আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একটি সামরিক একাডেমির চত্বরে সোমবার প্রত্যুষে হামলা চালিয়েছে বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ১১ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। জঙ্গীসংগঠন আইএস তার নিজস্ব ওয়েবসাইট আমাকের মাধ্যমে হামলার দায় স্বীকার করেছে।
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, মার্শাল ফাহিম সামরিক একাডেমিতে হামলার ঘটনায় কয়েকজন হামলাকারীও নিহত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে এটা ছাড়াও আরও দুইটি বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে।।-খবর এএফপি, আল-জাজিরা, বিবিসি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের
তিনি বলেন, রকেট-চালিত গ্রেনেড ও স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে অন্তত পাঁচ হামলাকারী সুরক্ষিত সামরিক একাডেমিতে হামলা চালায়। এতে ১১ সেনা নিহত ও আরও ১৬জন আহত হয়েছেন। দুই হামলাকারী নিজেদের উড়িয়ে দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। দুইজন গোলাগুলিতে নিহত ও একজন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আফগান ন্যাশনাল আর্মি দেশটির প্রধান প্রতিরক্ষা শক্তি। তারা দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দওলাত ওয়াজিরি বলেন, হামলাকারীরা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীকে ধ্বংস করে দিতে চায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে তারা বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। কাবুলের উপকণ্ঠের এই সামরিক একাডেমিতে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির প্রতিবেদক বলেন, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে সামরিক একাডেমির দিকে যাওয়া পথগুলো বন্ধ করে দিয়ে পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। কাবুল পুলিশের মুখপাত্র বাশির মুজাহিদ বলেন, সেখানে রকেট ও বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার কারণে হামলাকারীরা সামরিক একাডেমির ভিতরে যেতে পারেনি। একাডেমির ফাাঁড়িতে হামলাটি হয়েছে। হামলার সময় সেখানে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা ছিলেন। স্থানীয় অধিবাসী মুহাম্মদ এহসান বলেন, এক ঘণ্টার ভিতরে অন্তত চারবার মার্শাল ফাহিম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে তিনি বিস্ফোরণ শুনতে পেয়েছেন। গত বছরের অক্টোবরেও এই সামরিক একাডেমির বাইরে বিস্ফোরণে ১৫ সেনাসদস্য নিহত হয়েছিলেন। একটি মিনিবাস থেকে নামার সময় তাদের লক্ষ্য করে ওই বিস্ফোরণ ঘটনো হয়। এ ছাড়াও গত শনিবার কাবুলে একটি একটি বিস্ফোরক ভর্তি এ্যাম্বুলেন্স উড়িয়ে দিলে অন্তত ১০৩জন নিহত ও ২৩৫জন আহত হন। তালেবান এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে বিলাসবহুল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢুকে কয়েকজন বন্দুকধারী হামলা চালালে ১৪ বিদেশীসহ চল্লিশজন নিহত হন। গত বছরের ৩১ মে দেশটির কূটনৈতিক অঞ্চলে একটি ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে গত এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফায় হামলার ঘটনা ঘটলো। ২৪ জানুয়ারি জালালাবাদ শহরে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা সেফ দ্য চিলড্রেন কার্যালয়ে একদল সশস্ত্র বন্দুকধারী হামলা চালালে দুজন নিহত হন।
সোমবারের হামলার পর কাবুলে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হামলার স্থল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবন, জমহুরিয়াত হাসপাতাল, সরকারী দফতর, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কাবুলের আবু রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল্লাহ ফাহিমি বলেন, গত দুই শীতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বড় ধরনের হামলা বেড়েই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারের আগ্রাসী কৌশল ও নীতির কারণেই এমনটা ঘটছে। তারা তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের ছয় সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
নিজস্ব ওয়েবসাইট আমাকে আইএস জানিয়েছে, ইসলামিক স্টেটের যোদ্ধারা সামরিক একাডেমিতে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। সম্প্রতি জঙ্গীগোষ্ঠী আইএস ও তালেবান বিভিন্ন স্থাপনায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: