ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুবেল রেহান

অভ্যন্তরীণ উদ্ভিদ পরিশুদ্ধ করতে পারে বাতাস

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

 অভ্যন্তরীণ উদ্ভিদ পরিশুদ্ধ  করতে পারে বাতাস

গাছপালা মানুষের জীবনে অপরিহার্য। এরা আলোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বিশুদ্ধ বাতাসে পরিণত করে। এছাড়াও বাতাসের ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান সরিয়ে তাকে করে পরিশুদ্ধ। নাসার এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অস্থিতিশীল জৈব যৌগের বায়ুতে যেমন ফরমালাইজড এবং বেনজিনের স্পর্শ করতে পারে তা এসব গাছের মাধ্যমে বায়ু পরিষ্কার করে থাকে। (মূলত নাসার বিজ্ঞানীরা রিসার্চে দেখাতে চেয়েছেন যে কীভাবে বাতাস স্পেস স্টেশনের কার্যকারিতা নষ্ট করে)। রিসার্চের পরে তারা এটা খুঁজে পান যে, গাছ গৃহের মধ্যস্থ বাতাস কীভাবে পরিষ্কার করে বিশুদ্ধ রাখে। এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে, কিছু বিজ্ঞানী একমত হন। গাছ আসলেই গৃহের বাতাসকে বিশুদ্ধ রাখতে পারে। এক্ষেত্রে বড় পাতাযুক্ত গাছ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। বিল ওভারটন, নাসার সেই গবেষক দলের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন ‘এসব বেশি পাতাযুক্ত গাছের সংখ্যা নির্ভর করে কতটুকু বাতাস পরিশুদ্ধ করতে হবে তার ওপর’। ওভারটন আরও বলেন, একটা ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে ঠিক কতগুলো গাছ লাগবে এটা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তার মতে, ১০০ স্কয়ার ফিট একটা রুমের জন্য ভাল সাইজের দুটি গাছই যথেষ্ট। আর বায়ুবাহিত দূষণ এড়াতে বস্টন ফার্ন গাছ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে বৃদ্ধিতে এই গাছের একটু অসুবিধা হয়। তবে আমার প্রথম পছন্দ ‘গোল্ডেন পুথোস’, কারণ এটা আমাদের অতি পরিচিত আর যে কোন পরিবেশে সহজেই বেড়ে ওঠে। আইকান স্কুল অব মেডিসিনের পরিবেশগত ওষুধের প্রফেসর জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক লুইস ক্লাইডো বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোন গবেষণা নেই যে, উদ্ভিদ বাতাসের মানোন্নয়ন করতে পারে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।’ ক্লাউডো ইনডোর প্লান্টের উপকারিতা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন প্রশ্নের সুযোগ নেই। গাছ বাতাস থেকে উদ্দীপনামূলক রাসায়নিক টক্সিন অপসারণে সক্ষম। আর এটা পরীক্ষাগার অবস্থার অধীন। আপনার বাড়িতে বলুন আর আপনার অফিসের কথা বলুন, উদ্ভিদ এক্ষেত্রে বাতাস শুদ্ধ করতে পারে কিন্তু এতে বিজ্ঞান কঠিন করে কিছু বলেনি। স্টানলি কায়েস। জর্জিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। তিনি বলেন, নাসার গবেষণাসহ এ পর্যন্ত যত রিচার্স হয়েছে তাতে ইনডোর প্ল্যান্টস ছিল ছোট আর সিল পরিবেশের। যাতে তারা গবেষণা করে দেখেন ইনডোর প্ল্যান্টে উদ্ভিদ কতটা বায়ু শুদ্ধ করতে পারে। ২০০৯ সালে স্টানলি কায়েস ২৪টি ভিন্ন ইনডোর প্ল্যান্ট নিয়ে কাজ করেন। সেখানে তিনি এটা আবিষ্কার করেন যে, সিল পরিবেশে একটি উদ্ভিদ যতটা বায়ু পরিশুদ্ধ করতে পারে তার চেয়ে বেশি করতে পারে কোন খোলামেলা বা বড় পরিসরে। কায়েস আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনার বাড়িতে বাতাস সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়- অর্থাৎ, বায়ুবাহিত বাতাসের সঙ্গে স্থানগুলো বিনিময় করে- প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার। গবেষণা বলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাইরের বিনিময়গুলো গাছের চেয়ে গৃহমধ্যস্থ বাতাসের গুণমানের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে। এছাড়াও ল্যাব স্টাডিতে ব্যবহৃত উদ্ভিদ অনুকূল অবস্থার মধ্যে বড় হয়। তারা আলোক সংশ্লেষণকে সর্বোচ্চ করার জন্য পর্যাপ্ত আলোতে উন্মুক্ত থাকে, যা উদ্ভিদের টক্সিন-ভঙ্গুর ক্ষমতা উন্নত করে। বিষয়টি বাসা-বাড়ির ক্ষত্রে ভিন্ন, অনেক বাড়িতে আলোর পরিমাণ প্রায়ই আলোক সংশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট, অনেক বাড়ির ক্ষেত্রে কম। তিনি বিশ্বাস করেন যে ঘর গাছপালা কেবল সুখী জীবনের সঙ্গী নয়, উদ্ভিদ অনেক স্বাস্থ সুবিধাও প্রদান করছে। বিষয়টি এখন প্রমাণিত। গবেষণা দেখিয়েছে, উদ্ভিদরা সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে মানুষকে আরও সুখী করতে পারে। গবেষণাতে আরও জানা যায়, ব্যক্তির মেজাজ এবং মানসিকতায় উদ্ভিদ ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
×