ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী ওয়াহিদুজ্জামান মিলন

অভিমত ॥ শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা জরুরী

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

অভিমত ॥ শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা জরুরী

‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত, ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’ শিশু বা শিশু অধিকার নিয়ে আমরা কখনও কথা বললেই সবাই অহরহ প্রচলিত এই সহজ-সরল বাক্য উচ্চারণ করে থাকি। কথাটা যথার্থও বটে। আগামী দিন শিশুদের জন্য। অগ্রজরা তাদের গৌরবোজ্জ¦ল কর্মের মাধ্যমে যে জায়গাটি আজ অলংকৃত করে আছেন আগামীতে তা আরও প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা কল্যাণকর নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য শিশুদের কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এটাই প্রচলিত নিয়ম। আজকের শিশুই একদিন পিতা হবে। জন্ম, মৃত্যৃ, সমাজ-সংসার এভাবেই বহমান। বইতেও থাকবে এভাবে অনন্তকাল। এটাই বাস্তবতা। একটি শিশু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে ভবিষ্যতে সে জাতির সেবক হবে, জাতির আশা আকাক্সক্ষার প্রতীক হবে। একটি শিশু বেড়ে ওঠার সময় অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সব শিশু পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্রে থেকে সমান সুযোগ-সুবিধা পায় না। পরিবার থেকে অশিক্ষা, দরিদ্রতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক শিশু তাদের অধিকার ভোগ করা তো দূরের কথা তারা জানেই না তাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে কি কি অধিকারের প্রাপ্যতা রয়েছে। উল্লেখিত বিদ্যমান সমাজে আলালের ঘরের দুলালরা না চাইতেই সে অধিকার ভোগ করে। সেখানে গরিবের সন্তানদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের অধিকার অধরা থেকে যায়। কারণ অধিকার ভোগের মানদ- অর্থ। বিরাজমান এই বৈষম্য দূর করার জন্য রাষ্ট্র শিশুদের কল্যাণের জন্য আলাদা আইন করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে শিশু অধিকারের ব্যাপারে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আর এ জন্য প্রতিবছর ২০ নবেম্বর বিশ^ শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ পালিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করে। এই সনদে অনুস্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালের তৎকালীন বঙ্গবন্ধু সরকার দুস্থ, এতিম, আশ্রয়হীন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুসহ সব শিশুর কল্যাণ ও অধিকার সংরক্ষণের জন্য শিশু আইন প্রণয়ন করেন। বাস্তবতা হলো শিশুর অধিকার ও তাদের কল্যাণের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আইন থাকার পরেও তারা শুধু অধিকার থেকে বঞ্চিত নয় প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও সমাজের অবহেলিত গরিব ঘরের শিশুরাই শিশুশ্রমে নিয়োজিত হয়। গরিব বাবা-মায়েরা বাধ্য হয়েই তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে অর্থ রোজগারে তাদের শিশুকে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে ছোট কারখানা, টেম্পুর হেলপার, রিক্সার গ্যারেজ, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন কর্মে। কিন্তু এই শিশুরা কাজের ক্ষেত্রেও নিরাপদ নয়। এটা একটা স্বাধীন জাতির জন্য দুঃখজনক। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যত- এ কথাটি যদি সত্য হয় এবং এর সুফল পেতে হলে শিশুকল্যাণ ও শিশু অধিকার সংরক্ষণে যে আইন রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ একান্ত জরুরী। একই সঙ্গে শিশুশ্রম বন্ধের আইনটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোপরি সমাজপতি, ব্যবসায়ীসহ রাষ্ট্রের সব বিভাগকে সাংবিধানিক আইনের পাশাপাশি সদয়ভাবে শিশুর অধিকার নিয়ে নিজেদের মনোভাব ঠিক করতে হবে। বর্তমান সরকার শিশু অধিকারের ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। সুতরাং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আগামীতে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে আজকের শিশুদের পরিপূর্ণ অধিকারের নিশ্চয়তা ও তা বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই তারা দায়িত্বশীল সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠবে। রাষ্ট্রের ভবিষ্যত কর্ণধারদের আর অবহেলা নয়, তাদের বেড়ে উঠতে সব ধরনের সুযোগ সৃষ্টি ও রক্ষা করতে হবে এখনই। তবেই জাতির মঙ্গল হবে। লেখক : কবি
×