নগণ তিন বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ পেয়ে থাকত। বর্তমান চুক্তির মাধ্যমে টেকনিক্যাল ইনটার্নগণ পাঁচ বছর মেয়াদী জাপানে কাজের সুযোগ পাবেন। মেয়াদ শেষে তারা দেশে ফিরে নিজেরাই উদ্যোক্তা বহু মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবেন। আবার অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী শিল্প ও কলকারখানায় উচ্চ বেতনে ম্যানেজার ও সুপারভাইজার পর্যায়ে নিয়োগ পেতে পারেন। এই সমঝোতা স্বাক্ষরের মধ্যমে প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন বছর থেকে পাঁচ বছর করা, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নির্বাচন ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও নিñিদ্রকরণ, প্রাক-বহির্গমণ প্রশিক্ষণ আরও কার্যকরকরণ, টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের পাঁচ বছর মেয়াদী প্রশিক্ষণ দিয়ে ম্যানেজার-সুপারভাইজার পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলা বিষয়ে আইএম জাপান, টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসমূহ থেকে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট গ্রহণ করবে ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, একজন কর্মী জাপানে যাবে অদক্ষ হিসেবে। ৫ বছর পরে ওই কর্মী যখন দেশে ফিরবে দক্ষ কর্মী বা উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। জাপান সরকারের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী একজন অদক্ষ কর্মীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করা হয়। এক বছর কাজ করে চলে এলে কর্মীরা পাবে দুই লাখ ইয়েন। আর পুরো ৫ বছর কাজ শেষে ফিরে আসার সময় দেয়া হবে ১০ লাখ ইয়েন। এই টাকা দিয়ে একজন দক্ষ কর্মী দেশে মাঝারি ধরনের ব্যবসা বা সৃজনশীল উদ্যোগ নিয়ে সফল হতে পারবেন।
×