ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সোনার পুতুলের নামে প্রতারণা ॥ সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

সোনার পুতুলের নামে প্রতারণা ॥ সর্বস্বান্ত হচ্ছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ মাটির পুতুলের ওপর কারুকাজ করে কথিত প্রত্ন পুতুল বানিয়ে প্রতারণা করে বিক্রি করার বড় ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে বগুড়ার পশ্চিমাংশের কয়েকটি এলাকায়। আবার একইভাবে কাঁসা ও পিতল দিয়ে পুতুল বানিয়ে সোনার পুতুল বলে বিক্রি করে প্রতারণা করা হচ্ছে। প্রতারণার এই ব্যবসাটি অনেকটাই কমে গিয়েছিল। ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খদ্দের ধরতে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে প্রতারকরা। দ্রুত ধনী হওয়ার রিপুতারিত মানুষেরা এই ফাঁদে আটকা পড়ে বহু অঙ্কের টাকা খুইয়ে এখন পাগলপ্রায়। শেষ পর্যন্ত কারও জায়গা হয় মানসিক হাসপাতালে। কেউ স্থানীয়ভাবে পাগল আখ্যায়িত হয়ে সাধারণের কৌতুক ও করুণার পাত্র হয়। কেউ সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসে। কেউ টাকার শোকে নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিরবিদায় নেয়। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া, কাহালু উপজেলার কিছু গ্রাম এবং জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার দিকে যাওয়া সড়কের কয়েকটি পয়েন্টে পেতে রাখা ফাঁদে সহজেই পা ফেলে অতি লোভী মানুষ। যাদের অনেকেই আসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। বগুড়ার ওই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে কথিত সোনার পুতুল বেচাকেনার এমনই কারবার চলেছে। দুপচাঁচিয়া উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৮ গ্রাম, কাহালু উপজেলার ৬ গ্রাম, দুপচাঁচিয়া থেকে আক্কেলপুর যাওয়ার পথে অন্তত ৬টি পয়েন্ট প্রতারকদের বড় ঘাঁটি। দুপচাঁচিয়ার জিয়ানগর ইউনিয়নের সোনারপাড়া লক্ষ্মীম-প, গোবিন্দপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী, পাচোষা, খিহালী, আতুঞ্জা, জিয়ানগর, গুনাহার ইউনিয়নের গুনাহার, তালুচ, বেড়াগ্রাম, ভান্ডুরিয়া, ঝাজিরা, কারু, ছাতামি, হাপুনিয়া, চামরুল ইউনিয়নের চামরুল কাহালুর ৬ গ্রাম জয়পুরহাট সড়কের ৬ পয়েন্টে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। প্রতারকরা কুমোরদের বাড়ি থেকে বানানো মাটির পুতুলকে বিশেষ কায়দায় সোনালি রং করে। কখনও এই মাটির পুতুলের সঙ্গে বিশেষ পন্থায় তামা ও কাঁসা গলিয়ে প্রলেপ দিয়ে ভারি ও শক্ত করে। ফাঁদে পড়া খদ্দেরদের এভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়। এই পুতুলের খবর দেয়া থেকে শুরু করে বিক্রি করা পর্যন্ত বিশেষ নেটওয়ার্কে নিয়োজিত থাকে একাধিক টিম। যার নেতৃত্বে রয়েছে প্রভাবশালী চক্র। নানা ছদ্মাবরাণের এই টিমের সদস্যরা দেশজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। তারপর শিকার ধরে নানা কৌশলে। এক মিথ্যাকে বিশ্বাস করাতে বলে দশ মিথ্যা। নিখুঁত অভিনয় শৈলী প্রয়োগ করে শিকারকে বিশ্বাসের মধ্যে আনে। প্রতারিত হওয়া এমনই একজন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামের খালেদ বিন আলী। তিনি খবর পান বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় সস্তায় সোনার পুতুল বিক্রি হয় গোপনে। খালেদ বিন আলী তার ছোট ভাই জাহিদ বিন আকন্দ ও বন্ধু বিপ্লব শিকদারকে নিয়ে দুপচাঁচিয়া যান। বাস স্ট্যান্ডে নেমে পূর্বের পরিচয়ের সূত্রে তালুচ গ্রামের নুরুল ইসলামের বাড়িতে যান। গোপন ব্যবসায়িক কথাবার্তার পালায় ৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বড়িতে গিয়ে পুতুল দেখার পর ভুল ভেঙ্গে যায়। পরে আর উপায় থাকে না। সিরাজগঞ্জের একটি পরিবার ঘটকের মাধ্যমে বিয়ে ঠিক করে দুপচাঁচিয়ার এক পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। বিয়ের পাকা কথা হওয়ার পর মেয়ের বাবা জানায় তার তেমন অর্থ নেই তবে একটি সোনার পুতুল আছে। পুতুলের দাম ৪ লাখ টাকা ধার্য হয়ে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ ও এক লাখ টাকা হবু জামাইকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। বিশ্বাসের ওপর ভর করে হবু বরের মা পুতুল কিনে মনিকারের কাছে পরীক্ষার জন্য নিয়ে গেলে বুঝতে পারে সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়েছে। তামার পুতুলকে সোনার পুতুল বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়ে ভন্ডুলের পর এই ঘটনায় মামলা হয়। ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ার পর তারা পিছু হটে যায়। সর্বশেষ চলতি জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিরাজগঞ্জের এক ব্যক্তি প্রতারিত হয়ে বিষয়টি র‌্যাবকে জানায়। র‌্যাব-১২ দুপচাঁচিয়ার তালুচ বাজার থেকে রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে।
×