ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগরিকায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

সাগরিকায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

মোঃ মামুন রশীদ ॥ হুট করেই যেন খারাপ সময়ের মধ্যে পড়ে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বছরের শুরুতেই হোঁচট খেতে হয়েছে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও তা হাতছাড়া করে। ত্রিদেশীয় সিরিজে দাপটের সঙ্গে টানা তিন ম্যাচ জেতা দলের হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। শ্রীলঙ্কার কাছে টানা দুই ম্যাচে খুব বাজেভাবে হেরে যায় মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার ফরমেট ভিন্ন। সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ শুরু হচ্ছে টেস্ট দিয়ে। দুই টেস্টের সিরিজের প্রথমটি হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যে মাঠটি দেশের মানুষের কাছে সাগরিকা বলেই পরিচিত। এই সাগরিকা বাংলাদেশ দলকে দিয়েছে অনেক কিছুই। এর মধ্যে টেস্ট ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয়টাই এসেছে সাগরিকায়। সেবার অবশ্য এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ছিল ভেন্যু। কিন্তু সেটাও-তো সাগরিকাতেই। তবে এর চেয়েও বড় কথা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে খেলা ৬ টেস্টের মধ্যে সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ২০১৪ সালে একটি টেস্ট ড্র। সেই ম্যাচটি হয়েছিল জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে। লঙ্কানদের বিপক্ষে এবার সেখানেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বাংলাদেশ দলের। আগামীকাল বুধবার এখানেই সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু। এবার টেস্ট ক্রিকেটে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। দলকে নেতৃত্ব দেবেন এবার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি মূলত টেস্ট দলের সহঅধিনায়ক মনোনিত হয়েছিলেন গত ডিসেম্বরে। ২০১১ সালের পর অধিনায়কত্ব ফিরে পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বিধাতা অন্যরকম চেয়েছিলেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ফিল্ডিং করার সময় বাঁ হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের। পরে সেলাই দিতে হয়েছে। অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে তার সুস্থ হতে। দ্বিতীয় টেস্টেও খেলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে আছে যথেষ্ট সংশয়। এ কারণে স্বাভাবিক নিয়মানুসারে সহঅধিনায়ক মাহমুদউল্লাহই নেতৃত্ব দেবেন। যদিও এখন পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্ট কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ কারণেই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহই দেবেন দলকে নেতৃত্ব। সেটি হবে তার প্রথম টেস্ট দলকে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা। অথচ এই মাহমুদউল্লাহকেই টেস্ট খেলার ‘অনুপযুক্ত’ আখ্যা দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে দেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। পরে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরে অবশ্য গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুই টেস্টে খেলেছেন তিনি। আর এখন কিনা সেই মাহমুদউল্লাহই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। মাহমুদউল্লাকে নিয়ে এই টানা-হেঁচড়াটা ছিল সকল কর্তৃত্বের মালিক হয়ে যাওয়া কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। হাতুরাসিংহে এখন দলের কোচ নেই। তিনি এখন প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার কোচ। বরাবরই শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য। সাম্প্রতিক সময়ে লঙ্কানরা বেশ বাজে সময় কাটিয়েছে সব ফরমেটের ক্রিকেটেই। কিন্তু বাংলাদেশ সফরে এসে যেন তারা ঘুরে দাঁড়াল। ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে এখন দারুন উজ্জীবত তারা। এর আগে বাংলাদেশের মাটিতে ৬ টেস্ট খেলেছে তারা। টানা ৫ টেস্টেই স্বাগতিক বাংলাদেশকে হারিয়েছে খুব সহজেই। সর্বশেষবার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে ২ টেস্টের সিরিজ খেলে লঙ্কানরা। মিরপুরে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ২৪৮ রানে জয় তুলে নেয়। কিন্তু সাগরিকায় গিয়ে দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশ দল। প্রথমবার দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সম্মানজনক ফলাফল হিসেবে ড্র করতে সক্ষম হয়। এবার সেখানেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ‘টিম বাংলাদেশের’। মাহমুদউল্লাহর জন্যও চ্যালেঞ্জ! অধিনায়ক হয়ে চান্দিকাকে জবাব দেয়ার মোক্ষম সুযোগ। সিরিজের প্রথম টেস্ট সাগরিকায়, সেজন্যই কিছুটা আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ দল। যেকোন ফরমেটেই ভাল সময়গুলো এসেছে এই বন্দর নগরীতে। ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে টাইগাররা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম টেস্ট জয়েল স্বাদ নিয়েছিল এ নগরীতে। হারিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুইয়েকে। এখানেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষবার সম্মানজনক ড্র করেছিল। এবার সম্প্রতি খারাপ একটা সময়ে পড়ে যাওয়া দলের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা এখানেই। এ লড়াইয়ে অবশ্য অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব নেই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তিনি যাননি, বিশ্রাম পেয়েছিলেন। এবার অধিনায়ক হওয়া সত্ত্বেও ইনজুরি তাকে ছিটকে দিয়েছে। সাকিবের অভাব পূরণে বাংলাদেশ দলে ৩৫ বছর বয়সী অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাককে ডাকা হয়েছে শেষ মুহূর্তে। কারণ প্রতিপক্ষদের যে স্পিনেই সবসময় ঘায়েল করেছে বাংলাদেশ দল, সেই স্পিন বিভাগের অন্যতম শক্তি সাকিবের অভাব কোনভাবেই পূরণ হওয়ার নয়। সে কারণেই ১২ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা থাকা রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনা। রাজ্জাক ১১৪টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ৫১০ উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়াও প্রতিপক্ষকে স্পিন বিষেই জর্জরিত করা হবে এমনটা ১৬ জনের স্কোয়াড দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। রাজ্জাকের সঙ্গে স্কোয়াডে আছেন ১৭ বছর বয়সী ডানহাতি অফস্পিনার নাঈম হাসান। তিনি এর আগে কখনও জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি কোন ফরমেটেই। এছাড়া লেগস্পিনার তানবীর হায়দার, বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম, ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ আছেন। এছাড়া মাহমুদউল্লাহও অফস্পিন করতে অভ্যস্ত। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই হাত ঘোরান তিনি।
×