ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনধিক ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রাখা হচ্ছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন আজ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন আজ

তপন বিশ্বাস ॥ অনধিক ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- বা অনধিক ৫০ লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করতে যাচ্ছে সরকার। এতে বহুল বিতর্কিত ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬’-এর ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে সংশ্লিষ্ট অপরাধগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চারটি ধারায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যে ধরনের ঘটনায় ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ চলছিল, সেগুলোকে ছাড় দেয়া হয়নি। ক্ষেত্রবিশেষে শাস্তি কিছুটা কমানো হয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব ও দন্ডের মাত্রার ভিত্তিতে কয়েকটি ধারার অপরাধকে অ-জামিনযোগ্যও করা হচ্ছে। খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। খসড়ায় বলা হয়েছে ধারা ৬২-এ এ আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ধারা ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ও ৬৬ বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের (আইসিটি আইন) ৫৭ ধারার আওতায় মামলা করে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। ফলে এ ধারা বাতিলের দাবিতে সাংবাদিকরা আন্দোলন করছেন, অন্যান্য মহল থেকেও এ দাবি তোলা হয়েছে। এ অবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের আগে কয়েকটি দেশের নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করা হয়েছে। খসড়াটি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজ্ঞ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মকর্তা, আইসিটি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যক্তিরা এবং স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে কয়েকটি সভা করে তাঁদের মতামত নিয়ে খসড়া করা হয়। নীতিগতভাবে অনুমোদিত খসড়ায় সাতটি অধ্যায় এবং ৪৫টি ধারা ছিল। ভেটিং করা খসড়ায় ৯টি অধ্যায় এবং ৬৩টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগে অনুমোদিত খসড়ায় ৩৭টি সংজ্ঞা ছিল। ভেটিংকৃত খসড়ায় ২১টি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যবহার না থাকায় এবং আইসিটি আইনে ব্যাখ্যা থাকায় আইনানুগ প্রবেশাধিকার, বেআইনী, ই-প্রকিউরমেন্ট, ই-পেমেন্ট, উপাত্ত দূষণ, উপাত্ত, ডাটা, কনটেন্ট, ডিজিটাল বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, গ্রাহক তথ্য, ট্রাফিক ডাটা, ডিজিটাল পর্নোগ্রাফি, ডিজিটাল শিশু পর্নোগ্রাফি, ডিজিটাল তথ্যব্যবস্থা, ডিজিটাল যোগাযোগ, ডিজিটাল রেকর্ড, পাওয়ার্ড, বেআইনী প্রতিবন্ধকতা, বিচারক, শিশু এসব বাদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ১২টি নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে আপীল ট্রাইব্যুনাল, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম, উপাত্ত ভা-ার, এজেন্সি, কম্পিউটার সিস্টেম, কাউন্সিল ও ডিজিটাল। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, (১) কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
×