ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নানা সমস্যায় জর্জরিত নওগাঁর ঘাটাগন যুগ্নীতলা মহাশ্মশান

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

নানা সমস্যায় জর্জরিত নওগাঁর ঘাটাগন যুগ্নীতলা মহাশ্মশান

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ॥ নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রাচীনতম ঘাটাগন যুগ্নীতলা মন্দির ও মহাশ্মশান সময়ের বিবর্তনে আজ নানা সম্যসায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। নওগাঁ জেলার রাণীনগর ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি এবং নন্দীগ্রাম উপজেলার সীমান্ত ঘেষা নাগর নদের পাড়ে অবস্থিত এই শ্মশান ও মন্দিরটি দীর্ঘ সময় সংস্কার না হওয়ায় সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় কর্মকান্ড করতে গিয়ে নানান সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক অবস্থার কারণে যুগ্নীতলা মন্দির সবচেয়ে প্রাচীনতম হওয়া সত্বেও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা ও আত্মীয়-স্বজনদের মরদেহ দাহ করতে এসে চুল্লি ও পানি সংকট সহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েন। যোগাযোগ ব্যবস্থা, মরদেহ সৎকার করার জন্য চুল্লি নির্মান এবং পানি সরবারহ করা ও মন্দিরটি সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। জানা গেছে, রানীনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৪ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তর কোনে সীমান্ত ঘেঁষা একডালা ইউনিয়নের ঘাটাগন গ্রামের যুগ্নীতলা মহাশ্মশান মন্দিরটি নাগর নদের পাড়ে অবস্থিত। ঘাটাগন মৌজার ১৭ শতক জায়গার ওপর মন্দির শ্মশান ঘাটের অবস্থান হলেও বিগত ৯০ দশকের শেষ দিকে হঠাৎ করে জমির কাগজপত্র নিয়ে কিছু বিরোধ তৈরি হয়। ওইসময় ধর্মীয় কর্মকান্ড স্বাভাবিক রাখতে একই গ্রামের অনিল চৌধুরী, শষ্ঠী, বরেন, গোপালসহ বেশ কয়েক ব্যক্তি তাদের জমি মন্দিরের নামে দানপত্র করেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি সহযোগীতা না পাওয়ায় দিনদিন মন্দিরটি তার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বছরের প্রতিটি পূজা-পার্বন অনুষ্ঠানে ব্যাপক লোকের সমাগম হলেও সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভুঙ্গুর হওয়ার কারণে পূণ্যার্থীরা এসে নানা ভোগান্তির কবলে পড়েন। মহাদেবের পূজা ও বিশেষ করে এই মন্দিরে সন্যাস ঠাকুরের পূজা প্রতি বছরের পৌষ মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজায় ওই এলাকার সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষদের ঢল নামে। আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করার লক্ষ্যে নানা উৎসবে তারা মেতে উঠেন। কিন্তু পিছু ছাড়ে না তাদের ভোগান্তি। ঘাটাগন গ্রামের মোড় থেকে মন্দির পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার মেঠো পথ আর কাদা-পানির কারণে অনেক দর্শনার্থী এখানে আসা থেকে মুখ ফিরে নিচ্ছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং বসার মত ভাল পরিবেশ না থাকায় এই মন্দিরের সুনাম দেশব্যাপী থাকলেও দিনদিন তা পিছিয়ে পড়ছে। এলাকাবাসীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উৎসব গুলো পরিচালিত হলেও আর্থিক সংকটের কারণে তা থমকে যেতে বসেছে। জরুরি ভিত্তিতে সনাতন ধর্মালম্ভীদের মৃতদেহ দাহ করার জন্য চুল্লি, পানি সরবারহের ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, মন্দির সংরক্ষণসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের একান্ত প্রয়োজন। মন্দির কমিটির দাবি, এলাকার উন্নয়নে সরকারের অনেক প্রকল্পই আসে। এই মন্দিরটি উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ ইসরাফিল আলমের কাছে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। উপজেলার একডালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল ইসলাম জানান, ওই মন্দির ও শ্মশান ঘাটটি অনেক পুরনো। দীর্ঘদিন ধরে এখানে হিন্দু ধর্মের লোকজনদের ধর্মীয় কর্মকান্ডসহ প্রতি বছরেই সন্যাস পূজার আয়োজন করে। অনেক দর্শনার্থী এখানে আসলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনেক ঘাটতি আছে। এই প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে আগামীতে আমার পরিষদ থেকে একটি বরাদ্দের জন্য চেষ্টা করবো।
×