ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বাবিংশ শতকে এশিয়া

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

দ্বাবিংশ শতকে এশিয়া

আগামী শতক তথা দ্বাবিংশ শতক হবে এশিয়াবাসীর। এমন স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। দেশটি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে এশীয় মহাদেশের অগ্রগতির ভাবনা সহজেই আসতে পারে। তবে সে অবস্থায় পৌঁছার জন্য ক্ষেত্রটুকু তৈরির দায়িত্ব একুশ শতকের এশিয়াবাসীর কর্তব্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। উত্তরসূরিদের জন্য সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ এবং সমাজ রেখে যাওয়ার মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা সে স্বপ্নকে এগিয়ে নেয়ার সহায়ক হয়ত মনে হবে না। এমনিতে বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের মধ্যে এশিয়ার জনসংখ্যা সর্বাধিক। পাশাপাশি এশিয়ার দেশগুলোর মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সমানতালে প্রবাহিত নয়। মহাদেশের চার প্রান্তের দেশগুলোর স্থিতিশীলতা প্রায়শই পড়ে বিপর্যয়ের মুখে। যুদ্ধ-বিগ্রহ, হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা অনেক দেশে নিত্যকার বিষয়। হত্যা শুধু নয়, গণহত্যাও চলে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত অনেক দেশ। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতপূর্ণ এলাকা। দীর্ঘদিন থেকে অনেক দেশে বিভিন্ন সামরিক এবং রাজনৈতিক সংঘাত চলমান রয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে দারুণভাবে। সংঘাতের ফলে অর্থনৈতিক অনুন্নয়নের পাশাপাশি রাজনৈতিক তথা শাসনব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল থেকে যাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে অস্ত্র ও সন্ত্রাসের কারণে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। জঙ্গী ও সন্ত্রাসের বিস্তার এশিয়ার বহু দেশকে জর্জরিত করে তুলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ল-ভ- প্রায়। মধ্য এশিয়ায় জাতিগত সমস্যা বিদ্যমান এখনও। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটছে। এশিয়ার অনেক দেশই আজ পরমাণু শক্তিধর। এই অঞ্চলের মানুষ যখন ক্ষুধা, দারিদ্র্যসহ পর্যাপ্ত বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবে জর্জরিত, তখন এশিয়ার কয়েকটি দেশ এক অসুস্থ পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষকে অনাহারে রেখে এবং ন্যূনতম চাহিদা পূরণের সুযোগ বঞ্চিত করে এই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। তবে তা যদি ব্যবহার হয়, তবে আগামী শতকে এর পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। এশিয়ার সব দেশের জনগণকেই মাসুল গুনতে হবে। এশিয়া আজ সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি। এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে। শান্তির শ্বেত কপোত ওড়ানো শুধু স্বপ্ন হয়ে আছে। এসব অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ ও পন্থা খোঁজা হচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে, সমতার ভিত্তিতে সম্পদ বণ্টন এবং বৈষম্য নিরসনে সকলে একযোগে কাজ করে গেলে সমাজে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তরুণ প্রজন্মকে নতুন নতুন উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহিত করতে হবে। সমাজের সব সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমতানির্ভর সমাজ গঠন করা জরুরী। এক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সংস্থাগুলোর সমন্বয় সাধন করাও প্রয়োজন। সার্ক, বিমসটেক, আসিয়ান নামক সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়া সম্ভব হবে। সার্ক নামক সংস্থা মূলত অকেজো। বিমসটেক, আসিয়ান সক্রিয় থাকলেও তার অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরালো নয়। ভূ-অর্থনৈতিক উপযোগিতার কারণেই এশিয়ার দেশগুলো বিশ্ব বাণিজ্যে আরও জোরদার ভূমিকা রাখতে পারে। পারস্পরিক সহযোগিতা যোগাযোগ বৃদ্ধি ও একটু মানিয়ে চলার মানসিকতা থাকলে এই লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হবে না। বিশ্বায়নের এই যুগে সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এশিয়া সেই পরিবর্তন থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। তবে প্রযুক্তির উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নয়ন ও নারীর অগ্রগতি সমাজ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এশিয়ার দেশগুলো যদি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে পারে, পারস্পরিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াতে পারে, জাতিগত হানাহানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ রোধ করতে পারে, তবে এশিয়াবাসী হতে পারে সমৃদ্ধিশালী। বাংলাদেশের স্পীকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী সমাজ বিজ্ঞানবিষয়ক এক সম্মেলনে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী শতাব্দী হবে এশিয়াবাসীর। এশিয়ার মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাওয়া বাংলাদেশের এই স্বপ্নদর্শন অবাস্তব থাকবে না। যখন প্রতিটি দেশ প্রতিটি জাতি বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সচেষ্ট হয়, বাংলাদেশ হতে পারে তাদের জন্য মডেল।
×