ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণের আশা নাঈমের

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণের আশা নাঈমের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অনুর্ধ-১৯ দলের সতীর্থরা অনেকদিন ধরেই তাকে বলতেন, তুমি খুব দ্রুতই জাতীয় দলে সুযোগ পাবে এবং টেস্ট দলের হয়ে খেলবে। তবে সেই কথাগুলোকে মজা হিসেবেই নিয়েছেন নাঈম হাসান। তবে সাকিব আল হাসান এবং জাতীয় দলের সাবেক কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেও তার প্রশংসা করেছেন। এবার নিউজিল্যান্ডে চলমান অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে খেলতে যান তিনি দলের সঙ্গে। গত শুক্রবার যুব বিশ্বকাপে সুপার লীগ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে খেলছিল বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল। ঢাকা থেকে ৬ হাজার ৮১১ মাইল দূরে কুইন্সটাউনে খবরটা পৌঁছুতে সময় লাগেনি তারবার্তায়। ছোটদের দলের ম্যানেজার দেবব্রত পাল সুসংবাদটা প্রথম জানান নাঈমকে। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন অনুর্ধ-১৯ দলের এ ডানহাতি অফস্পিনার এবং সেটা টেস্ট দলে। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩১ জানুয়ারি প্রথম টেস্টেই অভিষেক হয়ে যেতে পারে এ ১৭ বছর বয়সী কিশোরের। সে জন্য শনিবার রাতেই তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন সতীর্থদের ফেলে। এ জন্য তার খেলা হয়নি পঞ্চম স্থান নির্ধারণী প্লে-অফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ান অফস্পিনার নাথান লিয়নকে সবসময় অনুসরণ করা নাঈমের এখন টেস্ট খেলার স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পথে। সবকিছু ভুলে এখন শুধু সেই টেস্ট খেলা নিয়েই ভাবছেন চট্টগ্রামের ছেলে নাঈম। সুদূর নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পরই জনকণ্ঠের মুখোমুখি হন এ তরুণ। টেস্ট দলে ডাক পাওয়া নিয়ে আলাপচারিতায় জানান নিজের কিছু কথা- প্রশ্ন ॥ প্রথম কার কাছ থেকে খবর পেলেন? জানার পরে অনুভূতি কী ছিল? নাঈম ॥ ভারতের সঙ্গে খেলা ছিল সেই সময় ম্যানেজার (দেবব্রত পাল) এসে আমাকে জানালেন। পরে সিজান স্যারও (এহসানুল হক সিজান) এসে জানান যে, আমি জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। অবশ্যই শুনে বেশ ভাল লেগেছে। সবাই খুব খুশি হয়েছে। সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। প্রশ্ন ॥ আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে বাবার একটা বড় রকমের আবেগ আছে। তার সঙ্গে কথা হয়েছে? নাঈম ॥ না, বলার সুযোগ হয়নি। মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আর ভাইয়াকে বলেছি সবাইকে জানাতে যে আমি ফিরে এসেছি। আর সবাই তো জানেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। সবাই নিশ্চয় অনেক খুশি হয়েছে। প্রশ্ন ॥ নিউজিল্যান্ডে সতীর্থদের ফেলে চলে আসলেন। সবাই কী বলেছে? নাঈম ॥ অবশ্যই খারাপ লাগছে। সবাই এক সঙ্গে ২ বছর ধরে আছি। সবাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে গেছি। তবে আমি আসার সময় সাইফ-আফিফসহ সবাই এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সাইফ বলছিল, অনুর্ধ-১৯ থেকে তুমি যাচ্ছ আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে। তুমি অনুর্ধ-১৯ দলকে প্রতিনিধিত্ব করবে জাতীয় দলে। প্রশ্ন ॥ বিশেষ কোন কথা কেউ বলেছে যাতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন? নাঈম ॥ সাইফ বলছিল যে- যাবে, খেলবে এবং মনে করবে ওরা অনুর্ধ-১৯ দলের খেলোয়াড়। তুমিও অনুর্ধ-১৯এর হয়েই খেলছো- সেভাবেই উপভোগ করবে। আর সাকিব ভাই, তামিম ভাই, সুজন স্যার আছে উনারা অনেক সহায়ক। রিয়াদ ভাই, মুশফিক ভাই উনাদের সঙ্গে খেলেছিলাম তারাও অনেক সহায়ক। আশা করছি সবার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পাব। প্রশ্ন ॥ টেস্ট দলে এই সুযোগ পাওয়াটা কি একটু অবাক হওয়ার মতো? নাঈম ॥ স্বপ্নতো ছিলই যে টেস্ট দলে খেলব। আর সাইফ সবসময় বলতো টেস্ট দলে তোমার অভিষেক হবে। সাইফরা সবসময় বলতো তুমি জাতীয় দলে খেলবে। অনুর্ধ-১৯ দলে যখন প্রথম ঢুকলাম এশিয়া কাপ খেলতে যাওয়ার সময় সাইফ আমাকে বলেছিল, খুব দ্রুতই জাতীয় দলে টেস্টে অভিষেক হবে তোমার। তবে এসবকে আমি ফাজলামি হিসেবেই নিয়েছিলাম। সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভাবিনি। প্রশ্ন ॥ এখন তো একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ডাক পেয়ে। খেলার সুযোগ পেলে নিজেকে নিয়ে ভাবনা কী? নাঈম ॥ আমি আসলে অতকিছু ভাবছি না। যদি খেলার সুযোগ পাই তাহলে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই চেষ্টা করব। উইকেট পাওয়া তো কপালের ব্যাপার। সেটা যদি হয়ে যায় তাহলে তো ভালই। ভাল লাগছে অনেক। চট্টগ্রামেই আমার ফার্স্ট ক্লাসে অভিষেক। সেখানেই যদি আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারি বেশ ভাল লাগবে। প্রশ্ন ॥ সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মিরাজ তাদের সঙ্গে বোলিং নিয়ে কখনও কথা হয়েছে? তারা কোন পরামর্শ দিয়েছেন? নাঈম ॥ সাকিব ভাইকে বলেছিলাম, ভাইয়া কি করলে ভাল হয় এবং কিভাবে আরও ভাল করতে পারব? সাকিব ভাই বলেছিলেন, যেমনটা আছে সেটাই বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। এটার ওপরই জোর দাও। আর অনুশীলন ম্যাচ (২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ড সফরের আগে জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাদের বিপক্ষে) খেলার পর হাতুরাসিংহে বলেছিলেন, ‘সবকিছু ঠিক আছে, তুমি নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করবে। প্রতিদিন প্র্যাকটিসে এসে স্কিলের উন্নতি কর। নিজের উন্নতি করার চেষ্টা কর।’ রিয়াদ ভাই ছিল। রিয়াদ ভাইকে বলেছিল আমাকে দেখে এসব বলতে। প্রশ্ন ॥ নিজের বোলিংয়ে বিশেষ কোনটিকে অস্ত্র হিসেবে মনে করেন যা অন্য দুই অফস্পিনার মিরাজ কিংবা মাহমুদুল্লাহর চেয়ে আপনাকে এগিয়ে রাখবে? নাঈম ॥ এক জায়গায় বোলিং করতে পারা। আমি একটানা সেটা করতে পারি। আর উচ্চতার কারণে কিছু বাউন্স আদায় করে নিতে পারি এটা আমার জন্য বাড়তি সুবিধার। শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই বাঁহাতি এ জন্য আমাদের জন্য সুবিধা (অফস্পিনার)। বিশেষ করে আর্মারগুলো ভাল কাজে দেবে। টার্ন করে ভেতরে ঢুকবে বল। প্রশ্ন ॥ টেস্ট খেলা তো লম্বা সময়ের। এত কম বয়সে সেটা আপনার জন্য কতখানি সুবিধাজনক? নাঈম ॥ সত্যি কথা বলতে কি আমার লঙ্গার ভার্সনই বেশি ভাল লাগে। কারণ চারদিনের ম্যাচে অনেকক্ষণ বোলিং করা যায় এবং অনেক সুযোগ থাকে বোলারদের। ওয়ানডে কিংবা টি২০ ম্যাচে খারাপ করলে কামব্যাক করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু টেস্ট ম্যাচে অনেক সময় থাকে। টেস্ট খেলাটা তো ধৈর্যের খেলা। একটানা বল করতে হবে। ব্যাটসম্যানকে আটকে রাখতে হবে। একটানা ৩৪ ওভার বোলিং করেছি বিসিএলে ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলের হয়ে প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে।
×